Professor Mustafizur Rahman on Economic slowdown

Published in ভোরের ডাক on Friday, 4 December 2015.

 

অর্থনীতির সব সূচক নিম্নগামী

এখুনি সতর্ক হতে হবে

বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক দিন ধরেই বেশ চাঙ্গা ছিল। রপ্তানি বাণিজ্য, রেমিট্যান্স অভ্যন্তরীণ উৎপাদন সব সূচকই ঊর্ধ্বগতিতে থাকায় বিগত কয়েক বছর সার্বিক প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি এখন আর সন্তোষজনক থাকছে না। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, রপ্তানি এক মাস বাড়ছে তো পরের মাসে কমে যাচ্ছে। রেমিট্যান্স নেতিবাচক ধারায় চলছে, শিল্পের কাঁচামাল আমদানি ও ঋণপত্র খোলার পরিমাণ কমে গেছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে বিনিয়োগে। ব্যাংকে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি অলস পড়ে আছে। মূলত আস্থার অভাবে ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে নতুন উদ্যোগ নিচ্ছেন না। বিশ্বব্যাংকে প্রধান অর্থনীতিবিদ জহিদ হোসেন মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণেই এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

দেশে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তাকে অর্থনীতিবিদরা মূলত অশনিসংকেত হিসেবে দেখছেন। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, অর্থনীতিতে বিনিয়োগের চাঞ্চল্য দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে ব্যক্তি খাতের অনিশ্চয়তা কাটছে না। সব মিলিয়ে অর্থনীতিতে এক ধরনের দুশ্চিন্তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী তসলিম বলেছেন, অর্থনীতিতে কিছুটা স্থবিরতা এসে গেছে। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি হোসেন খালেদ বলেছেন, সংস্কারের গতি সন্তোষজনক নয়। এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ বলেছেন, ব্যাংকের উচ্চ সুদহার এই অবস্থার জন্য দায়ী।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে জুলাই মাসে শিল্প উৎপাদন কমেছে ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। পোশাক উৎপাদন খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১২ শতাংশ, চামড়া পণ্যে ৭ শতাংশ, ওষুধ পণ্যে ৬ শতাংশ, সুতা ও বস্ত্র উৎপাদন কমে ৪ শতাংশ। এমনকি যে তামাক খাত এ সময় তেজী থাকে সেই খাতেই ২৫ শতাংশ উৎপাদন কমেছে। শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৮ শতাংশ।

অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি সবসময় ঊর্ধ্বমুখী থাকে না। চীন ও ভারতের প্রবৃদ্ধি কিছুটা থমকে গেছে। তবে তারা একটা পর্যায়ে উঠেছে। বাংলাদেশ এখন উঠতি অর্থনীতির দেশ। আরো কয়েক বছরের প্রবৃদ্ধি ৮ অথবা ৯ এ উন্নীত হওয়ার পর কিছুটা নৈতিবাচক হলে বিষয়টা দুশ্চিতার হতো না। কিন্তু এখুনি প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী হলে, তা অবশ্যই দুশ্চিন্তার কারণ হবে। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে এমন কি আঞ্চলিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রেও আমরা পিছিয়ে পড়ব। বাংলাদেশ এখন নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যমআয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা আছে তা পূরণ হওয়া সম্ভব হবে না। সুতরাং দেশে অনেক ভালো অর্থনীতিবিদ আছেন, তাদের পরমার্শ নিয়ে এখুনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।