২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্ব দিতে হবে

Download: Paper | Presentation

চলমান কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে ২০২০-২১ অর্থবছরে বিভিন্ন অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এ অবস্থায় জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রণয়ন করা উচিত। নারী, শিশু, বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিকসহ দেশের দুর্বল জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ সামাজিক সুরক্ষার আওতার বাইরে থেকে গিয়েছে। এই জনগোষ্ঠীকে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

জিডিপি’র এক শতাংশের কম বরাদ্দ নিয়ে চলমান সংকটের মধ্যে দেশের নাগরিকদের সাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা অত্যন্ত কষ্টকর। দেশের স্বাস্থ্য খাতের বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করার এখনই সময়। এক্ষেত্রে, বাজেট বরাদ্দ, দক্ষতা ও জনবল বৃদ্ধি এবং বাজেট বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্যখাতকে ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে অগ্রধিকার দেওয়া প্রয়োজন।

https://www.facebook.com/cpd.org.bd/videos/591056004847129/

 

শনিবার ৯ মে ২০২০ এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসকল পরামর্শ প্রদান করে সেন্টার ফর পিলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। কোভিড-১৯-বর্তমান প্রেক্ষাপট ও বাজেট ২০২০-২১ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট নিয়ে সুপারিশমালা এবং কোভিড-১৯ মোকাবেলায় এ যাবৎকালে বাংলাদেশ সরকারগৃহীত বিভিন্ন নীতি সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সিপিডি’র মতামত ও পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করা হয়। সিপিডি’র বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বাধীন পর্যালোচনা (আইআরবিডি) প্রকল্পের আওতায় সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজিত হয়।

সিপিডি’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো জনাব তৌফিকুল ইসলাম খান সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, চলমান মহামারির ফলে ২০২০-২১ অর্থবছরে জাতীয় অর্থনীতি বিভিন্নমূখী ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। বাস্তবসম্মত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের মাধ্যমে এসকল ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য একটি সম্প্রসারণমূলক বাজেট প্রণয়ন করা জরুরি। বিভিন্ন সরকারি ব্যয় ও বরাদ্দের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করা উচিত। তিনি বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে কালো টাকা সাদা করার কোনো সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না। মধ্যবিত্ত শ্রেনির ওপর চাপ কমাতে, করমুক্ত আয়সীমা ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করছে সিপিডি।

সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন মিতব্যায়ী হয়ে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় সংকোচনের মাধ্যমে অর্থের সংস্থানের পরামর্শ প্রদান করেন। তিনি বলেন, প্রশাসনিক ও অন্যান্য অনুৎপাদনশীল খাতে সরকারের ৫০ শতাংশ ব্যয় কমানোর সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন দাপ্তরিক কার্যকমে ও সরকারি পরিবহন ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরো স্বচ্ছতা আনয়য়নের মাধ্যমে সরকারের সাশ্রয়ী ও ব্যয় সংকোচনমূলক নীতি গ্রহণ করা যেতে পারে। সরকার ঘোষিত প্রণোদনা কাঠামো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংকিংখাতকে অত্যন্ত সতর্কভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে বলে মনে করেন ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, সরকারি প্রনোদনা কাঠামো বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংকের ওপর গুরুদায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এমনিতেই ব্যাংকে তারল্য সংকট রয়েছে, তারওপর এই প্রণোদনা বাস্তবায়ন করতে গেলে ব্যাংকে ঋণের চাপ বেড়ে যাবে। ক্ষতিগ্রস্থ উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী এবং কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তিরাও প্রণোদনার সুবিধা চাইতে আসবেন। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে যাচাই-বাছাই করে এই কাজ করতে হবে। দেশের স্বাস্থ্যখাত সম্পর্কে তিনি বলেন, নাগরিকদের কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা ও সুষ্ঠু স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হলে এ খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, সম্মাননীয় ফেলো, সিপিডি, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও অপ্রত্যক্ষ করের ওপর বেশি চাপ না দেওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন। চলমান মহামারির ফলে, দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ, যারা দৈনিক ও চুক্তিভিত্তিক মজুরির ওপর নির্ভরশীল, তারা এক বড় ধরণের অর্থনৈতিক শঙ্কার মধ্যে পড়েছেন। একইসাথে, প্রবাসী কর্মীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দেশে ফিরে এসেছেন এবং অনেকে কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন। এ প্রেক্ষাপটে প্রবাসী কর্মীসহ দেশের কর্মহীন জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের একটি অর্থিক সহযোগিতা কাঠামো বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। ২০১৩ সালের পর থেকে দেশে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। এসকল খাতে ধারাবাহিকভাবে নিয়োগের মাধ্যমে স্বাস্থ্য জনবল কাঠামো শক্তিশালী ও দক্ষ করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সরকারের অনুন্নয়ন ব্যয় কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন। সরকার বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য সম্পদ ক্রয়সহ বিভিন্ন ধরণের অনুন্নয়ন ব্যয় করে থাকে। আগামী অর্থবছরে এ ধরণের ব্যয় কমানো উচিত বলে তিনি মনে করেন। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষিখাতে ভর্তুকি বৃদ্ধি ও অব্যাহত রাখা এবং বিভিন্ন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়নের ওপর সরকারের জোর দেওয়া উচিত, বলেন ড. মোয়াজ্জেম।

সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলনটি শেষ হয়।