Published in বাংলাদেশ প্রতিদিন on Wednesday, 29 November 2017
লাগাম টানতে হবে এখনই
বিশেষজ্ঞ মত
নিজস্ব প্রতিবেদক
ব্যাংক সেক্টরের অস্থিরতা রোধ ও খেলাপি ঋণ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, ব্যাংক খাতকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে হলে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছারিতার লাগাম টানতে হবে এখনই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ব্যাংক খাত থেকে টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে। অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে যাওয়া অর্থ ব্যাংকে ফিরেও আসে না। সঠিকভাবে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই না করে ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। অনেক সময় রাজনৈতিক চাপেও ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। এ জন্য পরবর্তীতে ওই সব ঋণের টাকা আর ব্যাংকে ফেরত আসছে না। ফলে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পাহাড় জমছে। আবার কিছু কিছু ব্যাংক খেলাপি ঋণ লুকিয়ে রেখে তা অবলোপন দেখাচ্ছে। অর্থাৎ মূল হিসাব থেকে বাদ দিয়ে দিচ্ছে। এতে পুরো ব্যাংক খাতই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে টেলিফেনে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন তিনি। ড. সালেহউদ্দিন আরও বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে। কেননা এসব ব্যাংকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বেশি। তবে বেসরকারি খাতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। ফলে পুরো ব্যাংক খাতে এক ধরনের রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। এজন্য বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংকে পর্যবেক্ষণ বসানো শুরু হয়েছে। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ অবস্থা থেকে ব্যাংক খাতকে রক্ষা করতে হলে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ব্যাংকিং খাত সংস্কার কমিশন গঠন করার সময় এখন এসে গেছে। সেটা করা হলে বিপর্যস্ত এই খাতকে টেনে তোলা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)’র ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ব্যাংক খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি ঠেকাতে এবং এ খাতে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার জন্য ‘স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন’ গঠন করা এখন সময়ের দাবি।
গত রাতে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ব্যাংক থেকে যেসব অর্থ বেরিয়ে গেছে তা ফিরিয়ে আনতে হবে। এসব বিষয়ে কেস টু কেস ধরে তদন্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে তদারকির ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্ষমতাও বাড়ানো প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমাতে না পারলে এ খাতকে বিপর্যয় থেকে ফেরানো যাবে না। এমনিতেই ব্যাংক খাতে গ্রাহকদের আস্থা তলানিতে ঠেকেছে। এ খাতে আস্থা ফেরাতে হলে পুনর্গঠন করতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ের কোনো বিকল্প নেই। এ ছাড়া আর কোনো ঋণ যেন নতুন করে খেলাপি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে বলে তিনি মনে করেন।