Published in Kaler Kantho on Friday, 18 September 2015.
বিদেশি সহায়তা কম পেলেও ভালো করেছে বাংলাদেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে ধনী দেশগুলো স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে প্রতিশ্রুত অর্থ সহায়তা দেয়নি। বাংলাদেশের পাওয়া বৈদেশিক সহায়তার হারও দিন দিন কমেছে। তার পরও এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশ বেশ ভালো করেছে। অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশের জন্য বাংলাদেশের অগ্রগতি একটি রোল মডেল হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত এক বিশেষ সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘এমডিজি থেকে এসডিজিতে উত্তরণ : বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক ওই সেমিনারটি রাজধানীতে বিআইআইএসএসের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
এতে চারটি অধিবেশনে বাংলাদেশের এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, কয়েকটি লক্ষ্য অর্জনে পিছিয়ে থাকা, অর্জিত লক্ষ্যগুলোর ভেতরকার বৈষম্য, আগামী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের পথে করণীয় ইত্যাদি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। এতে দেশের বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার গবেষক ও অর্থনীতিবিদ কয়েকটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন। একটি অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এ ছাড়া পুরো সেমিনারে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এমডিজি জাতিসংঘ ঘোষিত একটি উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা। যার মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছর। এরপর যে লক্ষ্যটি নেওয়া হবে তার নাম এসডিজি। এমডিজিতে মোটা দাগে আটটি লক্ষ্য ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল। আর এসডিজিতে ১৭টি মোটা দাগের লক্ষ্যের অধীনে ১৬৯টি লক্ষ্য থাকবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এমডিজিতে ভালো করে বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে যে আমরা আমাদের ওয়াদা রক্ষা করতে পারি ও অংশীদারিত্বের মাধ্যমে লক্ষ্য পূরণ করতে পারি।’
অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান একটি উপস্থাপনা তুলে ধরে বলেন, এমডিজির ১৯ শতাংশ ইতিমধ্যে বাংলাদেশ পূরণ করেছে। ৫ শতাংশ পূরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ২৫ শতাংশ লক্ষ্য পূরণে সরকারের আরো মনোযোগ দেওয়া দরকার। বাকি লক্ষ্যগুলো নির্দিষ্ট নয় অথবা তথ্য পাওয়া যায় না।
মোস্তাফিজুর রহমান আরো বলেন, এমডিজির অন্যতম দুর্বল দিক বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব। ধনী দেশগুলো তাদের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ০.৭ শতাংশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু গড়ে দিয়েছে মাত্র ০.৪ শতাংশ। শক্তিশালী দেশগুলো আরো কম সহায়তা দিয়েছে। তাদের দেওয়ার হার মাত্র ০.২ শতাংশ। এমডিজিতে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন বিআইআইএসএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মাহফুজ কবির। তিনি বলেন, ১৯৯০-৯১ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির অনুপাতে বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ ছিল ৫.৫৯ শতাংশ। এখন তা কমে ১.৭৮ শতাংশ হয়েছে। ধনী দেশগুলো প্রতিশ্রুত অর্থ সহায়তা না দিলেও বাংলাদেশ ভালো করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে সবাই স্বস্তিতে আছে। এ দেশের উন্নয়ন অনেকের জন্য একটি রোল মডেল।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান ও ড. মাহফুজ কবির দুজনেই বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি হলেও বৈষম্য রয়েই গেছে। উদাহরণ হিসেবে মোস্তাফিজুর রহমান রংপুর বিভাগে দারিদ্র্যের হার অনেক বেশি বলে উল্লেখ করেন।
বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, ‘আয়বৈষম্য দূর করা ছাড়া আমরা শিক্ষা-স্বাস্থ্যের অনিষ্পন্ন কাজগুলো শেষ করতে পারব না। এসডিজির একটি লক্ষ্য হলো, আয়ের দিক দিয়ে দেশের নিম্ন পর্যায়ের ৪০ শতাংশ মানুষের গড় আয় জাতীয় গড় আয় বাড়ার হারের চেয়ে বেশি হারে বাড়াতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
বিনায়ক সেন আরো বলেন, আয়বৈষম্য বেশি হলে সরকারের ব্যয়ের ক্ষমতাও কমে যায়। কারণ ধনী শ্রেণির তদবিরের কারণে কর আদায় বাড়ানো যায় না। কর আরোপ করা যায় না। বাংলাদেশে সাড়ে চার হাজার মানুষ শুধু সারচার্জ চায়। তাদের আয় সম্পদ নাকি দুই কোটি টাকার ওপরে।