মুক্ত বাণিজ্য দুর্বল হচ্ছে, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয় – ফাহমিদা খাতুন

Originally posted in বণিকবার্তা on 16 August 2025

বিসিআইয়ের গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

এলডিসি গ্রাজুয়েশন যখনই করুক না কেন, প্রস্তুতি এখনই নিতে হবে

এলডিসি গ্রাজুয়েশনে গেলে শুরুতে দেশের শিল্পখাতে ধাক্কা আসবে। তবে যখনই বাংলাদেশ গ্রাজুয়েশনে যাক না কেন, এখনই তার প্রস্তুতি নিতে হবে। শনিবার (১৬ আগস্ট) বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) আয়োজিত ‘মেধাস্বত্ব ও বাণিজ্যিক পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ: বাংলাদেশের স্থানীয় শিল্পের সর্বোত্তম কৌশল’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠকে এ পরামর্শ দেন বক্তারা।

এ সময় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের প্রধান নাহিয়ান রহমান রকি বলেন, আমাদের এখনই প্রস্তুত হতে হবে। এলডিসি গ্রাজুয়েশন যখনই করি না কেন, এফটিএ এবং পারস্পরিক চুক্তির জন্য এখনই প্রস্তুত হতে হবে। এফটিএর জন্য আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। এখানে ব্যর্থতার পাশাপাশি আমাদের অগ্রাধিকারের বিষয়টিও থাকবে। কখনোই আমরা শতভাগ জিততে পারব না। বিশ্বকে দেখতে হবে। কোন কোন দেশ এবং কোন ব্যবসায়িক ব্লকের সঙ্গে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করব তা নির্ধারণ করতে হবে। প্রস্তুতি না নিলে বার বার গ্রাজুয়েশন পিছিয়েও কোনো ফল আসবে না।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, মুক্ত বাণিজ্য নীতি থেকে পৃথিবী সরে এসেছে। বিশ্বের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন জটিল। বিশেষ করে উন্নত বা পরাশক্তি দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ ও ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব এখন বাণিজ্যে পড়ছে। ফলে সময়ে সময়ে সংরক্ষণশীল বাণিজ্য নীতিগুলো প্রবর্তন হচ্ছে। এসব পদক্ষেপ যতটা না অর্থনৈতিক তার চেয়ে বেশি ভূ-রাজনৈতিক। ভবিষ্যতে এটি আরো বেশি দৃশ্যমান হবে। মুক্ত বাণিজ্য নীতিতে সব দেশই উপকৃত হয়েছিল। কিন্তু এই ব্যবস্থা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে গেছে। উন্নত দেশগুলো ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে এই নীতির উল্টোপথে বৈশ্বিক বাণিজ্য চলতে শুরু করেছে।

তিনি আরো বলেন, বৌদ্ধিক সম্পত্তি বা মেধাস্বত্ত অধিকারের বাণিজ্য-সম্পর্কিত দিক নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বাক্ষরিত ট্রিপস চুক্তির ৬৬.২-এ বলা আছে, উন্নত দেশগুলো প্রযুক্তি শেয়ার করবে। কিন্তু এখানে কোনো অগ্রগতি হয়নি। আমরা সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের (এফডিআই) কথা বলছি। কারণ এর মাধ্যমে মূলধন আসে। কিন্তু এর সঙ্গে প্রযুক্তির শেয়ারেরও কথা ছিল। তবে এফডিআই এলেও শেষ পর্যন্ত উন্নত দেশগুলো প্রযুক্তি শেয়ার করে না। যেটি স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ নিয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে।

এলডিসি গ্রাজুয়েশন নিয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে যাওয়ার জন্য তিনটি সূচক নির্ধারিত আছে। এর সঙ্গে প্রযুক্তি, উদ্ভাবন এবং সক্ষমতাও যোগ করা দরকার। কারণ প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন হলো অগ্রগতির মূল উপাদান। কোনো দেশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা না থাকলে সেই দেশ অগ্রগতি করতে পারবে না। যে দেশ প্রযুক্তিতে যত বেশি এগিয়ে, জাতি হিসেবে তারাই বেশি উন্নতি করছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিসিআই সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, এলডিসি গ্রাজুয়েশনের কারণে আমরা এফটিএ করছি। এটি করতে গেলে আমদানি ট্যারিফ কমাতে হবে। আর আমদানি ট্যারিফ কমলে দেশীয় অনেক শিল্প বিপদে পড়বে। সরকারের শুধু রাজস্ব কমবে এমন নয়, সেই সঙ্গে দেশের শিল্পও বসে যাবে। ট্যারিফ বেশি হওয়ার কারণে পলিমার, সিমেন্ট, প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজের মতো অনেক শিল্প টিকে আছে। আবার সরকারের রাজস্ব কমে গেলে দেশের উন্নয়নের গতি শ্লথ হয়ে যাবে।

গোলটেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন থার্ড ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্কের আইন পরামর্শক ও জ্যেষ্ঠ গবেষক সানিয়া রেইড স্মিথ এবং মেধাস্বত্ববিষয়ক পরামর্শক ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাসলিমা জাহান।

এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা দেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সাপোর্ট টু সাসটেইনেবল গ্রাজুয়েশন প্রোজেক্টের সিএম ড. মোস্তফা আবিদ খান, রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‍্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি. রহমান, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সভাপতি আব্দুল হাই সরকার এবং বাংলাদেশ রিকন্ডিশনড ভিইকলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি আব্দুল হক।