Climate change and Bangladesh – Simon Maxwell, CBE

Published in দৈনিক সমকাল on Monday, 18 January 2016

 

সাইমন ম্যাক্সওয়েলের ভাষ্যে জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ

কথোপকথন

অজয় দাশগুপ্ত ও শেখ রোকন

Climate-Compatible-Development-Pathway-or-Pipedream-Simon-Maxwellসাইমন ম্যাক্সওয়েলকে মনে করিয়ে দিয়েছিলাম যে সম্প্রতি আমাদের প্রধানমন্ত্রী ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ হয়েছেন মূলত জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে নীতিগত ক্ষেত্রে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকার কারণেই। অনেক উন্নত দেশও যখন জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে নীতিকাঠামো তৈরি করেনি, বাংলাদেশ তখন ‘নাপা’ বা জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়েছিল। এমনকি আমরা জাতীয় বাজেট থেকে উল্লেখযোগ্য অঙ্কের বরাদ্দও দিতে সক্ষম হয়েছি। এর সঙ্গে মনে করিয়ে দিয়েছিলাম, মাত্র দুপুর বেলাতেই তিনি সিপিডির আয়োজনে বলেছেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলার ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ উপযুক্ত নীতি, উপযুক্ত নেতৃত্ব ও বাস্তবায়ন।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নলেজ নেটওয়ার্ক’ (সিডিকেএন)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান সাইমন ম্যাক্সওয়েল ঢাকা আসছেন, সংবাদমাধ্যমেই চোখে পড়ছিল কয়েক দিন ধরে। শনিবার রাজধানীর গুলশানের একটি অভিজাত হোটেলে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য যখন ঢুকছিলাম, তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিল। ধুলো-ভাসা ঢাকায় ধীরে ধীরে ফুটে উঠছিল রাতের আলো। জানাই ছিল, জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ, কৃষি ইস্যুতে তিনি ‘বিগ শট’। সত্তরের দশকের গোড়ায় বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতা সংগ্রামে উত্তাল, এই ‘উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ’ তখন কর্মজীবন শুরু করেছিলেন দূর আফ্রিকার কেনিয়াতে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) কনিষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে। জাতিসংঘের হয়েই কয়েক বছর পর কর্মরত ছিলেন পাশের দেশ ভারতে। পরে যোগ দেন ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্সে। দেড় দশকের বেশি সময়ের সাসেক্স-জীবনে তিনি কাজ করেন দারিদ্র্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশ বিষয়ে। ১৯৯৭ সালে যোগ দেন লন্ডনভিত্তিক ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটে। দেশে ও বিদেশে প্রাতিষ্ঠানিক এসব দায়িত্বের আড়ম্বর অবশ্য প্রথম সাক্ষাতে ছিল না। সিপিডির কর্মকর্তা জিনাত সুলতানা হোটেলের লবিতে যখন পরিচয় করিয়ে দিলেন, ঘরোয়াভাবে বসে পড়লেন আমাদের সঙ্গে।

সাইমন ম্যাক্সওয়েলের সাম্প্রতিক চিন্তা ও তৎপরতার ক্ষেত্র উন্নয়নশীল বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার নীতিগত সামর্থ্য গড়ে তোলা। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করেও উন্নয়নের ধারা কীভাবে অব্যাহত রাখা যায়, এ ব্যাপারে উন্নয়নশীল দেশের নীতিনির্ধারকদের নীতিগত সহায়তা দিয়ে থাকে তার প্রতিষ্ঠান সিডিকেএন। স্বভাবতই জানার আগ্রহ ছিল জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় নীতিগত দিক থেকে বাংলাদেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে তার মূল্যায়ন কী। কিন্তু খানিকটা হতাশ করেই তিনি জানালেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশেষভাবে বাংলাদেশের নীতিগত নথিপত্র তিনি খুব একটা যাচাই করে দেখেননি। তবে সাধারণ ধারণা অবশ্যই রয়েছে বাংলাদেশ সম্পর্কে।

বাংলাদেশের ম্যাক্সওয়েলের এটি দ্বিতীয় সফর, সেটাও জানা গেল। এবারের বছর দশেক আগে প্রথমবার এসেছিলেন। যদিও দু’বারই ঢাকার বাইরের বাংলাদেশ দেখা হয়নি তার। তবে সত্তরের দশকে ইউএনডিপির হয়ে ভারতে কাজ করার সময় বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর রাখতেন। পরেও নানা সময়ে দেশটি সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমে ও উন্নয়ন আলোচনায় জানতে পেরেছেন। বললেন, দু’বারের সফরের মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। আগে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে বাংলাদেশ থাকার উপলক্ষ প্রায় অবধারিতভাবে ছিল বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দারিদ্র্য, রোগ। আর এখন প্রায়শই তিনি দেখেছেন, বাংলাদেশ শিরোনাম হচ্ছে ‘সাকসেস স্টোরি’ হিসেবে। শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে, কর্মসংস্থানে, দারিদ্র্য বিমোচনে, বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে।

বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক বিপদ স্পষ্ট হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের নাম আরও বেশি করে উচ্চারিত হচ্ছে। কারণ তার মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে যে দুটি দেশ সবচেয়ে বেশি বিপন্ন হবে, তাদের একটি বাংলাদেশ। দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর মধ্যে মার্শাল আইল্যান্ড আর উপকূলীয় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জকে তিনি অন্য অনেক বিপন্ন দেশের তুলনায় বড় করে দেখেন। কারণ, বাংলাদেশকে একই সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে দারিদ্র্যের সঙ্গেও। তার মতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আর্থিক দারিদ্র্য হচ্ছে ‘শাঁখের করাত’। একটির সঙ্গে লড়তে গেলে অপরটিতে পিছিয়ে পড়তে হয়।

ম্যাক্সওয়েলের কাছে আমরা জানতে চেয়েছিলাম যে, তিনি যখন প্রথমবার বাংলাদেশে আসেন তখনও বিশ্বব্যাপী সাধারণ নাগরিকের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে প্রশ্ন ততটা ওঠেনি। বস্তুত এটা ছিল ‘উন্নয়ন’ ধারণার কেন্দ্রে। তিনশ’ বছর দাপটের সঙ্গে দুনিয়া চালানোর পর এখন দেখা যাচ্ছে, এটাই পৃথিবীর জলবায়ুর সর্বনাশ করেছে। কিন্তু ইতিমধ্যে আমাদের গতি, উন্নয়ন, উৎপাদন আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়েছে এই তেলের কাছে। এ থেকে মুক্তির উপায় কি আছে? উত্তরে তিনি শিল্প বিপ্লবের আগে বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশে নীল চাষের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। মনে করিয়ে দিয়েছিলেন এখানকার উন্নত বস্ত্রশিল্পের কথা। ইউরোপে শিল্প বিপ্লব ও ইংরেজ ঔপনিবেশিক শক্তির মাধ্যমে তার ঢেউ ভারতে এসেও আছড়ে পড়েছিল। ধীরে ধীরে ঘরে ও বাইরে বাজার হারিয়েছিল নীল চাষ ও বস্ত্রশিল্প। ম্যাক্সওয়েলের পূর্বপুরুষরাই ছিলেন এই ‘আগ্রাসনের’ কাণ্ডারি। এখন গোটা দুনিয়া তো বটেই, নিজেরাও বুঝছেন, শিল্প বিপ্লব পৃথিবীর জলবায়ুতে কী আত্মঘাতী প্রক্রিয়ার সূচনা করেছিল। শিল্প বিপ্লবের ফলে বাংলাদেশের মতো দেশ নিজেদের সম্পদ তো হারিয়েছেই, এখন সর্বব্যাপ্ত বিপদে বিপন্ন হয়ে পড়ছে।

এই দুর্যোগ থেকে বাঁচার জন্য সমাধানের কথাও বললেন তিনি_ সবুজ প্রযুক্তি। ধীরে ধীরে সবুজ প্রযুক্তিতে যেতে হবে। তবে এটা একদিনে, এক বছরে, দশকে বা শতকে সম্ভব না-ও হতে পারে। জীবাশ্ম জ্বালানি যেভাবে কয়েক দশক ধরে ধীরে ধীরে নিজের আসন পোক্ত করে নিয়েছে; একইভাবে নতুন প্রযুক্তির জন্যও জায়গা ছেড়ে দেবে ধীরে ধীরে। তিনি মনে করেন, বিদ্যমান জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর উৎপাদন, পরিবহন ও জীবনযাপন পদ্ধতিতেও ‘রিডিজাইন’ করে নির্ভরতা কমানো যায়। কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে পৃথিবীর ক্রমাবনতিশীল স্বাস্থ্য উদ্ধারের চেষ্টা করা যায়। একটি পদ্ধতি এখনই জনপ্রিয় হয়েছে_ তা হলো ‘সিটি জোনিং’ নগরীর একদিকে বাসস্থান, অপরদিকে কর্মস্থল। এর ফলে জ্বালানি অপচয় হয় অনেক। রাস্তাঘাটে ভিড় বাড়ার কারণে ধূলি ও উষ্ণতাও বাড়ে। এর প্রভাব পড়ে জলবায়ু পরিস্থিতিতে। আবার ঢাকার মতো শহরে রাস্তার যানজটে সময়ের বারোটাও বেজে যায়। এ ক্ষেত্রে শিল্প, বিনোদন, উৎপাদন, বাণিজ্যিক এলাকায় নগরকে ভাগ করে সংশ্লিষ্টদের আবাসন যদিও সেসব অঞ্চলে তৈরি করা যায়, তাহলে জ্বালানি ও সময় সাশ্রয় হবে। তার মানে, প্রচলিত নগরচিন্তায় যেমন আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা আলাদা করার উদ্যোগ প্রবল, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।

শনিবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত সিপিডির ‘বার্ষিক বক্তৃতা’ অনুষ্ঠান ছিল তাকে ঘিরেই। সেখানে তিনি বলেছিলেন যে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলন সফল হয়েছে। তার কাছে আমাদের একটি প্রশ্ন ছিল, কেন তিনি এটাকে সফল বলছেন। বিশেষত বাংলাদেশের পরিবেশকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে যে এই চুক্তি ঠিক ‘আইনগত বাধ্যবাধকতামূলক’ হয়নি। এই বৈশ্বিক জলবায়ু রেখা চূড়ান্ত করা হলেও তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব অনেকটাই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর সদিচ্ছার ওপর। তিনি মনে করেন, প্যারিস সম্মেলন সফল এই কারণে যে, এতে করে একটি রোডম্যাপ সূচিত হয়েছে। এটা প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর পরপর রিভিউ হবে। আগের সম্মেলনগুলোতে এ ধরনের চুক্তিও তো ছিল না। অনেকটা নাই মামার চেয়ে কানা মামার মতো? সেই আলোকেই তাকে আমরা আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলাম আইনগত বাধ্যবাধকতার কথাটি। তিনি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বললেন, আসলে ‘লিগ্যালি বাইন্ডিং’ বলে শেষ কথা কিছু আছে? বিষয়টি কি এমন যে কোনো দেশ যদি চুক্তিতে উলি্লখিত মাত্রায় কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়, তাহলে সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর জেল হয়ে যাবে? তিনি মনে করেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি আসলে একটি গাইডলাইন। যা কিছু বাস্তবায়নযোগ্য তা নিজেদের দেশের মধ্যেই নিজেদের আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকেই করতে হবে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বললেন, যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টে জলবায়ু বিষয়ক আইন হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপ রয়েছে। তিনি খুশি হলেন জেনে যে, বাংলাদেশের সংসদেও এ ধরনের সর্বদলীয় গ্রুপ রয়েছে বেশ কয়েক বছর আগ থেকেই।

ম্যাক্সওয়েলের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ যেমন সর্বব্যাপ্ত, তেমনই এর অভিঘাত মোকাবেলার উদ্যোগও হতে হবে সর্বাত্মক। এতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে। তিনি মনে করিয়ে দেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার শুরু হয়েছিল বেসরকারি উদ্ভাবক ও ব্যবসায়ীদের হাত ধরেই। এ থেকে মুক্তির জন্য যে সবুজ প্রযুক্তি প্রয়োজন তার উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করতে হবে। এমনকি নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। তাহলেই সেই নীতির বাস্তবায়ন সহজ হবে। আমরা মনে করিয়ে দিয়েছিলাম যে, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় যে প্রযুক্তির প্রয়োজন, তা এখন পর্যন্ত মূলত মিটিগেশন বা নিঃসরণ হ্রাস সংক্রান্ত। কিন্তু বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য প্রয়োজন এডাপ্টেশন বা অভিযোজনমূলক প্রযুক্তি। আবার অভিযোজনমূলক প্রযুক্তি বা প্রকল্প স্বভাবতই মুনাফার দিক থেকে আকর্ষণীয় নয়। এই খাতে কি ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবেন? ম্যাক্সওয়েল শোনালেন আশার কথা। বললেন, আপাতদৃষ্টিতে এটাকে অনাকর্ষণীয় মতে হতে পারে। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য এটা খুলে দিতে পারে সম্ভাবনার দ্বার। ‘হট স্পট’ থেকে অভিযোজনের জন্য উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ও কৌশলের চাহিদা থাকবে বিশ্বজুড়েই। বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের সামনে এটা একটা সুযোগ হিসেবে আসতে পারে। কারণ, এখানে এখনও কোনো প্রতিদ্বন্ধী নেই। সবাই যখন মিটিগেশন নিয়ে ব্যস্ত, বাংলাদেশ সেখানে হতে পারে ‘এডাপ্টেশন চ্যাম্পিয়ন’।

ম্যাক্সওয়েল মনে করেন, জলবায়ু-যুদ্ধে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ কেবল সরকারের দিক থেকে আসতে হবে, এমন নয়। বেসরকারি খাতেরও উচিত নিজে থেকে এগিয়ে আসা। এমনকি ‘থার্ড পার্টি’ এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে পারে। তিনি মনে করেন, সিপিডি আয়োজিত বার্ষিক বক্তৃতা অনুষ্ঠান এ ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ হতে পারে। এখানে সরকারি, বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা একত্রে বসেছিলেন। তারা এ ধরনের আয়োজনে মতবিনিময়ে করতে পারেন, সংলাপের ক্ষেত্র তৈরি করতে পারেন। বস্তুত সংলাপের বিকল্প নেই।

সাইমন ম্যাক্সওয়েল জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত নীতিগত প্রস্তুতির ব্যাপারে যেহেতু ওয়াকিবহাল ছিলেন না, তাকে মনে করিয়ে দিয়েছিলাম যে সম্প্রতি আমাদের প্রধানমন্ত্রী ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ হয়েছেন মূলত জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে নীতিগত ক্ষেত্রে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকার কারণেই। অনেক উন্নত দেশও যখন জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে নীতিকাঠামো তৈরি করেনি, বাংলাদেশ তখন ‘নাপা’ বা জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়েছিল। এমনকি আমরা জাতীয় বাজেট থেকে উল্লেখযোগ্য অঙ্কের বরাদ্দও দিতে সক্ষম হয়েছি। এর সঙ্গে মনে করিয়ে দিয়েছিলাম, মাত্র দুপুর বেলাতেই তিনি সিপিডির আয়োজনে বলেছেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলার ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ_ উপযুক্ত নীতি, উপযুক্ত নেতৃত্ব ও বাস্তবায়ন। বাংলাদেশ নীতিগত দিক থেকে আগে থেকে অনেক এগিয়ে আছে, শেখ হাসিনার মতো পরিবেশ বিষয়ে বিশ্বস্বীকৃত নেতৃত্বও পেয়েছি আমরা। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাহলে এখন চ্যালেঞ্জ কী? তিনি বললেন সব পক্ষের অংশগ্রহণ। দেশের সব পক্ষের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সব পক্ষের। অভ্যন্তরীণভাবে শুধু সরকার বা আন্তর্জাতিকভাবে শুধু জাতিসংঘের উদ্যোগে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো দুর্যোগ মোকাবেলা করা যাবে না।

ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে আমরা যখন ঘরমুখো, তখন বাইরের অন্ধকার আরও গাঢ় হয়ে উঠছে। ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও রাস্তায় গাড়ির ভিড়। ঠেলেঠুলে সবাই সামনে এগোতে চাইছে; তাতে করে যানজট আরও জটিল হয়ে পড়ছে। গন্তব্যে পেঁৗছতে দেরি হচ্ছে, সবারই। রাস্তা থেকে খানিকটা উঁচু হোটেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখা যায় অনেক দূর পর্যন্ত ফাঁকা থাকলেও চৌরাস্তার মোড়ের বিশৃঙ্খলার কারণে সেই সুবিধা কেউই নিতে পারছে না। ট্রাফিক সিগন্যাল রয়েছে, পুলিশ রয়েছে; কিন্তু গাড়িচালকদের সঙ্গে সেগুলোর সমন্বয়ের অভাবে সুফল মিলছে না। তাৎক্ষণিকভাবে মনে হলো, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশ পরিস্থিতির কথা। আমাদের নীতি রয়েছে, কাঠামো রয়েছে, রয়েছে নিজস্ব অর্থায়ন; এখন প্রয়োজন আসলে সমন্বয়। সরকারি নীতি ও কাঠামোর সঙ্গে বিপুল অধিকাংশ বেসরকারি খাতের সমন্বয়। সেই সমন্বয় যে অংশগ্রহণ, আলোচনা, সংলাপের মাধ্যমেই সম্ভব হতে পারে, লন্ডনের সাইমন ম্যাক্সওয়েল ঢাকার ভর সন্ধ্যায় বলে গেলেন। এখনও আমাদের সামনে রাত; ভোরের আলো দেখতে হলে সব পক্ষকেই আরেকটু পা চালিয়ে হাঁটতে হবে বৈকি।