বাড়তি শুল্কে বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ তৈরি হয়েছে – ফাহমিদা খাতুন

Originally posted in সময়ের আলো on 3 August 2025

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক সংকট এখন সম্ভাবনা

মার্কিন শুল্ক নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছিল সেটি আপাতত কেটেছে। গত ২ এপ্রিল থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার এবং রফতানিকারকরা যে চরম দুশ্চিন্তায় ছিলেন সেটিও দূর হয়েছে। গত ১ আগস্ট মার্কিন প্রশাসন থেকে যখন জানানো হয় বাংলাদেশের ওপর থেকে পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে, তখন যেন গত তিন মাসের জগদ্দল পাথরটি নেমে যায় ঘাড় থেকে- হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা।

এখন তারা বলছেন, মার্কিন শুল্ককে ঘিরে যে সংকট তৈরি হয়েছিল সেটি এখন সম্ভাবনা হয়ে দেখা দিতে পারে। কারণ প্রতিযোগী কয়েকটি দেশের ওপর উচ্চ হারে শুল্কারোপ করায় সে সব দেশ থেকে ছুটে যাওয়া রফতানি আদেশ চলে আসতে পারে বাংলাদেশের বাজারে। তবে সম্ভাবনা যেমন আছে, ঠিক তেমনি বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জও আছে বেশ কিছু। চ্যালেঞ্জগুলো যদি ঠিকমতো উতরে যেতে পারে বাংলাদেশ তবেই শুল্ককে ঘিরে সম্ভাবনা ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারবে বাংলাদেশ।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনার ক্ষেত্রে আলোচনার টেবিলে মূলত চারটি বিষয়কে সামনে রাখা হয়েছিল। অর্থাৎ শুল্ক আলোচনার মূল নিয়ামক ছিল চারটি। সেগুলো হলো- ট্যারিফ রেট অ্যাডজাস্ট করা, বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা, পণ্য ক্রয়ের চুক্তি করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা। তবে নিরাপত্তার বিষয়ে আসলে কী আলোচনা হয়েছে বা কী চুক্তি করা হয়েছে- সেটি এখনও জানানো হয়নি। অবশ্য বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দিন জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হলেই নিরাপত্তা ইস্যুসহ সব বিষয় খোলাসা করে তুলে ধরা হবে এবং চুক্তির সব বিষয় প্রকাশ করা হবে। তিনি আরও জানান, শুল্ক আলোচনায় ২৫টি বোয়িং কেনার বিষয়টি খুব বেশি প্রাধান্য পায়নি, বরং দেশটি থেকে বেশি করে কৃষিপণ্য কেনা হবে এমন আলোচনা বেশি হয়েছে।

শুল্ক নিয়ে আলোচনায় অংশ নেওয়া প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান জানিয়েছেন, পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনার ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের একটি বন্ধুপ্রতিম দেশ বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অনেকেই যারা বাংলাদেশের শুভাকাক্সক্ষী তারাও ভূমিকা রেখেছেন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনেক শুভানুধ্যায়ীও শুল্কের বিষয়ে বাংলাদেশের হয়ে কাজ করেছেন।

তৈরি পোশাকের ব্যবসায় নতুন সুযোগের সম্ভাবনা: তৈরি পোশাক খাতের রফতানিকারকরা বলছেন, পাল্টা শুল্কের কারণে মার্কিন বাজারে তৈরি পোশাকের চাহিদা কিছুটা কমতে পারে। তারপরও রফতানি বৃদ্ধির বড় সুযোগ তৈরি হবে। এর কারণ চীনের ওপর উচ্চ শুল্ক থাকায় সেখান থেকে প্রচুর কার্যাদেশ সরবে। তার একটা অংশ পেতে পারে বাংলাদেশ। ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক থাকায় সেটি বড় আকারেও হতে পারে। তারা আরও বলেন, মার্কিন বাজারে উচ্চ শুল্কের কারণে চীনারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে আগ্রাসী হতে পারে। তাতে বাজারটিতে বাংলাদেশ নতুন করে প্রতিযোগিতায় পড়বে।

