Published in প্রথম আলো on 3 October 2020
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশ হলে দেশের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে। এ জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তুত হতে হবে এখনই। নামতে হবে নতুন বাজার ও নতুন রপ্তানি পণ্যের খোঁজে। আবার বিদ্যমান বাণিজ্য–সুবিধা বহাল রাখার জন্য দর-কষাকষিও করতে হবে।
এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশ হলে বিশেষ জোর দিতে হবে বেশ কিছু বিষয়ে। আশা করা যায়, ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি মিলবে বাংলাদেশের। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর একটি দেশের রপ্তানিসুবিধা ছয় বছর পর্যন্ত থাকতে পারে। তাই প্রথমত, আমাদের উচিত হবে দর-কষাকষি করে এই সুবিধা ১০ বছর পর্যন্ত পাওয়ার চেষ্টা করা। দ্বিতীয়ত, ইউরোপীয় ইউনিয়নে জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করা। যদিও এটি সহজ নয়, অনেক শর্ত পরিপালন করতে হবে। তৃতীয়ত, রপ্তানিসহ বাণিজ্য সম্প্রসারণে দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল (এফটিএ) গঠনের জন্য সুযোগ খুঁজে বের করতে হবে। কোন কোন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গঠন করা যায়, তা দ্রুত চিহ্নিত করে কাজ শুরু করা উচিত।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিদ্যমান বাজারসুবিধা রক্ষার পাশাপাশি নতুন বাজার ও পণ্য বহুমুখী করতে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।– দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সম্মাননীয় ফেলো, সিপিডি
এ ছাড়া নেপাল, ভুটানসহ আঞ্চলিক পর্যায়ে যোগাযোগ, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য—এসব একসঙ্গে বিবেচনা করে নানা উদ্যোগ নিতে হবে। যোগাযোগ সহজ হলে বাণিজ্য সম্প্রসারণ দ্রুত হয়। তৈরি পোশাকের মতো একক পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ করতে হবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিদ্যমান বাজারসুবিধা রক্ষার পাশাপাশি নতুন বাজার ও পণ্য বহুমুখী করতে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। কিন্তু বাংলাদেশে সমস্যা হলো, পোশাকমালিকেরা শুধু নিজেদের পণ্য রক্ষার চেষ্টা করেন। রপ্তানি পণ্যের বহুমুখী করার দিকে মনোযোগ কম। টেকসই উন্নয়নের জন্য নতুন বাজার ও নতুন রপ্তানি পণ্য দরকার।
সার্বিকভাবে রপ্তানি বাড়াতে বহুমাত্রিক বাণিজ্য–সুবিধার পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থার দিকে বেশি জোর দিতে হবে। এ ছাড়া বাণিজ্য সম্পর্কিত মেধাস্বত্ব অধিকারের (ট্রিপস) আওতায় পূর্ণ মেয়াদে সুবিধা ভোগ করার আগেই আমরা এলডিসি থেকে বের হয়ে যাচ্ছি। এলডিসিভুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তারা জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামে অংশ নিতে ভ্রমণসংক্রান্ত খরচের জন্য বিমান টিকিট পান। সেই সুবিধাও বন্ধ হয়ে যাবে।
লেখক জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) সদস্য।