Originally posted in Citizens’ Voice on 23 November 2025
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা ছেড়ে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ধরে রাখা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সুবিধা পেতে এলডিসি মর্যাদা দীর্ঘ সময় ধরে ধরে রাখার চেষ্টা করা পুরনো চিন্তা।
গতকাল শনিবার রাজধানীর প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন ২০২৫’ সম্মেলনের প্রথম দিনে তিনি এসব কথা বলেন।
রেহমান সোবহান জানান, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার বা ৮০০ কোটি ডলার কিন্তু রাজনৈতিক কারণে এই বাজার ক্রমেই অনিশ্চিত হয়ে উঠছে। এ অনিশ্চয়তা অর্থনৈতিক কারণে নয়। তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যবস্থার ক্ষমতার ভারসাম্যে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এক সময় পুরো বিশ্ব পশ্চিমের প্রাধান্যে থাকলেও এখন ক্ষমতার কেন্দ্র ক্রমেই পূর্বদিকে সরছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে নতুনভাবে নিজের অবস্থান সাজাতে হবে। পুঁজি সহজলভ্য এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রবৃদ্ধি সম্ভব এমন বাজারের দিকে দেশের মনোযোগ থাকা উচিত।
ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ পশ্চিমঘেঁষা ছিল। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর জিডিপির ১০–১৫ শতাংশ আসত পশ্চিমা সহায়তা থেকে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে। কিন্তু এখন সেই বাস্তবতা নেই। বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীলতা মাত্র ২ শতাংশের মতো।
রেহমান সোবহান বলেন, ‘যে সহায়তা আমরা পাই তারও একটি অংশ অব্যবহৃত থাকে। এখনও প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার বা ৫ হাজার কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাইপলাইনে আছে। পুঁজির প্রধান উৎস এখন এশীয় দেশগুলো, বিশেষ করে জাপান ও চীন। এই দেশগুলো বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে ৪০ বিলিয়ন ডলার বা ৪ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে।’
তিনি সতর্ক করেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের শীর্ষ জিডিপি হলেও চীন অনেকটা এগিয়ে গেছে এবং ভারত দ্রুত এগোচ্ছে। দক্ষিণের দেশগুলোর প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার এখন চীন। চীনের বাজার ও পুঁজি ব্যবহার করে অনেক দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ ভারত ও চীনের বাজার যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারেনি। রেহমান সোবহান বলেন, ‘ভারত ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশের অধিকাংশ পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে। চীনও কিছু বছর আগে এই সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু আমরা রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে পারিনি। আঞ্চলিক সরবরাহ ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত হতে পারিনি।’
তিনি নীতি প্রণেতাদের আরও গতিশীল হওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে উদ্ভাবনী হতে হবে। পশ্চিমা দেশগুলো শুল্ক আরোপ ও প্রযুক্তি রপ্তানিতে সীমাবদ্ধতা দিয়ে নিজেদের অর্থনৈতিক প্রাধান্য ধরে রাখতে চায়। তবে এই নীতির দীর্ঘস্থায়িত্ব নেই।
বাংলাদেশকে রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে এবং আঞ্চলিক বৃহৎ শক্তিগুলোর সরবরাহ ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত হতে হবে। রোমান সাম্রাজ্যের পর প্রথমবার বৈশ্বিক সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তির মধ্যে সুস্পষ্ট বিচ্ছিন্নতা দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন প্রধান সামরিক শক্তি, কিন্তু প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি নয়।
রেহমান সোবহান আশা করেন, ২০৫০-এর দশকে উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর সম্মিলিত জিডিপি বর্তমান জি-৭ দেশের দ্বিগুণ হবে। এ উন্নতির কারণ হলো এশীয় অর্থনীতিগুলো প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভর নয়, বরং তারা প্রতিযোগিতামূলকভাবে পণ্য ও সেবা উৎপাদনে সক্ষম। বর্তমানে চীন প্রায় ৭০টির বেশি দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মূলত পশ্চিম ইউরোপ ও কিছু ছোট ক্যারিবীয় দেশে সীমাবদ্ধ।



