Published in Dhaka Tribune on Friday, 1 July 2016
Bangladeshis’ deposits with Swiss banks rise by 9%
Ibrahim Hossain Ovi
Bangladeshi citizens’ deposits with various Swiss banks rose by nearly 9% in 2015 compared to the deposit of 2014, according to the Swiss central bank data.
In 2014, Bangladeshi nationals deposited 506,047 million Swiss franc, which was 8.85% higher in 2015 at 550,850 million franc, shows the latest data from Swiss National Bank (SNB).
“The government should investigate who are depositing the money. Are they from Bangladesh or from those who are staying abroad,” Mustafizur Rahman, executive director of Centre for Policy Dialogue (CPD) told the Dhaka Tribune.
Bangladesh Bank can seek names of the depositors but it did not do so in the last few years, Mustafizur said, adding that moving money to Swiss banks from Bangladesh would come down if the government finds out the names of the depositors.
The trend of depositing money in Swiss banks is rising in Bangladesh at a time when neighbouring India experienced a decline last year.
Money held by Indians in Swiss banks fell by nearly one-third to a record low of 1.2 billion Swiss franc. This is the lowest amount of funds held by Indians in the Swiss banks since the Alpine nation began making the data public in 1997.
In comparison, money kept by Pakistani nationals in Swiss banks rose by over 16% to 1.5 billion francs.
Commenting on India’s fall in money flight, Mustafizur said the decline was possible because of steps by the Indian government.
Published in আমাদের সময় on Friday, 1 July 2016
সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের ৪ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা
এক বছরে বেড়েছে ৩৯৬ কোটি টাকা * বেশিরভাগ টাকাই দেশ থেকে পাচার হয়েছে * বিদেশিদের আমানত কমলেও বেড়েছে বাংলাদেশিদের
হারুন-অর-রশিদ ও গোলাম রাব্বানী
সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের (সুইস ব্যাংক) মোট আমানত গত এক বছরে কমে গেছে। একই সঙ্গে কমেছে বিদেশি আমানতের পরিমাণ। এমনকি ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, ভারতের আমানতের পরিমাণও কমেছে। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, এই সময়ে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি নাগরিকদের আমানতের পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৪ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি নাগরিকদের আমানতের পরিমাণ ছিল ৫০ কোটি ৬০ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক (সুইজারল্যান্ডের মুদ্রা)। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৪ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫ কোটি শূন্য ৮ লাখ সুইস ফ্রাঙ্কে। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ৪ হাজার ৮৪৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা (প্রতি সুইস ফ্রাঙ্ক ৮৮ টাকা হিসাবে)। ওই এক বছরে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ বেড়েছে ৩৯৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা। বৃদ্ধির হার প্রায় ১০ শতাংশ।
সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের গতকাল প্রকাশিত ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড ২০১৫’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১০ সালের পর ২০১১ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ কমে গিয়েছিল। কিন্তু ২০১২ সাল থেকে সেখানে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ বাড়তে থাকে। সে ধারাবাহিকতা গত বছরও অব্যাহত ছিল।
