Originally posted in কালের কণ্ঠ on 19 August 2025
রুফটপ সোলারে আসবে তিন হাজার মেগাওয়াট
- বাস্তবায়নের লক্ষ্য আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা
- বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাড়াহুড়ায় রুফটপ সোলার প্রকল্পের কেনাকাটায় অনিয়ম হতে পারে
- তাড়াহুড়া নয়, সঠিক পরিকল্পনায় ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের পরামর্শ

অন্তর্বর্তী সরকার সারা দেশের সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাদ ব্যবহার করে তিন হাজার মেগাওয়াটের ছাদভিত্তিক (রুফটপ) সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে, যা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পে ব্যয় হতে পারে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। মূলত সরকারি অফিস, স্কুল-কলেজ, হাসপাতালের ছাদে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল (রুফটপ সোলার প্যানেল) স্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় অর্থায়নের আশ্বাস দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক সহায়তা নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে মন্ত্রিসভা সচিব এবং অন্যান্য সব সচিবকে ১০০টিরও বেশি ডিও লেটার পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া বাস্তবায়ন কৌশল উপস্থাপন এবং স্থানীয় পর্যায়ে পাইলট প্রকল্প শুরু করার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ শিগগির জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) সঙ্গে সমন্বয় সভা করবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ফারজানা মমতাজ জানিয়েছেন, ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনে প্রতি মেগাওয়াটে ব্যয় হবে আনুমানিক সাড়ে তিন কোটি টাকা, যেখানে জমিভিত্তিক সৌর প্রকল্পের ব্যয় এরই মধ্যে ছয় কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য, বাস্তবায়ন করা কঠিন।
ডিসেম্বরের সময়সীমা বেঁধে না দিয়ে সময় নিয়ে এটি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। তাড়াহুড়ার কারণে কেনাকাটায় অনিয়ম হতে পারে, নিম্নমানের পণ্য দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের ঝুঁকি থাকে।
জানা গেছে, ২০১০ সালে বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য চাহিদার ৩ শতাংশ সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়। এতে সংযোগ পেতে নামমাত্র সৌরবিদ্যুৎ বসানো হয়েছে।
এটা একটা ব্যবসায় পরিণত হয়েছিল। নিম্নমানের সৌর প্যানেল বসানো হয়েছে, যা কোনো কাজে আসেনি। সেখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে। তাড়াহুড়ার ফলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
বাংলাদেশ সাসটেইনেবল অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসআরইএ) সভাপতি মোস্তফা আল মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রুফটপ সোলার শুধু জ্বালানি নিরাপত্তা নয়, বরং বিশ্ববাজারে ‘গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি’ হিসেবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি গড়তেও সাহায্য করবে।
আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এই রূপান্তরে অংশ নিতে গর্ববোধ করি।’
মোস্তফা আল মাহমুদ আরো বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানের ছাদ ব্যবহার করে স্বল্প সময়ের মধ্যে তিন হাজার মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি সাহসী ও উচ্চাভিলাষী উদ্যোগ। অতীতের মতো যাতে ধ্বংস না হয়, সতর্ক থাকা জরুরি। তাড়াহুড়া করে ছয় মাসের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অনেক ভুঁইফোড় কম্পানি কাজ নিতে পারে।’
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘এর আগে বাসাবাড়িতে লোক-দেখানো সৌরবিদ্যুৎ বসানো হয়েছে। এতে সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে একটা নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে। সে জায়গায় যেন বর্তমান কর্মসূচি না যায়, তাই সতর্ক থাকতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তিন হাজার মেগাওয়াট স্থাপন করতে চায় সরকার। তারা হয়তো তাদের মেয়াদের মধ্যে এটি করে দেখাতে তাড়াহুড়া করছে। যদিও এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প। দ্রুত করতে গেলে নানা সমস্যা হতে পারে। সরকারের ক্রয় প্রক্রিয়ায় ত্রুটি দেখা দিতে পারে। ক্রয় প্রক্রিয়া নয়ছয় করে কারো পকেট ভারী যেন না হয়, সেটি খেয়াল রাখতে হবে।’
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৬ জুন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে ‘জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি’ শীর্ষক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবন, স্কুল-কলেজ-মাদরাসা ও সব সরকারি হাসপাতালের ছাদে রুফটপ সোলার স্থাপনের নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে গত ২৯ জুন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।