Originally posted in সমকাল on 20 January 2024
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক সময় চলে যায়। মেধাবিকাশের ক্ষেত্রে তা অন্তরায়। মেধা কোনো সৃজনশীল, সৃষ্টিশীল, উদ্ভাবনমূলক কাজে ব্যবহারের সুযোগ থাকে না। চিন্তা করার সৃজনশীল মনন তৈরি হয় না। অনেকে বলতে পারেন যে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তো অনেক কিছুই দেখায়, ভালো কিছুও দেখায়, এতে তরুণদের মেধার বিকাশও হতে পারে, তারা অনেক কিছু শিখতে পারে, তাদের মননের বিকাশও হতে পারে। ভালো কিছু দেখলে, শিখলে তা থেকে কারও বিকাশ হতেই পারে; কিন্তু সমস্যাটা হলো– কী ব্যবহার করছে, সেটিতে তো তাদের নিজেদের কোনো চিন্তা থাকে না, চিন্তা করার বিষয় থাকে না। অনেক সময় ব্যবহারকারীরা আসক্ত হয়ে পড়েন। ভালো-মন্দ বিচার করা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মানেই হাতের মুঠোয় অনেক ধরনের বিধ্বংসকারী চিন্তা রয়েছে। যেগুলো ব্যবহারকারীকে অবক্ষয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে। অভিভাবকদের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং কৌশলগত। আজকাল প্যারেন্টিংয়ের ধরনও বদলে গেছে। আমরা যেভাবে বড় হয়েছি, সেটি এখন আর করা যায় না। আধুনিক বিশ্বের ছোঁয়া প্রায় সব দেশেই লেগেছে, উন্নত বিশ্বের যে স্বাধীনতা বা ব্যক্তি স্বাধীনতার একটা চরম বিকাশ ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে তরুণ– সবার জন্যই প্রযোজ্য। ছোট বাচ্চারাও তাঁদের স্বাধীনতাকে বেশ মূল্য দেয় এবং বাবা-মা সেখানে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ খুবই কম থাকে। বিদেশে তো আবার বাচ্চাকে কিছু বললে ওরা ‘চাইল্ড অ্যাবিউজ’ হিসেবে ধরে নেয়। আমাদের দেশে এমনটা না হলেও বেশি শাসন করলে বাচ্চারা আবেগতাড়িত হয়ে খুব খারাপ পথে চলে যেতে পারে। অনেকে আত্মহননের দিকে চলে যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে বাবা-মা থেকে বিচ্যুত হয়ে যায় বা খারাপ হয়ে যায়। এজন্য এ সময়ে অভিভাবকদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সঙ্গে বাচ্চাদের সংযোগ করানোর ক্ষেত্রে একটা ভারসাম্য বজায় রাখা দরকার। যদিও এটি খুবই কঠিন কাজ।
মনস্তত্ত্ববিদ বা সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, বাবা-মায়ের অনেক সময় দেওয়া উচিত। বাচ্চাদের সঙ্গে একদম ছোট থেকে যত বেশি সময় দেওয়া হবে, তত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠবে মা-বাবার। এর মধ্য দিয়ে তার মধ্যে ভালো-মন্দের বোধ গড়ে উঠবে। সন্তানকে বোঝাতে হবে, সে তার ব্যক্তিগত বিষয়গুলো মা-বাবার কাছে বলতে পারবে। এটি না হলে তরুণরা যেমন ফোন বা তাদের ব্যবহার করা ডিভাইস দেখতে দেবে না, ফোনে কী করছে তারা, কাদের সঙ্গে কথা বলছে এই তথাকথিত প্রাইভেসি থেকে বাবা মা থেকে লুকিয়ে রাখবে।
এখানে প্যারেন্টিংয়ের ক্ষেত্রে শ্রেণিগত বৈষম্যটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যারা একটু শিক্ষিত, একটু সচেতন তাদের ক্ষেত্রে প্যারেন্টিং তুলনামূলক সহজ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে দরিদ্র পরিবারের তরুণেরা। ধরা যাক, একটি পরিবার খুব দরিদ্র। সেখানকার সম্ভাবনাময় একটি ছেলে বা মেয়ে, যে কিনা পরিবারের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন করতে পারত; কিন্তু সে এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্ত হয়ে বা খারাপ মানুষের ফাঁদে পড়ে তার জীবনটাই নষ্ট হয়ে গেল। এটি হলো দারিদ্রতার বৃত্ত। সে আর দারিদ্রতার বাইরে আসতে পারল না। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণেও এই দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রের মধ্যে পড়ে যাওয়া আশঙ্কা রয়েছে।