সম্পদ সঞ্চালনে দক্ষতা বাড়াতে হবে – ড. ফাহমিদা খাতুন

Published in বণিক বার্তা on Sunday, 26 June 2016

সম্পদ সঞ্চালনে দক্ষতা বাড়াতে হবে – ড. ফাহমিদা খাতুন

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক। এর আগে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ইউএনডিপি ও ইউএসএআইডিতে কাজ করেছেন। খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেছেন যুক্তরাজ্যের কিংস কলেজ ও গ্রিনিচ বিশ্ববিদ্যালয়ে। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধীন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি লাভ করেন। পরবর্তীতে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট-ডক্টরেট করেছেন। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ ইনস্টিটিউটে অধ্যাপক জেফ্রি স্যাক্সের সঙ্গে এসডিজি নিয়ে কাজ করেছেন। নরওয়ের ক্রিশ্চিয়ান মিকেলসেন ইনস্টিটিউট, দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়া ইনস্টিটিউট ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিকস অ্যান্ড ট্রেড এবং ভারতের সেন্টার ফর স্টাডি অব সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড পলিসি নামক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ভিজিটিং ফেলো ছিলেন। রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকে ও এসএমই ফাউন্ডেশনের পরিচালনা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার সঙ্গে বাজেটসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয় বণিক বার্তার।

সাক্ষাত্কার নিয়েছেন এম এম মুসা

প্রস্তাবিত বাজেটের ভালো দিক ও চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে কিছু বলুন

cpd-fahmida-khatun-এবারের বাজেটটি প্রণীত হলো যে সামষ্টিক অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে, সেখানে আমরা দেখছি মূল্যস্ফীতির চাপ কম, রফতানির প্রবৃদ্ধি ভালো, লেনদেন ভারসাম্য অনুকূলে রয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভালো, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার উচ্চমুখী, আর্থিক ঘাটতিও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য নিম্নপর্যায়ে রয়েছে। অন্যদিকে বিনিয়োগ নিয়ে উত্কণ্ঠা রয়েছে। ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ জিডিপির ২২ শতাংশের মধ্যে আটকে রয়েছে। তাছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও ধীরগতি লক্ষণীয়। স্বল্প পরিসরে বাজেটের ভালো দিক ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলাটা কঠিন। তবে ভালো দিক হচ্ছে, বেশকিছু খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। যেমন— শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ গতবারের চেয়ে শতকরা ৩৫ ভাগ বেড়েছে। স্বাস্থ্য খাতে গতবারের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১৮ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতেও বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এবং আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় এ বরাদ্দ এখনো অনেক কম। তবুও বাড়ানোর প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। এছাড়া প্রবৃদ্ধির হার, বিনিয়োগ, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি, সম্পদ সঞ্চালন ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে লক্ষ্যমাত্রাগুলো ধরা হয়েছে সেগুলো যদি অর্জন করা যায়, তাহলে নিঃসন্দেহে আমরা অর্থনীতিতে অনেক প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করব। কিন্তু এগুলো কীভাবে অর্জন করব সেটিই হবে চ্যালেঞ্জ। উন্নয়ন ব্যয় ও অনুন্নয়নের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চতর প্রবৃদ্ধির জন্য উন্নয়ন ব্যয় বাড়াতে হবে। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে উন্নয়ন ব্যয়ের চেয়ে অনুন্নয়ন ব্যয় বেশি দেখা যাচ্ছে। ব্যয় মেটানোর জন্য অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উভয় উত্স থেকেই সম্পদ আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা পূরণ করাটাও চ্যালেঞ্জিং।

অনেকেই অর্থ সংস্থানের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। বিষয়টি সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?

