Published in The Daily Inquilab on Tuesday, 28 July 2015.
এডিপি বাস্তবায়ন ৯১ শতাংশ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
নানা উদ্যোগেও শতভাগ বাস্তবায়ন হয়নি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি)। মোট এডিপি থেকে সংশোধনীর মাধ্যমে কমিয়েও তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বছরের শীত মৌসুমে বিরোধীদলের টানা হরতাল-অবরোধ, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাজে অনীহা, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা, অর্থছাড়ে বিলম্ব, দুর্নীতি অনিয়মের কারণে উন্নয়ন প্রকল্প শতভাগ বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
গত বছরে (২০১৪-২০১৫) এডিপির ৯১ ভাগ বস্তবায়ণ হয়েছে। হিসাব মতে শেষ মাসে বাস্তবায়ন হয়েছে ২৪ ভাগ। এতে করে পরিকল্পনামন্ত্রীর বছরজুড়ে ঘোষণা ও তদারকি কোন কাজে আসেনি। তবে শতকরা হিসাবে আগের বছরের চেয়ে কম বাস্তবায়ন হলেও টাকার অংকে খরচ হয়েছে বেশি। যদিও শেষ মাসে বাস্তবায়ন হয়েছে প্রথম ৫ মাসের চেয়ে বেশি।
জানা গেছে, গত অর্থবছরের শুরুতে ৮৬ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দেওয়া হলেও পরবর্তীতে তা সংশোধন করে ৭৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অর্থায়নসহ এডিপির মোট আকার দাঁড়ায় ৭৭ হজার ৮৩৬ কোটি টাকা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হিসাব অনুযায়ী, গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির ৯১ শতাংশ বা ৭১ হাজার ৭৯ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
আগের বছরে (২০১৩-১৪) সংশোধিত এডিপির বাস্তবায়নের হার ছিল ৯৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের ১১ মাসে অর্থাৎ জুলাই-মে সময়ে সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল শতকরা ৬৭ ভাগ। এক মাসের ব্যবধানে তা বেড়ে ৯১ শতাংশে দাঁড়ায়। যদিও আইএমইডির ওই প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ করা হয়নি। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়িত হয়েছে ৬৭ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬৬ শতাংশ। এই হিসাবে শেষ মাসে বাস্তবায়ন হয়েছে ২৪ শতাংশ।
প্রস্তুতকৃত ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত অর্থবছরের মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে ৪৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা বা ৯২ ভাগ। প্রকল্প সাহায্য ২২ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা বা ৯১ ভাগ এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন রয়েছে ২ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা বা ৯০ ভাগ।এদিকে অর্থবছরের শুরু থেকে উন্নয়ন বরাদ্দের শতভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে কমিটি করে বাস্তবায়ন না হওয়ার ৯টি কারণও চিহ্নিত করা হয়। পরে যথাযাথ বাস্তবায়ন তদারকির জন্য প্রকল্প পরিচালকদের নিকট চিঠি দেওয়া হয়। এছাড়া প্রকল্প পরিচালক ও আইএমইডি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে এডিপি বাস্তবায়ন বাড়ানোর নানা রকম দিক নির্দেশনা দেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল একবার মেয়াদ বৃদ্ধি করা প্রকল্পের মেয়াদ কোনোভাবে বাড়ানো হবে না বলে ঘোষণা দেন। একজন প্রকল্প পরিচালক একাধিক প্রকল্পের পরিচালক হতে পারবেন না। এছাড়া বাস্তবায়ন সন্তোষজনক হলে এ প্রকল্প পরিচালকদের পদোন্নতির ঘোষণা দেন। অন্যদিকে চলতি অর্থবছর থেকে প্রতি তিন মাসের বাস্তবায়নের আলাদা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে বাস্তবায়নের নির্দেশও তিনি ওই সময়ে দিয়ে রাখেন। শতভাগ এডিপি বাস্তবায়নের আশাবাদ ব্যক্ত করেন মন্ত্রী। এতেও কোন কাজ হয়নি।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ এডিপি বাস্তবায়নে নয়টি বাধা চিহ্নিত করেছিল। এগুলোর মধ্যে নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ না করা, মন্ত্রণালয়ের চাহিদা ও মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর মধ্যে পার্থক্য না বোঝা, প্রকল্পের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি ও বাজেট নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পনা কমিশনের অপর্যাপ্ত ক্ষমতা, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) ও টেকনিকেল প্রকল্প প্রস্তাবে (টিপিপি) গুণগতমানের দুর্বলতা এবং ঘনঘন প্রকল্প পরিচালক বদলির বিষয়গুলো ছিল।প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথম ১০ মাসে ৫৫ ভাগ বাস্তবায়ণ হলেও শেষ দুই মাসে বাস্তবায়ন হলো ৩৬ ভাগ।
অথচ প্রথম সাত মাসে বাস্তবায়ন হয়েছে ৩২ ভাগ। শেষের দিকে একদিকে বাস্তবায়নে তাড়াহুড়ো করা হয়েছে। অন্যদিকে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেই সাথে অর্থের অপচয় হয়েছে বলে মনে করেন খোদ পরিকল্পনামন্ত্রী। তবুও বাস্তবায়ন হয়নি শতভাগ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো তাদের পুরো বরাদ্দ শেষ করতে হলে শেষ মুহূর্তে অস্বাভাবিক হারে অর্থব্যয় করতে হয়। কেননা তাদের স্বাভাবিক খরচের চেয়ে ৪-৫গুণ খরচ করতে গেলে বাছ-বিচারের বালাই থাকবে না। এতে ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও কাজের মান প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বছরের শুরুতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কাজের আগ্রহ দেখায় না। কিন্তু বছর শেষে টাকা খরচ না হলে ফেরত দিতে হবে। এজন্য তারা তাড়াহুড়ো করে খরচে নেমে পড়ে। তাড়াতাড়ি খরচ করলে কাজের মানেও বিরূপ প্রভাব পড়ে।