সম্ভাবনার বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাড়তি শুল্কের জন্য বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ দুটিই তৈরি হয়েছে। চীনের ওপর নতুন করে ট্যারিফ আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়তে পারে। এর ফলে রফতানি আদেশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদেও বাংলাদেশ একইভাবে চীনের ওপর আরোপিত শুল্কের প্রভাব থেকে উপকৃত হয়েছিল। তিনি আরও বলন, যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকরা যখন বেশি দামের পণ্যের পরিবর্তে বিকল্প উৎস খুঁজবে, তখন বাংলাদেশ বিশেষ করে টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস খাত রফতানি বাড়ানোর সুযোগ পেতে পারে। তবে এখানে একাধিক প্রতিযোগী দেশও থাকবে। যেমন ভিয়েতনাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া- যারা কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের ফাঁকা বাজার দখলের চেষ্টা করবে। অন্যদিকে শুল্কের কারণে যদি বিশ্ব অর্থনীতি মন্থর হয়, তা হলে বাংলাদেশি রফতানির সামগ্রিক চাহিদা হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকিও আছে।

প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে ভালো অবস্থায়: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা না হলে ১ আগস্ট থেকে বাড়তি ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করার কথা বলা হয়েছিল। এখন সেই শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশে আনা সম্ভব হলো। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ ভারতের পণ্যে বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্কারোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারত এখনও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ভারত ছাড়াও শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলো পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু ওই দেশগুলোর জন্য বাংলাদেশের প্রায় সমতুল্য অর্থাৎ গড়ে ১৯ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক হার ধার্য করা হয়েছে।

এই বিষয়টিকেই ইতিবাচকভাবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক থেকে শুরু করে চামড়া শিল্প, সব খাতের বাজার বিস্তৃত করার এটাই সুযোগ। কারণ ভারতের জন্য শুল্ক হার বেশি হওয়ার ফলে বায়াররা গার্মেন্টসের ক্ষেত্রে সে দেশে বাণিজ্য করতে বেশি আগ্রহী হবে না। আর পাকিস্তানের জন্য শুল্ক হার ১৯ শতাংশ হলেও এক শতাংশের সুবিধা পাওয়ার জন্য বায়াররা পাকিস্তানে যাবে না। কারণ পাকিস্তানের সেই সরবরাহ ক্যাপাসিটি নেই।

যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ: আসলে শুল্ক কমলেও কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। ১৫ শতাংশ শুল্ক কমানোর বিষয়টি কীভাবে ব্যবহার করা হবে অর্থাৎ এর বাস্তবায়ন হবে কীভাবে, এ নিয়ে আশঙ্কার কথা বলছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ। যেমন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বাড়তি শুল্ক কারা কতটুকু বহন করছে, তা দেখার বিষয়। এটি উদ্যোক্তাদের ওপর এলে মুনাফা কিছুটা কমে যাবে। কারণ পারস্পরিক শুল্ক হার তুলনামূলকভাবে কমলেও খুচরা বাজারে দাম বেড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি, ব্যাংক, লজিস্টিক, পোর্ট ও এনবিআরের ব্যবস্থাপনা সহজলভ্য। আমরা জানি, গত কয়েক মাসেও ঢাকা ও চট্টগ্রামে গ্যাসের অভাবে কয়েকশ ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে। আবার ট্রান্সশিপমেন্ট ট্যারিফ তো আছেই। তাই আমাদের মনে রাখতে হবে, নতুন এই শুল্কনীতি নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরু থেকেই বলেছেন, যারা আমেরিকান পণ্যের ওপর অসম শুল্ক আরোপ করেছে, যুক্তরাষ্ট্রও তাদের ওপর এই পাল্টা শুল্ক আরোপ করছে। অর্থাৎ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোই তার মূল উদ্দেশ্য।

বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেলের বক্তব্য হচ্ছে, পারস্পরিক শুল্ক হার তুলনামূলকভাবে কমলেও খুচরা বাজারে দাম বেড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া তিনি মনে করেন, এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি, ব্যাংক, লজিস্টিক, পোর্ট, এনবিএআরের অনেক কিছু উন্নত করতে হবে।

এ ছাড়া দেশে গ্যাসের সংকট আছে। উৎপাদনে দেরি হলে সময়মতো অর্ডার দেওয়া হয় না। তখন প্রোডাক্ট বিমানে পাঠাতে হয় বা ডিসকাউন্ট দিতে হয়। আবার দেখা যায়, বন্দর থেকে মালামাল জাহাজে ওঠাতে এক সপ্তাহ লেগে যায়। এনবিআর থেকে ডকুমেন্টস ক্লিয়ার হয় না। বন্দরের অদক্ষতার কারণেও অনেক সময় গতি মন্থর হয়। এসব চ্যালেঞ্জ দূর করতে হবে।

পণ্যে ২০ শতাংশ মার্কিন কাঁচামাল থাকলে পাল্টা শুল্ক প্রযোজ্য হবে না: এদিকে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেছেন, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে রফতানি করা তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যে ২০ শতাংশ মার্কিন কাঁচামাল থাকলে ওই পাল্টা শুল্ক প্রযোজ্য হবে না। শনিবার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের মার্কিন রফতানির প্রায় ৭৫ শতাংশ হচ্ছে তুলাভিত্তিক পোশাক। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে বলা আছে, যদি ন্যূনতম ২০ শতাংশ আমেরিকার কাঁচামাল (যেমন আমেরিকার তুলা) ব্যবহার করা হয়, তা হলে এই অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ আমেরিকার কাঁচামাল ব্যবহার করলে আমরা বাড়তি কিছু শুল্ক ছাড় পাব।

যেসব বিষয়ে এখনও নানা মনে প্রশ্ন: এদিকে কিছু বিষয়ে এখনও নানা মনে প্রশ্ন রয়েছে। যেমন ট্রেড নেগোসিয়েশনের বাইরে এখানে অন্যান্য নেগোসিয়েশনও হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিনিয়োগ সংক্রান্ত হতে পারে, অশুল্ক বাধা নিয়ে হতে পারে, কৌশলগত পণ্য ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে হতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের উচিত পূর্ণাঙ্গ চুক্তিটি প্রকাশ করা। কূটনৈতিক বিষয়গুলো এখানে একেবারেই পরিষ্কার না। বাংলাদেশ কী কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেগুলো প্রকাশ করা প্রয়োজন। কারণ, বাংলাদেশের বাণিজ্য একক দেশ নির্ভর নয়। সুতরাং চুক্তিতে বাংলাদেশের অন্যান্য বাণিজ্য অংশীজনের সঙ্গে থাকা বাণিজ্য স্বার্থ, বিনিয়োগ স্বার্থ, ঋণ স্বার্থ বা রেমিট্যান্স সংক্রান্ত স্বার্থের বিষয়ে বড় কোনো ছাড়ের বিষয় থাকলে তা জানানো দরকার।

শুল্কের টাকা কে দেবে: সরকার শুল্ক আদায় করে, কিন্তু নিজে দেয় না। যদি যুক্তরাষ্ট্র আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারক সংস্থাগুলোকে সেই শুল্ক দিতে হয়। এই অতিরিক্ত খরচ পুষিয়ে নিতে আমদানিকারকরা গ্রাহকদের কাছে থেকে বেশি দাম নিতে পারে। সোজা কথায়, শুল্কের ফলে বিদেশি পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। আর শেষমেশ এর খেসারত সাধারণ ক্রেতাকেই দিতে হয়।