কয়েক বছরের ধারাবাহিকতা দেখে মনে হচ্ছে, বাজেটে কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কঠিন হবে। নতুন করদাতা ও করের ক্ষেত্র বৃদ্ধির মাধ্যমে করের জাল ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি না করলে কর-জিডিপি হার বাড়ানো সম্ভব নয়। আমাদের অর্থনীতির আকার যেভাবে বাড়ছে, সেখানে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সঞ্চালন বাড়াতে হবে। এজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অবকাঠামো ও মানবসম্পদ প্রয়োজন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন প্রয়োজন। তাদের লোকবলও বাড়াতে হবে। কর আহরণের জন্য নতুন করদাতা এবং নতুন নতুন খাত খুঁজে বের করতে হবে। যারা এরই মধ্যে কর দিচ্ছেন, তাদের ওপরই আরো কর দেয়ার চাপ বাড়ছে। কর দেয়াকে জনগণ যাতে বোঝা না ভাবে বরং এটিকে যাতে তার নাগরিক দায়িত্ব মনে করে, সে ব্যাপারে কর বিভাগকে কাজ করতে হবে। জনগণকে হয়রানির মধ্যে না ফেলে সহযোগিতার মনোভাব থাকলে আমার মনে হয়, কর আহরণ আরো বাড়বে।

আমাদের অনুন্নয়ন ব্যয় দিন দিন বাড়ছে। এর ফলাফল কী?

অনুন্নয়ন ব্যয় কর্মসংস্থান এবং সামগ্রিক উন্নয়নে তেমন ভূমিকা রাখে না। কিন্তু মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ ফেলে, যা প্রকারান্তরে মানুষের জীবনযাত্রার মানের ওপর প্রভাব ফেলে। অনুন্নয়ন ব্যয় করতে হয় নিজস্ব অর্থায়নে। সুতরাং সরকারকে প্রায়ই ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। এতে সরকারের দায়দেনার পরিমাণ বেড়ে যায়। সুদাসলে সেগুলো ফেরত দিতে হয়।

ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে বাজেটের সমন্বয় রয়েছে কী?

পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জনের একটি হাতিয়ার হলো বাজেট। তাই দুটোর মধ্যে সমন্বয় না থাকলে মধ্যমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন দুষ্কর হয়ে যায়। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যে উদ্দেশ্য ও অর্থায়ন-বিষয়ক লক্ষ্যগুলো থাকে, সেগুলো যত বাস্তবমুখী হবে, তার অর্জন তত ভালো হবে। নিয়মিতভাবে প্রতি তিন মাস পর অর্থমন্ত্রী সংসদে বাজেট বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরলে বাজেট বাস্তবায়নে আরো গতিশীলতা আসবে। সেটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণেও সহায়ক হবে।

২০১৬ সালে যে সময়ে বাজেট প্রস্তাব করা হলো, এ সময়ে আমাদের সামনে এসডিজি বাস্তবায়ন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার শুরু এবং ভিশন-২০২০ বাস্তবায়নের বিষয় আছে। এগুলোর সঙ্গে প্রস্তাবিত বাজেটের সম্পৃক্ততা কতখানি?

হ্যাঁ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সামনে একটি বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতও রয়েছে। একদিকে আমরা নিজেদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রাগুলো পূরণ করব। পাশাপাশি বৈশ্বিকভাবেও আমরা যে প্রতিজ্ঞা করেছি, সেগুলো বাস্তবায়নের কাজও শুরু করতে হবে। ২০১৫ সালে বিশ্ব সম্প্রদায় অনেক অঙ্গীকার করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন বা এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা এবং জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত জাতিসংঘের ঘোষণা বা কপ২১। পাশাপাশি ২০১১ সালে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য ১০ বছর মেয়াদি যে ইস্তাম্বুল প্ল্যান অব অ্যাকশন করা হয়েছিল, তারও একটি মধ্যমেয়াদি মূল্যায়ন হয়ে গেল এ বছরের মে মাসে। এর সবগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থ যুক্ত। এগুলো পূরণ হলে আমরা দ্রুত এগিয়ে যাব।

কীভাবে?…

যেমন ধরুন, এসডিজিতে যে ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা ও ১৬৯টি টার্গেট আছে, সেগুলো বাস্তবায়নে ব্যাপক প্রস্তুতি প্রয়োজন। আমাদের হাতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় রয়েছে। কিন্তু কাজের পরিসরও অনেক বড়। তাই প্রাধিকার ঠিক করে কাজ শুরু করতে হবে। সেক্ষেত্রে আমাদের বাস্তবতা অর্থাত্ আমাদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য কোনগুলো, সম্পদ সঞ্চালনের অবস্থা কী, মানবসম্পদের অবস্থা কী, এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এসডিজি বাস্তবায়নের প্রাধিকার ঠিক করতে হবে। তাই এসডিজির লক্ষ্যগুলো আমাদের জাতীয় পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে বা সমান্তরালভাবে এ কাজগুলো করলে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। পরিকল্পনা কমিশন দেখিয়েছে যে, এসডিজির কোন কোন লক্ষ্যগুলো আমাদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এরই মধ্যে রয়েছে। পুরোপুরিভাবে এসব লক্ষ্য জাতীয় পরিকল্পনায় একীভূত করতে পারলে বাস্তবায়ন সহজ হবে। তবে এজন্য প্রয়োজন বিপুল পরিমাণ অর্থের। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সংস্থা এর অর্থায়নে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তার সঙ্গে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের অনেক তফাত রয়ে যাচ্ছে। তার মানে, প্রতিটি দেশের জন্যও বরাদ্দ কম হবে। কাজেই অভ্যন্তরীণ সম্পদের ওপর আমাদের অনেকখানি নির্ভর করতে হবে। তাই আবারো ঘুরেফিরে এক জায়গায়ই ফেরত আসতে হচ্ছে। তা হলো সম্পদ সঞ্চালনে আমাদের দক্ষতা আরো বাড়াতে হবে এবং বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি সত্ত্বেও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে না। বেসরকারি বিনিয়োগ না বাড়লে সরকারের পরিকল্পনাগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন হবে?

বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ার জন্য একদিকে যেমন দরকার গ্যাস, বিদ্যুত্, রাস্তাঘাট অর্থাত্ অবকাঠামোর উন্নয়ন, তেমনি দরকার সামনের দিনগুলো সম্পর্কে মধ্যমেয়াদে স্বচ্ছ ধারণা, তাদের বিনিয়োগের ফলাফল সম্পর্কে পরিষ্কার পথরেখা। বেসরকারি বিনিয়োগ না বাড়লে অর্থনীতিতে গতিময়তা ব্যাহত হয়, শিল্পায়ন, সেবা খাতের প্রসার, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন ইত্যাদি সম্ভব হয় না। তাই বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকা উচিত। অবকাঠামোগত দুর্বলতা, ব্যাংকের সুদের হার, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা ইত্যাদি সমস্যার কথা সবসময়ই বলা হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত সমস্যাগুলো কি, বিনিয়োগকারীরা কি ভাবছেন, সেটি বোধ হয় আমরা এখনো বুঝতে পারছি না।

জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপর হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। এর যথাযথ প্রভাব কি অর্থনীতিতে পড়ছে?

অর্থনীতির আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং কর্মচাঞ্চল্য বাড়বে, জিডিপির আকারও বাড়বে। কিন্তু জিডিপির প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে কিনা এবং প্রবৃদ্ধির সঙ্গে মানুষের জীবনের মান উন্নত হলো কিনা, সেটিই মূলত দেখতে হবে। প্রবৃদ্ধি বা জাতীয় আয় বাড়লেই সবার আয় বাড়বে এমনটি নয়। আয়বৈষম্য কমে যাবে, সেটিও নয়। বৈশ্বিকভাবেও দেখা গেছে, যখন সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এমডিজি বাস্তবায়ন করা হলো, তখন ২০০০ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী এক বিলিয়নের মতো লোকের দারিদ্র্য বিমোচন করা গেছে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, আয়বৈষম্য কমেনি। এ উদ্বেগ আমাদের জন্যও প্রযোজ্য। সম্পদের পুঞ্জীভবন উপরের দিকে হচ্ছে। অতি দরিদ্রদের দারিদ্র্যসীমার উপরে তুলে আনতে হবে। অর্থাত্ বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুপেয় পানি, পয়োনিষ্কাশন ইত্যাদি সুবিধা সবাই পাচ্ছে কিনা এবং কতটুকু পাচ্ছে, এগুলোই দেখার বিষয়। দেখতে হবে, মানুষের মৌলিক সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে গুণগত মান বাড়ছে কিনা। এগুলো নিশ্চিত করতে না পারলে প্রবৃদ্ধি যতই বাড়ুক, তাতে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কোনো লাভ হবে না। সেজন্য প্রবৃদ্ধির গুণগত মানের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য একদিকে যেমন প্রয়োজন দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অন্যদিকে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের পরিসর ও আর্থিক বরাদ্দ বাড়ানো। সক্ষম প্রতিটি ব্যক্তিই যেন শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ করে আয় করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে, সে লক্ষ্যে বাজেটে বরাদ্দ রাখা উচিত।

সরকারের সার্বিক দক্ষতা কীভাবে বাড়ানো যায়?

বাজেট বাস্তবায়নে দক্ষতা বাড়ানোর কথা অর্থমন্ত্রী নিজেও প্রায়ই বলে থাকেন। কিন্তু তার প্রতিফলন আমরা খুব একটা দেখি না। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ছাড়া দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব নয়। দক্ষ জনবল, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রশাসন, কাজের মান অনুযায়ী কর্মকর্তাদের মূল্যায়ন ইত্যাদি সরকারের সামগ্রিক দক্ষতা বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাজেটে বেশ কয়েকটি সংস্কার পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো যত দ্রুত বাস্তবায়ন হবে, ততই দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এগোনো যাবে।

সাধারণ মানুষের ওপর ভ্যাটের বোঝা বাড়ছে। এটিকে কীভাবে দেখেন?

অভ্যন্তরীণ সম্পদ সঞ্চালনের জন্য করের আওতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। তবে তা এমন হতে হবে, যাতে সেটি প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা হয়। অর্থাত্ যার যতটুকু সামর্থ্য রয়েছে, সে অনুযায়ী কর দেবে। মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট হচ্ছে পরোক্ষ কর এবং তা সবাইকে একই হারে দিতে হয়। সেজন্য এটি গরিবের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। ভ্যাট যেহেতু ভোক্তা ও ক্রেতার ওপরই এসে বর্তায়, তাই এটি যুক্তিশীল হারে প্রয়োগ করা উচিত।

ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম নিয়ে কিছু বলুন…

এটি নিয়ে নতুন করে আর বলার নেই। দুঃখজনক হচ্ছে, অনিয়ম বন্ধ করার সক্রিয় উদ্যোগও চোখে পড়ছে না। কয়েক বছর আগেও বিভিন্ন সংস্কারের পর ব্যাংকিং খাতে এক ধরনের গতিময়তা ফিরে আসতে শুরু করেছিল। কিন্তু এখন একদিকে কু-ঋণের পরিমাণ বাড়ছে, অন্যদিকে বড় বড় অনিয়ম ধরা পড়ছে। তার ওপর রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটাতে সরকার টাকা ঢালছে। এ বছরের বাজেটেও ২ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য। এগুলো কোনো টেকসই সমাধান নয়। ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের জন্য একটি কমিশন গঠন করার কথা আমরা অনেক দিন থেকেই বলছি। এ কমিশন আর্থিক খাতের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে এর উন্নয়নের জন্য সুপারিশ করবে। এ খাতের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা ও সুশাসন। ব্যাংকগুলোর পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে করতে হলে প্রযুক্তির ব্যবহার আরো বাড়াতে হবে। সেসঙ্গে প্রযুক্তিগত অপরাধ বন্ধ করার জন্যও প্রস্তুতি থাকতে হবে।

 

শ্রুতিলিখন: হুমায়ুন কবির