অনানুষ্ঠানিক খাত বড় হচ্ছে বলে রাজস্ব আয় বাড়ছে না – মোস্তাফিজুর রহমান

Originally posted in প্রথম আলো on 30 January 2025

মোস্তাফিজুর রহমান | প্রথম আলো: ফাইল ছবি

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার সম্প্রতি কমেছে। এটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি প্রবৃদ্ধির কাঠামোও গুরুত্বপূর্ণ। এত দিন প্রবৃদ্ধির হার বেশি ছিল, যদিও সেই পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন ছিল; এখন প্রবৃদ্ধির হার কমছে, কিন্তু তার কাঠামো অপরিবর্তিত থেকে গেছে। যতটুকু প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তার গুণগত মান আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

বিষয়টি হলো একটি দেশের অর্থনীতির গুণগত মান কেমন, তা বোঝার অন্যতম মানদণ্ড হচ্ছে সংগঠিত খাত। একটি দেশের সংগঠিত খাত কতটা বড়, তার সঙ্গে সেই দেশের মানুষের কর্মসংস্থান, বিশেষত শোভন কর্মসংস্থান, নিয়মিত আয়ের নিশ্চয়তা, শ্রম অধিকার এবং সর্বোপরি সরকারের রাজস্ব আয়ের সম্পর্ক আছে। আমাদের দেশের রাজস্ব-জিডিপির অনুপাত যে পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম কম, তার অন্যতম কারণ অনানুষ্ঠানিক খাতের বাড়বাড়ন্ত। পরিতাপের বিষয় হলো, অর্থনৈতিক শুমারিতে জানা গেছে, গত ১১ বছরে অনানুষ্ঠানিক খাতের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ৭৮ শতাংশ।

অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান হচ্ছে, কিন্তু সেই কর্মসংস্থান শোভন নয়। সেখানে যেমন মজুরির হার কম, তেমনি শ্রম অধিকারের নিশ্চয়তাও নেই। এসব মানুষের জীবন অনেকাংশে অনিশ্চিত। শোভন কর্মসংস্থানে যেমন বেতনের বাইরেও কিছু সুযোগ-সুবিধা থাকে, এসব ক্ষেত্রে তা নেই।

বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের অর্থনীতির ৮৫ ভাগের বেশি অনানুষ্ঠানিক। এই অনুপাত রাতারাতি বদলে দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এই খাতের উন্নয়নে সরকার বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। অন্যান্য কিছু পরিসংখ্যান থেকে এই খাতের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোঝা যায়। সেটা হলো, বাংলাদেশের বেসরকারি বিনিয়োগ ও বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ অনেকটাই কমে গেছে।

বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির অনুপাতে দীর্ঘদিন ধরেই ২৪ থেকে ২৫ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। সম্প্রতি আমরা জানতে পেরেছি, দেশে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে গেছে, অর্থাৎ উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে, অর্থনৈতিক শুমারির প্রতিবেদনে যে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এর ফলে অনানুষ্ঠানিক খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানো গেলে এবং এই খাতে কর্মরত মানুষের দক্ষতাবৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হলে উৎপাদনশীলতা অনেকটাই বাড়বে বলে আমি মনে করি। তাতে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হবে।

এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বাংলাদেশ কয়েক বছরের মধ্যেই বেরিয়ে আসবে। তখন আমাদের প্রতিযোগিতা–সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এত বড় অনানুষ্ঠানিক খাত নিয়ে সেই প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়া কতটা সম্ভব, তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। সে জন্য এখন অর্থনীতির গুণগত মান উন্নয়নে নজর দিতে হবে।

মোস্তাফিজুর রহমান: সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো