Dr Fahmida Khatun’s book on Bangladesh Economy reviewed

Published in Prothom Alo on Friday, 4 April 2014.

অনেক চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়

বাংলাদেশের অর্থনীতি: ভিতর ও বাহির
ফাহমিদা খাতুন
প্রকাশক: আগামী প্রকাশনী
প্রচ্ছদ: অভ্র ভট্টাচার্য
১৯০ পৃষ্ঠা
দাম: ৩৫০ টাকা
অর্থনীতির জটিল বিষয়ের ভেতরে ঢুকতে সাধারণ মানুষের অনাগ্রহ আছে। এর অন্যতম কারণ হলো, বাংলা ভাষায় সহজভাবে লেখা অর্থনীতিবিষয়ক বইয়ের অভাব। সম্প্রতি অর্থনীতিবিদ ফাহমিদা খাতুনের লেখা বাংলাদেশের অর্থনীতি: ভিতর ও বাহির সেই অভাবের অনেকটা পূরণ করেছে বলে মনে হয়। এটি বাংলায় লেখা তাঁর প্রথম বই।

বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে ড. ফাহমিদা খাতুন একটি উজ্জ্বল নাম। সুশ্রী, বুদ্ধিদীপ্ত, প্রাণ খোলা, চমৎকার ব্যবহারের এই মানুষটি কর্মক্ষেত্রে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছেছেন নিজের অসাধারণ মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে। তো, বই সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে এখানে বইয়ের লেখক সম্পর্কেও দু-একটি তথ্য জানিয়ে রাখি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে ফাহমিদা খাতুন চলে যান যুক্তরাজ্যে। সেখানে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন থেকে অর্থনীতিতে ডিস্টিংশনসহ স্নাতকোত্তর এবং পরে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন শেষে ফিরে আসেন নিজ বাসভূমে। সেই থেকে অর্থনীতি নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন তিনি। শুধু অর্থনীতি গবেষণা নয়, বিভিন্ন সময়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী কর্ম-উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন সুচারুভাবে। সামষ্টিক অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, পরিবেশ ও স্বল্পোন্নত দেশের অর্থনীতি বিষয়ে দেশে এবং দেশের বাইরে তাঁর অনেক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।

আগেই বলেছি আলোচ্য বইটি লেখা হয়েছে সহজ করে। কিন্তু কী আছে এ বইয়ে? এখানে নারী উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা, বাজেট ব্যবস্থাপনা শিরোনামের বিষয় যেমন আছে, তেমনি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, ব্যাকিং খাতে সুশাসন, পোশাক খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার বিভিন্ন ঘোষণার তাৎপর্য শীর্ষক জটিল বিষয়ও অনবদ্য সহজ সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করেছেন লেখক। শুধু কি তাই—বিষয়ের সঙ্গে প্রয়োজনীয় ডাটা ব্যবহারের মাধ্যমে বক্তব্যকে হূদয়গ্রাহী ও সাধারণ মানুষের বোধগম্য করে তুলেছেন।

বইটিতে আছে নারীবান্ধব অর্থনীতি নিয়ে প্রণিধানযোগ্য আলোচনা। বিশেষ করে ‘বাংলাদেশের নারী: সংকটে-সম্পদে’, ‘অর্থনীতির মূলধারায় নারীবান্ধব নীতি-কৌশল ও পরিবেশের অপর্যাপ্ততা’ বিষয়সমূহ অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে অর্থবহ করে পরিবেশন করেছেন; যা বইটির একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন বলে বিবেচিত হতে পারে। বলা যায়, এই বইয়ের বিভিন্ন লেখায় প্রচুর উদাহরণ এবং তার ওপর ব্যাপকভাবে আলোকপাত করে এ দেশের নারীর অবস্থা ও অবস্থান সম্পর্কে তিনি যেন আমাদের অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে এসেছেন।

সাধারণভাবে আমাদের ধারণা এমন, নারীরা অর্থনীতিবিষয়ক আলোচনা-সমালোচনায় পড়তে অনাগ্রহী। কিন্তু আজকের অধিকার-সচেতন নারী তাঁর জীবনের অর্থনীতির সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির যোগসূত্র খুঁজতে চান। তাই বাংলায় লেখা এই বইটির মধ্য দিয়ে নারী-পুরুষ উভয়েই চার দশকের যাত্রার বিভিন্ন বাঁকে বাংলাদেশের অর্থনীতির সাফল্য, চ্যালেঞ্জ এবং উত্তরণের পথ সম্পর্কে পরিচিত হতে পারবেন।

শেষ পর্যায়ে বলব, অর্থনীতির মতো দুরূহ বিষয় নিয়ে প্রাঞ্জল ভাষায় লেখার জন্য লেখককে বোধ করি আলাদাভাবে কোনো চেষ্টা করতে হয়নি। কেননা, বাংলাদেশের অর্থনীতি: ভিতর ও বাহির বইয়ের সবটাই এসেছে স্বাভাবিকভাবে, বৃক্ষশাখায় ফুল আসার মতো। ফাহমিদাকে অভিনন্দন।