Professor Mustafizur Rahman addresses BBC Sanglap (Dialogue) on Teesta River deal on Sunday, 7 June 2015. More press reports on the discussion.
‘তিস্তা চুক্তি নিয়ে টাইমফ্রেম দেয়া যাবে না’
ভারতের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি সম্পাদন করতে কতদিন লাগবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।আজ ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে মিঃ ইমাম বলেন ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন অমীমাংসিত ইস্যু নিষ্পত্তি করতে দীর্ঘ সময় লেগেছে।তবে এ অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট সময়সীমা থাকা উচিত।ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এ সফরে বাংলাদেশ কতটা লাভবান হয়েছে সে বিষয়ে বাংলাদেশ সংলাপের এ অনুষ্ঠানে বিতর্ক হয়।একই পর্বে আলোচনা হয় দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং কৃষি ও শিক্ষা খাতে কম বাজেট বরাদ্দ নিয়েও।
নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হলেও সেখানে তিস্তার পানি বণ্টন যে থাকছে না সেটি আগেই নিশ্চিত করা হয়েছিল।কবে নাগাদ এই চুক্তি হবে সে বিষয়ে ভারতের দিক থেকে এখন সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানানো হয়নি। শুধু রয়েছে আশ্বাস যেটি গত পাঁচ বছর ধরেই ভারত বাংলাদেশকে দিচ্ছে।প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন মমতা ব্যানার্জি ঢাকায় আসতে চাচ্ছিলেন না।নরেন্দ্র মোদীর সাথে মমতা ব্যানার্জির ঢাকা সফরের ফলে তিস্তা চুক্তি নিয়ে মূল বাধা অপসারিত হয়েছে।এখন বিষয়টি সময়ের ব্যাপার বলেও উল্লেখ করেন মিঃ ইমাম।
তবে একই সাথে তিনি বলেন তিস্তা চুক্তির বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট টাইমফ্রেম (সময়সীমা) দেয়া যাবে না।বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী নরেন্দ্র মোদীর এ সফরকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।তবে তিস্তা চুক্তি কবে নাগাদ হতে পারে সে বিষয়ে একটি সময়সীমা থাকা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের পণ্য, সরঞ্জাম বা যাত্রী পরিবহণে তাঁদের কোন আপত্তি নেই।মিঃ চৌধুরী বলেন, তাঁরা শুধু দেখতে চান এতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে কতটা লাভবান হচ্ছে।আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলছেন এত কিছুর পরও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি কবে হবে সে বিষয়ে সময়সীমা নির্ধারণ করা উচিত।
অনুষ্ঠানের আরেকজন প্যানেলিস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক আমেনা মহসিন মনে করেন, ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তোলার স্বার্থেই ভারতের উচিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি অতি দ্রুত সম্পাদন করা।তিনি বলেন, “আপনি যখন বড় শক্তি হতে চান, তখন স্বচ্ছ ইমেজ নিয়ে আগাতে হবে। প্রতিবেশীকে বঞ্চিত করে সেই স্বচ্ছ ইমেজ গড়ে তুলতে পারবেন না।”নরেন্দ্র মোদীর এ সফরে যে চুক্তিগুলো হয়েছে তার মধ্যে সড়ক, নৌ ও রেলপথে ভারতের সাথে যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে।ভারত বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের সুবিধা পাবে।
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন ভারতকে সুবিধা দেবার বিনিময়ে বাংলাদেশ আর্থিকভাবে কতটা লাভবান হচ্ছে তার উপরে নির্ভর করছে চুক্তির সফলতা।ডঃ রহমান বলেন, “কোন ধরণের সার্ভিস চার্জ আমরা নেব, কোন ধরণের সারচার্জ আমরা আরোপ করবো, এই জিনিসগুলো যদি আমরা স্মার্টলি করতে পারি তাহলে বাংলাদেশের জন্য এটা উপকারী হতে পারে।”ডঃ রহমান আরও বলেন ভারতকে যোগাযোগ সুবিধা দেবার মাধ্যমে যদি বাংলাদেশ আর্থিকভাবে লাভবান হয় তাহলে দুই দেশের জন্যই বিষয়টি লাভজনক হতে পারে।
দুদকের দেয়া দায়মুক্তি প্রসঙ্গদুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ক্রমাগত দায়মুক্তি দেবার অভিযোগ রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের বিরুদ্ধে।এ নিয়েই মির্জা মঈদুল ইসলাম নামে একজন দর্শক প্রশ্ন করেন “ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের একের পর এক দায় মুক্তির সনদ দেয়ার কারণে দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে কি প্রশ্ন উঠতে পারে?”গত বছরই ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করে যে প্রায় এক হাজার পাঁচ শত আটানব্বই জনকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দিয়েছে দুদক।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ ব্যাপারে মনে করেন দুর্নীতি দমন কমিশনারের উপর আর কারও আস্থা নেই। তিনি মনে করেন বাংলাদেশে আইনের শাসনের আসল চিত্রটি এখানে ফুটে উঠেছে যেখানে সরকারী ও বিরোধীপক্ষের জন্য মানদণ্ড ভিন্ন ধরণের।মিঃ চৌধুরী বলেন “আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে সাংবিধানিক কোন প্রতিষ্ঠানের উপরই বাংলাদেশের জনগণের কোন আস্থা নেই।”অপরদিকে বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যত প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলো ক্রমান্বয়ে দুর্বলতর হচ্ছে এবং ধারাবাহিকভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের রাজনীতিকরণও হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
একইভাবে আমেনা মহসিনও স্বীকার করেন যে, যে কোন সরকারের আমলে এমন দলীয়করণ দেখা যায় যে কারণে সাধারণ জনগণের আর কোন কমিশনের উপর আস্থা থাকেনা।কেন এই দায়মুক্তি দেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে এইচ টি ইমাম বলেন অনেক ক্ষেত্রেই মামলাগুলো ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আবার এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে যাদের ক্ষেত্রে প্রভাবশালী হওয়া সত্ত্বেও দুদক শক্ত অবস্থান নিয়েছে বলে উত্তর দেন তিনি।সরকারী ও বিরোধী বিভিন্ন দলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন “বেশ শক্তিশালী নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে চার্জশীটও দাখিল করা হয়েছে, তাঁরা অনেকেই মামলার সম্মুখীনও হচ্ছেন।”কৃষি ও শিক্ষা খাতে বাজেট নিয়ে আলোচনা
নতুন অর্থবছরের জন্য সম্প্রতি ঘোষণা হওয়া বাজেটে কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো খাতগুলোয় বরাদ্দ কমেছে।এরই প্রেক্ষিতে মনিরা খান নামে একজন দর্শক জানতে চান যে কৃষি ও শিক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ দুটো খাতের জন্য আশাবাদী হওয়ার মত কিছু রয়েছে কিনা।
বাজেটে এখাতগুলোতে বরাদ্দ কমায় ইতোমধ্যে কঠোর সমালোচনা করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডি।এরই ধারাবাহিকতায় সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যে পরিমাণ বরাদ্দ দেয়ার কথা সেটি দেয়া হয়নি।এজন্য এ খাতে বরাদ্দের সাথে সাথে রাজস্ব আয় বাড়ানোর পরামর্শও দেন তিনি।
এবিষয়ে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী উল্লেখ করেন যে কৃষিক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি আগের তুলনায় অনেক কমে গিয়েছে।মিঃ রহমানের মত তিনিও এই ক্ষেত্রগুলোতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য পরামর্শ দেন।নিজে শিক্ষক হিসেবে অসন্তোষ প্রকাশ করেন আমেনা মহসিনও। শিক্ষামন্ত্রী নিজেই এই বরাদ্দ নিয়ে অসন্তুষ্ট বলেও উল্লেখ করেন তিনি।তবে এনিয়ে এইচ টি ইমাম বলেন বাজেট ঘোষণার পরদিনই এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।তবে এসব খাতের সাথে আনুষঙ্গিক নানা ধরণের ব্যাপার রয়েছে যেগুলি শুধু টাকার অংক দিয়ে বিবেচনা করা যায়না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।