এদিকে গত বছর বিশ্বের অনেক দেশের নাগরিকের আমানতের পরিমাণ কমেছে। অর্থাৎ সুইস ব্যাংকের প্রতি তাদের আস্থা কমলেও বাংলাদেশিদের বেড়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে কেউ টাকা নিয়ে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে রাখতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কেউ এই ধরনের কোনো টাকা নিতে পারে না। তারপরও কেউ নিলে তা হবে দেশ থেকে টাকা পাচার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের কাউকে অর্থ রাখার কোনো অনুমতি দেয়নি। ফলে দেশ থেকে কেউ যদি টাকা কোনো চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠিয়ে থাকে সেটি পাচার বলে গণ্য হবে। তবে সুইজারল্যান্ডে যেসব বাংলাদেশি কাজ করেন তারা যদি ওই অর্থ রাখেন তা হলে সেটি পাচার নয়। এ ছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেসব বাংলাদেশি নাগরিক থাকেন তারাও যদি ওই টাকা রেখে থাকেন তবে সেটিও পাচার নয়। তবে অনেকেই আশঙ্কা করছেন সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি নাগরিকদের নামে রক্ষিত অর্থের বড় অংশই বাংলাদেশ থেকে বিভিন্নভাবে পাচার করা।
সুইস ব্যাংক ২০১২ সাল থেকে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। ওই প্রতিবেদনে শুধু দেশভিত্তিক আমানতের পরিমাণ প্রকাশ করা হয়। কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানির নাম প্রকাশ করা হয় না। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর প্রতিবছরই এ নিয়ে সারাবিশ্বে হইচই হয়।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এ প্রসঙ্গে আমাদের সময়কে বলেন, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি নাগরিকদের আমানতের পরিমাণ বাড়ার ঘটনাটি গভীর উদ্বেগের বিষয়। কেননা বৈধপথে বাংলাদেশ থেকে টাকা নিয়ে সুইস ব্যাংকে রাখার সুযোগ নেই। ফলে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের যে টাকা রাখা হচ্ছে সেটা মূলত দুর্নীতির টাকা। এই টাকা ফিরিয়ে আনতে তিনি সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এর ফলে প্রমাণ হচ্ছে বাংলাদেশের দুর্নীতির ঘটনা বেড়েছে। যে কারণে দুর্নীতির টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
ড. জাহিদ মনে করেন, দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ না থাকা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে অর্থপাচার বাড়ছে। এটি রোধে সরকারকে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব হলে অর্থপাচারও কমে যাবে।
প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রাখার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তালিকায় ভারত ও পাকিস্তানের পরেই রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। ২০১৫ সালে সুইস ব্যাংকের মোট আমানতের পরিমাণ ১ লাখ ৩৩ হাজার কোটি ফ্রাঙ্ক। আগের বছর যা ছিল ১ লাখ ৩৮ হাজার কোটি ফ্রাঙ্ক। আমানত রাখার ক্ষেত্রে এ বছরও প্রথম অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। যদিও তাদের আমানতের পরিমাণ কমেছে।
বাংলাদেশিদের আমানত : গত ১২ বছরের মধ্যে ২০১৫ সালেই সবচেয়ে বেশি আমানত ছিল সুইস ব্যাংকে। আলোচ্য সময়ে আমানতের পরিমাণ ৫৫ কোটি শূন্য ৮ লাখ ফ্রাঙ্ক। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ৪ হাজার ৮৪৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ২০১৪ সালে ছিল ৫০ কোটি ৬০ লাখ ফ্রাঙ্ক বা ৪ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে ৩৭ কোটি ২০ লাখ ফ্রাঙ্ক বা ৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। ২০১২ সালে ছিল ২২ কোটি ৯০ লাখ ফ্রাংক বা ২ হাজার ১৪ কোটি টাকা। ২০১১ সালে ছিল ১৫ কোটি ২০ লাখ ফ্রাংক বা ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা।
সুইস ব্যাংকে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৮৩ লাখ ফ্রাঙ্ক। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ৩৩৭ কোটি টাকা। এর পরে বিভিন্ন সময়ে এর পরিমাণ কিছুটা কমেছে। তবে বেশিরভাগ সময়ই বেড়েছে। ’৯৭ ও ’৯৮ সালে এর পরিমাণ সামান্য কমে। কিন্তু ’৯৯ সালেই এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৪ কোটি ৪০ লাখ ফ্রাঙ্ক বা ৩৮৭ কোটি টাকা। এরপর থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশিদের সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রাখার পরিমাণ বেড়েছে। ২০০১ সালে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৬ কোটি ৩৭ লাখ ফ্রাঙ্ক বা ৫৬১ কোটি টাকা। ২০০২ ও ২০০৩ সালে এর পরিমাণ আবার কমে যায়। ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এর পরিমাণ বেড়েছে। ওই বছরে এর পরিমাণ বেড়ে ২৪ কোটি ৩১ লাখ ফ্রাঙ্কে বা ৩৬১ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ২০০৮ সালে কমে। কিন্তু ২০১০ ও ১১ সালে আবার বেড়ে যায়। ২০১২ সালে সামান্য কমে। কিন্তু এরপর থেকে টানা বেড়েছে।
সুইস ব্যাংকে স্বর্ণালঙ্কার, শিল্পকর্ম ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র জমা রাখলে তার আর্থিক মূল্যমান হিসাব করে আমানতে যোগ হয় না। সেগুলোর মূল্য আলাদা। এখানে শুধু নগদ যেসব বৈদেশিক মুদ্রা বা বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে তার হিসাব রয়েছে।
সুইস মুদ্রা : সুইজারল্যান্ডের মুদ্রার নাম ফ্রাঙ্ক। সংক্ষেপে সিএইচএফ। বাংলাদেশের টাকার সঙ্গে ব্যাংকিং খাতে গতকাল এর বিনিময় হার ছিল ৮২ থেকে ৮৩ টাকা। গত বছরের এই সময়ে ছিল ৮৪ থেকে ৮৬ টাকা। বাংলাদেশ থেকে যেসব টাকা সুইস ব্যাংকে গেছে সেগুলোর বেশিরভাগই কার্ব মার্কেটের মাধ্যমে পাচার হয়েছে। কার্ব মার্কেটে প্রতি ফ্রাঙ্ক ৮৮ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর বিক্রি হয় ৯০ টাকা করে। কার্ব মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, ফ্রাঙ্ক খুব কম চলে। এ কারণে এগুলো পাওয়া যায় না। পেলেও দাম খুব বেশি। তবে পাচারকারীরা টাকাকে ডলারে বা গোল্ডে রূপান্তর করে নিয়ে যেতে পারে।
এশিয়ার অন্যান্য দেশের আমানত : এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে চিনের আমানত ৮১০ কোটি ফ্রাঙ্ক, মালয়েশিয়ার ৩৩৬ কোটি, থাইল্যান্ডের ৩০৫ কোটি, দক্ষিণ কোরিয়ার ২৭৬ কোটি, ভারতের ১৭৭ কোটি, পাকিস্তানের ১২৩ কোটি, শ্রীলংকার ৮ কোটি ২০ লাখ, নেপালের ১০ কোটি ২০ লাখ, মিয়ানমারের ৬ কোটি, মালদ্বীপের ১ কোটি ৭০ লাখ এবং আফগানিস্তানের ১ কোটি ৪০ লাখ ফ্রাঙ্ক রয়েছে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার ৩৭ কোটি, অস্ট্রিয়ার ১৬ কোটি, আফগানিস্তানের ২ কোটি ৫০ লাখ, ব্রাজিলের ৪৭ কোটি, ভুটানের সাড়ে ৪ কোটি ফ্রাঙ্ক আমানত রয়েছে।
সুইস ব্যাংক তাদের আইন-কানুন কিছুটা শিথিল করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে তারা কিছু দেশের আমানতকারীদের সম্পর্কে তথ্য দিতে শুরু করেছে। এ কারণে বর্তমানে টাকা পাচারকারীরা সুইস ব্যাংককে নিরাপদ মনে করছে না। যে কারণে তাদের ব্যাংকগুলোয় বিদেশিদের সঞ্চয় কমে গেছে।
আগে সুইস ব্যাংকে দুর্নীতিবাজরা ব্যাপক পরিমান অর্থ জমা রাখত। তাদের ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকদের কোনও নামঠিকানা ছাড়াই টাকা জমা রাখা যায়। এ ছাড়া এসব টাকার উৎসের তথ্য গোপন রাখা হয়। যে কারণে বিশ্বব্যাপী টাকা পাচারকারীদের কাছে সুইস ব্যাংকগুলো খুবই প্রিয়। সাম্প্রতিক সময়ে এতে অবশ্য ধস নেমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, উন্নয়নশীল দেশ থেকেই অর্থ পাচার বেশি হয়ে থাকে। রাজনৈতিক কারণে বিনিয়োগ পরিবেশ না থাকায় অনেকে অর্থ বিদেশি নিয়ে যান। উন্নয়নশীল দেশে নানা কারণে ধনীরা সম্পদ রাখতে নিরাপদ মনে করেন না। এ ছাড়া বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর পাচারকারীরা অনেক প্রভাবশালী। ধরা পড়লেও তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ পরিবেশ না থাকার কারণে পুঁজি পাচার হয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক লেনদেনের আড়ালে অর্থপাচার হচ্ছে। সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকসমূহ, মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম ও আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় অর্থ চলে যাচ্ছে। শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কম অথচ মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বেশি হচ্ছে। চোরকারবারি ও পাচারকারীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনও শাস্তি না হওয়ায় অর্থপাচার বন্ধ হচ্ছে না।
আস্থা কমেছে, বেড়েছে : সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রাখার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ দেশের আস্থা কমে গেছে। তবে বাংলাদেশসহ কিছু দেশের আস্থা বেড়েছে। এর মধ্যে উন্নত দেশগুলোসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর নাগরিকদের আমানতের পরিমাণ কমে গেছে। যেসব দেশের আমানত বেড়েছে সেগুলোর মধ্যে আছে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ভুটান, নিউজিল্যান্ড, ওমান, পানামা, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রাশিয়া, মরক্কো, মালদ্বীপ, মঙ্গোলিয়া, স্পেন, মিসর, নেপাল, বলিভিয়া, ইরান, ইরাক, হাইতি, ইতালি, কেনিয়া, লাওস, শ্রীলঙ্কা।
যেসব দেশের আমানত কমেছে সেগুলোর মধ্যে আছে ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, কাতার, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, সোমালিয়া, থাইল্যান্ড, আমেরিকা, মেক্সিকো, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, জর্দান, জাপান, ঘানা, কম্বোডিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, কুয়েত, ফিনল্যান্ড, ফিজি, যুক্তরাজ্য, ইন্দোনেশিয়া।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশি টাকা কীভাবে যাচ্ছে এটি দেখা দরকার। অন্য দেশ থেকে উপার্জিত অর্থ সেখানে জমা হচ্ছে নাকি বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে তা যাচ্ছে সেটি দেখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। ভারত তাদের নাগরিকদের বিষয়ে সুইস ব্যাংকের কাছ থেকে সুস্পষ্ট তথ্য নিয়ে কাজ করেছে। পরবর্তী বছরগুলোয় ভারতীয়দের জমার পরিমাণ কিন্তু কমে গেছে। বাংলাদেশ সরকারের এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
টাকা পাচার : অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়ম অনুসারে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মধ্যে ভারসাম্যহীনতার কারণে দেশ থেকে টাকা পাচার হয়। দেশে সঞ্চয় বাড়ছে, কিন্তু বিনিয়োগ বাড়ছে না। ফলে সঞ্চয়ের বাড়তি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। নানাভাবে টাকা পাচার হচ্ছে। পণ্য আমদানির নামে ঋণপত্রের মাধ্যমে। কম দামে কম পণ্য এনে দেনা শোধ করা হচ্ছে বেশি দামে। বেশি পণ্য আমদানির এলসি খুলে কম পণ্য আমদানি করে। রপ্তানি পণ্যের একটি অংশের মূল্য দেশে আসছে না। ওই টাকাও পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশ থেকে হু-ির মাধ্যমে টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের টাকা পুরোটা দেশে আসছে না। নগদ ডলার বা স্বর্ণের মাধ্যমেও দেশ থেকে টাকা চলে যাচ্ছে। এ ছাড়া চিকিৎসা ব্যয়, বিদেশ ভ্রমণ, লেখাপড়ার খরচ এসব মাধ্যমেও টাকা পাচার হচ্ছে। সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমেও টাকা পাচার হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে দশ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৪ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে, যা দেশের মোট জাতীয় বাজেটের দেড়গুণ। প্রতিবছর গড়ে পাচার হয়েছে ৪৪ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। প্রতিবছরই এই পাচারের হার বাড়ছে। এর মধ্যে শুধু ২০১৩ সালে পাচার হয়েছে ৭৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় যা ৩৪ শতাংশ বেশি। অর্থপাচারে দক্ষিণ এশিয়াতে ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান।
এদিকে মালয়েশীয় সরকারের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বিনিয়োগে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। চিন প্রথম অবস্থানে। এগুলো সবই হয়েছে টাকা পাচারের মাধ্যমে। নিয়ম অনুযায়ী কোনও নাগরিকের বিদেশে টাকা নিতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হয়। তবে বিদেশে যারা আয় করেন তাদের সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে বাংলাদেশের আইনে কোনো সমস্যা নেই। তিনি আয়করের আওতায় ও প্রবাসী কোটায় কোনো সুবিধা নিয়ে থাকলে এবং বিদেশে সম্পদ থাকার তথ্যও তার আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করতে হবে। এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোনো নাগরিক বিদেশে টাকা রাখলে তা দেশ থেকে পাচার বলে গণ্য হবে।
সুদীর্ঘ সময় ধরে ধনীদের অর্থ গোপনে জমা রাখার জন্য বিখ্যাত সুইজারল্যান্ড। টাকা জমা রাখার সময় আমানতকারীর নামঠিকানা গোপন রাখা হতো। একটি কোড নম্বরের ভিত্তিতে টাকা জমা রাখা হতো। কিন্তু ২০০২ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী টাকা পাচার রোধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ব্যাপকভাবে কার্যকর করা হয়। এরপর আন্তর্জাতিক চাপে সুইস ব্যাংক জমা টাকার তথ্য প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে তারা ওই সময় থেকে বিভিন্ন দেশের জমা টাকার তথ্য প্রকাশ করছে।