শুল্কের আলোচনার নিয়ামক ছিল চারটি: নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান সমালোচনার জবাবে বলেন, সংস্কৃতিতে একটি কথা আছে- ‘ফলেন পরিচয়তেন’। অর্থাৎ ফলেই বৃক্ষের পরিচয়। মার্কিন শুল্ক নিয়ে আমরা ভালো ফল এনেছি এবং আমরা যে ফল আনলাম সেটি আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর সমপর্যায়ে। সুতরাং যারা আমাদের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তারা কেন তুলেছেন- সেটি আমার নিজেরও বুঝে আসে ন। তবে একটা কারণ হতে পারে- এটি যে নিছক শুল্ক চুক্তি নয় এটি সম্পর্কে তাদের হয়তো সম্মক ধারণা ছিল না। এটি যদি শুধুই শুল্ক সংক্রান্ত বিষয় হতো তা হলে কিন্তু আমরা বিষয়টি দেড়-দুবেলাতেই চূড়ান্ত করে ফেলতাম। মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে নেগোসিয়েশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশসহ প্রত্যেক দেশকে চারটি বিষয়ে কাজ করতে হয়েছে। বিষয় চারটি হলো- ট্যারিফ রেট অ্যাডজাস্ট করা, বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা, পণ্য ক্রয়ের চুক্তি করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়। এর মধ্যে নিরাপত্তা ইস্যুটি নিয়েই নানা রকম কথাবার্তা হচ্ছে। চুক্তিটি সম্পন্ন হলেই সব কিছু খোলাসা করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তো‌জার সঙ্গে আলাপচারিতায় বাণিজ্য উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনায় বাংলাদেশের হয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে মধ্যপ্রাচ্যের বন্ধুপ্রতিম একটি দেশ। এই তৃতীয় দফার আলোচনায় আসার পথে আমি ১২ ঘণ্টা সে দেশে কাটিয়েছি। দেশটি মার্কিন প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আমাদের জন্য বলেছেন। এই যে শুল্ক নিয়ে আলোচনা শেষ করার আগেই যে ভালো একটি শুল্ক হার পেয়ে গেলাম তাতে মধ্যপ্রাচ্যের ওই দেশটির তৎপরতা আমাদের কাজে লেগেছে। এ ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমাদের শুভাকাক্সক্ষী অনেকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি সাপেক্ষে চুক্তির গোপনীয়তা প্রকাশ করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির আলোচনায় যে গোপনীয়তার বিষয়টি ছিল, চুক্তি স্বাক্ষর হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি সাপেক্ষে তা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দিন। তিনি বলেন, চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর শিগগিরই হয়তো যৌথ বিবৃতি আসবে। তথ্য অধিকারের আলোকে এটি করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তো‌জার সঙ্গে আলাপচারিতায় বাণিজ্য উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। গোলাম মোর্তোজা ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড পেজে ভিডিওটি প্রকাশ করেছেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, বাণিজ্য চুক্তি কাজে লাগাতে হলে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে এ নিয়ে আত্মসন্তুষ্টির সুযোগ নেই।

বোয়িং ক্রয় খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল না: যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বাণিজ্য আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র মোটেও বিষয়টি উত্থাপন করেনি। এই বিষয়টি একমুখী। গত বছর বোয়িং ১২টি বিমান বানিয়েছে। সুতরাং এই চুক্তি অনুযায়ী তারা হয়তো ২০৩৭ সালে প্রথম বিমান সরবরাহ করতে পারবে। বরং যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ ছিল কৃষিপণ্য নিয়ে। বাংলাদেশ প্রতি ১৫ থেকে ২০ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৫০০ কোটি থেকে ২ হাজার কোটি ডলারের খাদ্যপণ্য আমদানি করে। যুক্তরাষ্ট্রও কৃষিপণ্যের বৃহৎ উৎপাদক। বাংলাদেশ মূলত জ্বালানি ও কৃষিপণ্যের ভিত্তিতে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর কথা বলেছে, যেসব পণ্য এমনিতেই বাংলাদেশকে আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ৬ বিলিয়ন বা ৬০০ কোটি ডলারের মতো। ফলে বাংলাদেশে তুলা, সয়াবিন, ভুট্টা, গমজাতীয় পণ্য আমদানি বাড়িয়ে ২০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা করতে পারে।

উল্লেখ্য, গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। নতুন এই শুল্ক আরোপে বাংলাদেশের রফতানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। ৯০ দিনের ওই শুল্ক বিরতির সময়সীমা শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের ওপর নতুন করে শুল্ক হার নির্ধারণ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্য রফতানির একক শীর্ষ বড় বাজার। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৮৬৯ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছে, যা দেশের মোট রফতানি আয়ের ১৮ শতাংশের কিছু বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ৮৬ শতাংশের বেশি তৈরি পোশাক। রফতানি হয়েছে ৭৫৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক।