Originally posted in বাংলা ট্রিবিউন on 9 April 2025
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে বর্তমানে বৈশ্বিক বাণিজ্যে যে ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল নীতি গ্রহণ করা হয়েছে, তা বাজার অর্থনীতির মূলনীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থি—এমন মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) রাজধানীর পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটে (পিআরআই) আয়োজিত ‘শুল্ক কারসাজির যুগে বাণিজ্যনীতি, বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প বাজার অর্থনীতি ছুড়ে ফেলেছেন। তিনি বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যে ধরনের একতরফা শুল্ক আরোপ করছেন, তা ইতিহাসে বিরল। এমনকি বিশ্বায়ন ব্যবস্থাকে যারা তৈরি করেছিল, সেই যুক্তরাষ্ট্রই এখন সেটি ভেঙে দিচ্ছে।’
রেহমান সোবহান আরও বলেন, “বর্তমানে আর ‘সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট’-এর যুগ নেই। এখন টিকে থাকবে তারা, যারা ভালো চুক্তি ও দর-কষাকষি করতে পারবে। অর্থনীতি ও বাণিজ্যকে এখন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি অর্থনৈতিক নিয়মে নয়, বরং রাজনৈতিক ও কৌশলগত বিবেচনায় পরিচালিত হচ্ছে।”
সেমিনারে বক্তারা বলেন, গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। এতে বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়, যা দেশের তৈরি পোশাকসহ প্রধান রফতানি খাতগুলোকে চাপে ফেলেছে।
রেহমান সোবহান তার বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের ‘কমান্ড ইকোনমির’ দিকে ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেভাবে সুতা আমদানি করা হয় বিনা শুল্কে, তেমনি আমরাও যদি মার্কিন চাপে সব পোশাক ওই সুতা দিয়ে তৈরি করতে বাধ্য হই, তাহলে বাজার নয়, তা হবে কমান্ড অর্থনীতি। বাংলাদেশের রফতানি ব্যবস্থা এত সরল নয় যে হুকুমে চলবে।’
পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আবার একটি নতুন বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছে। এটা খারাপ সময়ের ইঙ্গিত। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশও এখন ব্যয়ের চেয়ে বেশি আমদানি করছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশকে নতুন করে কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ কর কাঠামো, স্বচ্ছতা, দুর্নীতি এবং মেধাস্বত্ব অধিকার নিয়ে। এসব সমস্যার সমাধান ছাড়া কেবল কর কমিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।’
উল্লেখ্য, চলতি মাসের শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্র ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, যার ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও অন্যান্য রফতানি পণ্যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থার এই অস্থিরতা থেকে উত্তরণে এখন প্রয়োজন কূটনৈতিক তৎপরতা ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল।