Originally posted in প্রথম আলো on 19 April 2025
অনুমতি পৌনে ১৭ লাখ টন, চাল আমদানি ৫ লাখ ৪০ হাজার
চার দফা সময় বাড়ানোর পরও অনুমতির প্রায় ৬৮ শতাংশ চাল আমদানি করেননি ব্যবসায়ীরা। মেয়াদ শেষে বেড়েছে মোটা চালের দাম।
চাল উৎপাদনের ঘাটতি মেটাতে সরকার বেসরকারি খাতে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছিল। চাল আমদানি উৎসাহিত করতে শুল্ক–করও তুলে দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীরা যাতে চাল আমদানি করেন, সে জন্য চার দফা আমদানির অনুমতির সময় বাড়ানো হয়েছিল। তবে শুল্ক ছাড়ের সুবিধা এবং সময়সীমা বাড়ানোর পরও অনুমতির ৬৮ শতাংশ চাল আমদানি করেননি ব্যবসায়ীরা।
চাল আমদানির সময়সীমা পার হওয়ার পর বাজারে মোটা চালের দাম আবারও বেড়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির হিসাবে, এক সপ্তাহে মোটা চালের দাম ২ শতাংশ বেড়েছে। মোটা চালের দাম ৫০–৫৫ টাকা থেকে বেড়ে ৫০–৫৭ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ গত ৩১ মার্চ এক প্রতিবেদনে বলছে, ২০২৫ সালে সব ধরনের চালের দাম রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে। আগামী মে মাসে বোরোর ফলন বাজারজাত হলে চালের দাম কিছুটা কমতে পারে। তবে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আগস্ট থেকে চালের দাম আবার বাড়তে পারে বলে সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, চালের দাম সহনীয় রাখতে সরকার বেসরকারি খাতে আমদানির অনুমতি দিয়েছিল। ব্যবসায়ীরা খুব বেশি আমদানি করেননি, এটা ঠিক। তবে সরকারি–বেসরকারি খাতে এখন পর্যন্ত যা চাল আমদানি হয়েছে তাতে চাল নিয়ে আতঙ্ক কেটে গেছে। বাজারের মোটা থেকে মাঝারি আকারের চালের দামে স্থিতিশীলতা এসেছে।
অনুমতির ৬৮ শতাংশ চাল আসেনি
খাদ্য মন্ত্রণালয় গত বছরের নভেম্বরে চার দফায় ২৭৭টি বরাদ্দপত্রে (একই প্রতিষ্ঠানকে একাধিকসহ) ১৪ লাখ ৮১ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়। অনুমতিপত্রে ১০ ও ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে চাল আমদানি করে বাজারজাতের শর্ত দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে মাত্র এক লাখ টন চাল আমদানি করে বেসরকারি খাতে বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো। অর্থাৎ অনুমতির মাত্র ৭ শতাংশ চাল আমদানি হয়। এ পরিস্থিতিতে নতুন করে আরও দুই দফায় ৫৭টি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় দুই লাখ টন চাল আমদানির বরাদ্দ দেওয়া হয়। আবার এক মাস করে চার দফায় চাল আমদানির সময় বাড়ানো হয়। সর্বশেষ সময় বাড়িয়ে ১৫ এপ্রিল করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে ৩৩৪টি বরাদ্দপত্রে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের তথ্যে দেখা যায়, গত নভেম্বরে অনুমতি দেওয়ার পর ১৫ এপ্রিলের সময়সীমা পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ৫ লাখ ৪০ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। এসব চাল আমদানি করেছে ১৯০টি প্রতিষ্ঠান। চালে আমদানি শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, অগ্রিম আয়কর এবং আগাম কর মিলে ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ক-কর ছিল। এনবিআর অক্টোবর তিন দফায় সব ধরনের শুল্ক–কর প্রত্যাহার করে নেয়। এরপরও চাল আমদানি বাড়েনি।
বেসরকারি খাতে আমদানির অনুমতি পাওয়া একটি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের আফসানা ট্রেডিং। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার ওমর আজম প্রথম আলোকে বলেন, সামনে বোরো মৌসুমের ফসল উঠবে। ফলে এখন আমদানি করে লাভ করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থাকায় চাল আমদানি পুরোটা হয়নি। তবে চাল আমদানি কম হলেও বাজারে সংকট নেই। আবার মধ্যস্বত্বভোগীরা ধানের দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়নি।
বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর আরেকটি চট্টগ্রামের চাক্তাইয়ের প্রতিষ্ঠান মক্কা ট্রেডার্স। প্রতিষ্ঠানটি ১১ হাজার টন চালের বরাদ্দ পেয়ে ১০ হাজার ৯১৭ টন আমদানি করেছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মহিউদ্দিন আহমেদ বেলাল প্রথম আলোকে বলেন, মূলত যাদের চাল বিক্রির চ্যানেল রয়েছে, তারাই চাল আমদানি করেছে। যারা আমদানি করেছে, তারা নামমাত্র লাভে বিক্রি করেছে। নতুন প্রতিষ্ঠানগুলো সেভাবে আমদানি করতে পারেনি।
সরকারি আমদানি বাড়ছে
ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে, দেশে বছরে চালের চাহিদা ৩ কোটি ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৮০ লাখ টন। গত আগস্টে বন্যার কারণে চাল উৎপাদন কমতে পারে, সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকার চালের মজুত বাড়াতে সচেষ্ট হয়। বেসরকারি খাত ছাড়াও সরকারি খাতে সাড়ে ৯ লাখ টন চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে সরকার। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, সরকারিভাবে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত আমদানি করা ৬ লাখ ৩৮ হাজার টন চাল খালাস হয়েছে।
চালের নিরাপত্তা মজুতের পরিমাণ ধরা হয় ১১ লাখ টন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, সরকারি আমদানির পরও ১৬ এপ্রিল সরকারি গুদামে চালের মজুত ছিল ৯ লাখ ২৭ হাজার টন। পাইপলাইনে থাকা চাল গুদামে পৌঁছালে মজুত আরও বাড়বে।
খাদ্যসচিব মো. মাসুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি মজুত কমবেশি ১০ লাখ টনের আশপাশে থাকবে। চালের মজুত বিপজ্জনক পর্যায়ে নামার শঙ্কা নেই। কারণ, আমদানির পাশাপাশি বোরো মৌসুমে চাল সংগ্রহ শুরু হবে।
আমদানির সুযোগ বহাল রাখা দরকার
গবেষণা সংস্থা সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন দেশে এক লাখ টন করে চালের চাহিদা রয়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকলে এখন দাম যে টান টান অবস্থায় রয়েছে, তা না–ও থাকতে পারে। এ জন্য বোরো মৌসুমের নতুন ফসল বাজারজাত হওয়ার আগপর্যন্ত আমদানির সময়সীমা বাড়ানো দরকার ছিল। আবার একই সঙ্গে কৃষকেরা যাতে ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত না হন, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।