Published in বণিক বার্তা on Monday, 1 August 2016
ইইউ-আসিয়ান মুক্তবাণিজ্য
ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে দেশের ১২ পণ্যের রফতানি
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনসভুক্ত (আসিয়ান) দেশগুলোর মুক্তবাণিজ্য ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের রফতানিকে প্রভাবিত করবে। এতে ক্ষতির মুখে পড়বে দেশের চিংড়ি ও পোশাক খাতের ১২টি পণ্যের রফতানি। সম্প্রতি ট্যারিফ কমিশনের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের মোট রফতানির ৫৭ শতাংশই হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোয়। আর বাংলাদেশের এ প্রধান রফতানি বাজারে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোও তৈরি পোশাক রফতানি করে। বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশের আওতায় বাংলাদেশ ইউরোপের বাজারে ‘শূন্য শুল্ক’ সুবিধা পায়। অন্যদিকে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর ক্ষেত্রে ১৪ শতাংশ শুল্ক বিদ্যমান। এতে করে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে আসিয়ানের সঙ্গে ইইউর মুক্তবাণিজ্য চর্চা শুরু হলে এর তাত্ক্ষণিক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ১২টি এইচএস কোডভুক্ত রফতানি পণ্যে। কারণ আসিয়ান দেশগুলোও ইইউতে এ পণ্যগুলো রফতানি করে। ১২টি এইচএস কোডে টি-শার্ট, জার্সি, শার্ট, নারীদের ট্রাউজার, শিশুদের পোশাক ও চিংড়ি রয়েছে। এ পণ্যগুলো থেকে বার্ষিক রফতানি আয় প্রায় ৮৪৩ কোটি ডলার।
এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএর সাবেক সহসভাপতি মো. হাতেম বলেন, আসিয়ানের সঙ্গে ইইউর মুক্তবাণিজ্য চুক্তি হলে ইউরোপের বাজারে ভিয়েতনামের সঙ্গে আমাদের প্রতিযোগিতা বাড়বে। দুটি দেশের পণ্যের ভিন্নতা থাকায় খুব বেশি সমস্যা হবে না। তবে প্রতিযোগিতা তো বাড়ছেই। তাই আমাদের ইইউর বাইরেও নতুন নতুন বাজার তৈরি করা প্রয়োজন।
জানা গেছে, ২০০৭ সালে শুরু হলেও মিয়ানমারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইস্যুতে দুই বছরের মাথায় বন্ধ হয়ে যায় আসিয়ান-ইইউ মুক্তবাণিজ্য আলোচনা। গত বছর নতুন করে এ আলোচনা শুরু করেছে আসিয়ান ও ইইউ দেশগুলো। পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াও চালু আছে। সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ইইউর মুক্তবাণিজ্য চুক্তি সংশোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডও এগিয়েছে অনেক দূর। এখন সংশোধন করে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার অপেক্ষা কেবল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া যদি ইইউতে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পায়, তাহলে তা সমস্যায় ফেলে দেবে বাংলাদেশকে।
এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশের রফতানি বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো যে ধরনের বাণিজ্য চুক্তির উদ্যোগ নিচ্ছে, বাংলাদেশ তা নিচ্ছে না। আর প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো বাণিজ্য চুক্তি করলে তা মোকাবেলায় যথেষ্ট প্রস্তুতিও আমাদের নেই। বাংলাদেশ যখন এলডিসি থেকে বের হয়ে আসবে, তখন সংকট আরো বাড়বে। এখন যে ‘শুল্কমুক্ত’ সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে, ইউরোপের বাজারে তখন তাও থাকবে না। অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করলে বাজার ধরে রাখা কঠিন হবে।
তিনি বলেন, ইইউ থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে কী ধরনের পলিসি ও কৌশল নেয়া দরকার সে বিষয়ে ট্যারিফ কমিশন আরো বেশি করে গবেষণা করতে পারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে, এফটিএ-সংশ্লিষ্ট টেকনিক্যাল বিষয়গুলোর জন্য আলাদা একটি শক্তিশালী ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
ট্যারিফ কমিশনের গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে ইইউর সঙ্গে ২৩৪ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ছিল আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর, যা দেশগুলোর মোট বাণিজ্যের ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। আসিয়ান অঞ্চলে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের শীর্ষে রয়েছে ইইউ। অন্যদিকে একই বছর বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউর বাণিজ্য ছিল ১৭ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের ৩১ শতাংশ। ১৪ শতাংশ শুল্ক থাকা সত্ত্বেও ২০১৩ সালে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আসিয়ান থেকে কিনেছে ইইউ।
আসিয়ান-ইইউ মুক্তবাণিজ্য চুক্তিতে আপত্তি জানাতে সরকারকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে ট্যারিফ কমিশনের গবেষণায়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যাপারেল আইটেমকে এফটিএ সুবিধার বাইরে রাখতে ইইউকে অনুরোধ করা ও বাংলাদেশের রফতানিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে সে বিষয়টি ইইউকে জানানো, চুক্তি কার্যকরে দীর্ঘ সময়ের শর্ত রাখা, বাজার ধরে রাখতে বাংলাদেশী পণ্যের ব্যান্ড ইমেজ ও গুণগত মান ধরে রাখা। পাশাপাশি শুধু ইইউর ওপর নির্ভরশীল না হয়ে রফতানি বাজারের বিকেন্দ্রীকরণের পথ খোঁজার পরামর্শ দেয়া হয়েছে এতে।
বিজিএমইএ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মঈনুদ্দিন আহমেদ বলেন, ইইউ এবং আসিয়ানের মধ্যকার বাণিজ্য চুক্তিটি এখনো আলোচনা পর্যায়ে আছে। এ চুক্তি বাস্তবায়নও তাই সময়সাপেক্ষ। এ চুক্তির ফলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বা রফতানি হুমকি নিয়ে পর্যালোচনা চলছে, তবে কোনো মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি।