Dr Khondaker Golam Moazzem on the status of compensation for Rana Plaza victims

Published in The Daily Ittefaq on Saturday, 19 April 2014.

আন্তর্জাতিক তহবিলে কাঙ্ক্ষিত সাড়া নেই
রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ

রিয়াদ হোসেন

রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্ত পোশাক শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক উদ্যোগে গঠিত তহবিলে কাঙ্ক্ষিত সাড়া মিলছে না। নয়তলা ওই ভবনের ৫টি কারখানা থেকে পোশাক নেয়া ২৯টি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮ থেকে ১০টি ব্র্যান্ড ছাড়া বাদবাকি ব্র্যান্ডগুলো অর্থ প্রদানে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। চার কোটি ডলারের (৩১২ কোটি টাকা) লক্ষ্য নিয়ে গঠিত এই তহবিলে এখন পর্যন্ত মাত্র দেড় কোটি ডলারের তহবিল যোগাড় হয়েছে।

এই তহবিলের মূল উদ্যোক্তা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও শ্রম অধিকার সংগঠন ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিল। আইএলও’র লক্ষ্য ছিল আগামী ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা দুর্ঘটনার এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই এই তহবিলের অর্থ যোগাড় করা। তবে ২৪শে এপ্রিলের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত তহবিল যোগাড় না হলেও পরবর্তী সময়ে ক্রেতারা অর্থ প্রদান করবে বলে আশা করছে আইএসও। ইতিমধ্যে যোগাড় হওয়া দেড় কোটি ডলারের তহবিল থেকে আগামী ২৩ এপ্রিলের মধ্যে ওই ভবনের প্রায় ৩ হাজার ৬শ’ শ্রমিকের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে বলে সমপ্রতি এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন বাংলাদেশে আইএলও’র কান্ট্রি ডিরেক্টর শ্রী নিভাস রেড্ডি।

রানা প্লাজা দুর্ঘটনার এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগে নিহতদের পরিবার ও আহতদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমগুলোতে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। বুধবার ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য গার্ডিয়ানে’ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রানা প্লাজার শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের লক্ষ্যে গঠিত ৪ কোটি ডলারের তহবিলের এক-তৃতীয়াংশ আদায় হয়েছে। রানা প্লাজার ক্রেতা অনেক ব্র্যান্ডই এই তহবিলে অংশ নেয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড ওয়ালমার্ট, চিলড্রেন্স প্লেস, ক্যাটো ফ্যাশন্স, যুক্তরাজ্যের বোন মার্শে, প্রিমিয়ার ক্লোদিং, প্রাইমার্ক, বেলজিয়ামভিত্তিক সিএন্ডএ, ইটালির বেনেটনসহ ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেনের ২৯টি ব্র্যান্ড রানা প্লাজার বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে পোশাক বানাত।

ব্রিটিশ ব্র্যান্ড প্রাইমার্ক, বোনমার্শে, কানাডার লোবলো, স্পেনের ম্যাঙ্গো, ইন্ডিটেক্সসহ কয়েকটি ব্র্যান্ড ইতিমধ্যে এই তহবিলে অর্থ প্রদান করেছে। অবশ্য বাদবাকী ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে কয়েকটি রানা প্লাজা দুর্ঘটনা পরবর্তী বিভিন্ন কারখানার অগ্নি ও ভবন নিরাপত্তায় দীর্ঘমেয়াদে সহায়তা করতে চেয়েছে।

এদিকে শ্রমিকদের যথাযথ ক্ষতিপূরণের লক্ষ্যে ক্রেতাদের বাধ্য করতে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে ওয়ার্কার্স রাইট্স কনসোর্টিয়াম, ক্লিন ক্লথ্স ক্যাম্পেইন, সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ইন্ডাস্ট্রিঅল গ্লোবাল ইউনিয়ন, ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শ্রমিক অধিকার সংগঠন। দেশেও বিভিন্ন শ্রমিক অধিকার সংগঠন ২৪ এপ্রিলের আগেই শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। ক্ষতিপূরণের লক্ষ্যে এই তহবিলে অর্থ প্রদান করা ব্র্যান্ডগুলোর নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক শ্রমিক অধিকার সংগঠনগুলো। ইতিমধ্যে এসব সংগঠন অর্থ আদায় করতে একাধিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। ২৪ এপ্রিলকে সামনে রেখে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, তুরস্ক, স্পেন, নেদারল্যান্ড্স, ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্র্যান্ড চিলড্রেন্স প্লেস রানা প্লাজা থেকে পোশাক সংগ্রহ করতো। তারা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য গঠিত তহবিলে মাত্র ৫ লাখ ডলার প্রদান করতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু এই তহবিলে অন্তত ৮০ লাখ ডলার দেয়ার দাবিতে গত শুক্রবার বিক্ষোভ করেছে শ্রম অধিকার সংগঠনের কর্মীরা। তবে চিলড্রেন প্লেসের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা বাংলাদেশের শ্রমিকদের নিরাপত্তা রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদে সহায়তা করতে প্রস্তত। সমপ্রতি ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে আমস্টারডামভিত্তিক আন্তর্জাতিক শ্রমিক অধিকার গ্রুপ ক্লিন ক্লথ্স ক্যাম্পেইনের বরাত দিয়ে বলা হয়, রানা প্লাজার ৫টি কারখানা যে ২৯টি ব্র্যান্ডের পোশাক বানাত ওই ব্র্যান্ডগুলো বছরে ২ হাজার ২শ’ কোটি ডলারের ব্যবসা করে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যে অর্থ চাওয়া হয়েছে তা তাদের সম্মিলিত মুনাফার ৫শ’ ভাগের একভাগ মাত্র। ওই প্রতিবেদনে ওয়ার্কার্স রাইট্স কনসোর্টিয়ামের নির্বাহী পরিচালক স্কট নোভা বলেন, ব্র্যান্ডগুলো ওই তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ সহায়তা না দিলে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া সম্ভব হবে না।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) দীর্ঘদিন থেকে রানা প্লাজা পরবর্তী কার্যক্রম নিয়ে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম নানাবিধ কারণ বিশ্লেষণ করে রানা প্লাজার ক্ষতিপূরণে দীর্ঘসূত্রতার আশঙ্কা করছেন। ‘ইত্তেফাক’কে তিনি বলেন, ব্র্যান্ডগুলো যথাযথ অর্থ প্রদান করছে না। আবার অর্থ সংগৃহীত হওয়ার পর মৃত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের প্রকৃত দাবিদার নির্ধারণ নিয়েও জটিলতা তৈরি হবে। ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের মহাসচিব রায় রমেশ চন্দ ‘ইত্তেফাক’কে বলেন, ক্ষতিপূরণের এই উদ্যোগটি মানবিক। এতে কোন আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল না। নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার ক্ষেত্রে আইএলও’র নীতিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নিহতদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রধান দায়িত্ব ওই ভবনের কারখানা মালিকদের। ওই কারখানায় যে সব আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড পোশাক বানাত তাদের আইনি দায় না থাকলেও নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে। সে জন্যই তাদেরকে লক্ষ্য ধরে ‘রানা প্লাজা ট্রাস্ট ফান্ড’ নামে এই ক্ষতিপূরণের তহবিল গঠন করা হয়েছে। তবে তিনি আশাবাদী ২৪ এপ্রিলের আগেই এই তহবিলে ক্ষতিপূরণে প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদানে ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসবে।