Originally posted in কালের কন্ঠ on 27 January 2023
কয়েক বছর ধরে কৃষি ও ভোগ্য পণ্যের ক্ষেত্রে ভারত গুরুত্বপূর্ণ দেশ হয়ে গেছে। এ তালিকায় চীনের অংশগ্রহণও বাড়ছে। বেশ কিছু সংগত কারণেই ভারত থেকে খাদ্য ও ভোগ্য পণ্যের আমদানি নির্ভরতা বেড়েছে। কয়েক বছর ধরেই মসলাজাতীয় পণ্যের বড় সরবরাহকারী ভারত, আবার চিনিরও বড় সরবরাহকারী। পাশাপাশি গম ও অনান্য কৃষিপণ্য সরবরাহ করছে ভারত।
এসব পণ্য আমদানির পেছনে প্রধান কারণ তুলনামূলক কম খরচে স্বল্প সময়ে পণ্য আনা যায়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে সামনের দিনে খাদ্য ও ভোগ্য পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ভারতনির্ভরতা আরো বাড়বে।
সাম্প্রতিক সময়ে ডলার সংকট কমাতে আমদানির জন্য বড় দেশগুলোর সঙ্গে স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য পরিচালনার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। কিন্তু স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য কঠিন হবে। এটি নিয়ে আরো সম্ভাব্যতা যাচাই করা প্রয়োজন। বিশেষ করে দুটি দেশে মুদ্রা কিভাবে আসবে, এই মুদ্রা দুটি দেশ কিভাবে ব্যবহার করবে—এগুলোর সমাধান হওয়া প্রয়োজন। মনে রাখা প্রয়োজন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য করতে গেলে ওই দেশে আমাদের টাকা যাবে। এখন ভারতের ব্যবসায়ীরা এই টাকা নিয়ে কিভাবে কাজে লাগাবেন? এই টাকা কাজে লাগানোর কোনো উপায় থাকবে না বিধায় তাঁরা টাকায় বাণিজ্য করতে চাইবেন না। ঠিক একইভাবে ভারতের মুদ্রা যদি বাংলাদেশে কাজে লাগানো না যায়, তাহলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ওই রুপি নিতে চাইবেন না।
ফলে ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্যের মাধ্যমে ডলারের সাশ্রয়ের দিকগুলো উন্মোচন করতে হবে। বিশেষ করে আন্ডার-ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে কম ডলার আনা এবং ওভার-ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বেশি ডলার বিদেশে পাচার করা থামাতে হবে। এ ছাড়া মুদ্রা বিনিময় বাজারকে আরো টেকসই ও স্থিতিশীল করতে হবে। পাশাপাশি প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আনায় জোর দিতে হবে। তাঁদের দেশে ডলার পাঠানোর ক্ষেত্রে আস্থায় আনতে হবে।
এ ছাড়া আমদানিনির্ভরতা কমাতে বাংলাদেশেই উৎপাদনে জোর দিতে হবে। বিশেষ করে কৃষি ও খাদ্য পণ্য উৎপাদন করা গেলে আমদানিনির্ভরতা কিছুটা কমবে। তা ছাড়া রপ্তানি বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। রপ্তানিবৈচিত্র্য বাড়ানো গেলে দেশে ডলারের সরবরাহ বাড়বে। এ ছাড়া বাণিজ্য ঘাটতির দেশগুলোতে রপ্তানি বাড়ানোর দিকে বেশি নজর দিতে হবে।
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।