CPD-CMI study on Local Government Financing cited in the Editorial published in The Daily Ittefaq, on Wednesday, 23 October 2013.
দরকার শক্তিশালী স্থানীয় সরকার
আর কে চৌধুরী
স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও গ্রামীণ জনগণের উন্নয়নের জন্য স্থানীয় সরকার দরকার। কিন্তু আমাদের দেশে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হলেও আজ পর্যন্ত তা কার্যকর হয়ে ওঠেনি। এছাড়া গত ৪০ বছরে বাংলাদেশের গ্রামীণ পর্যায়ে আশানুরূপ উন্নয়ন হয়নি। স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশে যত উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে তার বেশিরভাগই শহরকেন্দ্রিক। গ্রামীণ এলাকার মানুষের জন্য তেমন কোনো কাজ করা হয়নি। প্রশাসনগুলোতে নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকলে কাজের সুযোগ বেশি হয়। কিন্তু বর্তমানে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ওপর একজন অনির্বাচিত প্রশাসককে কর্তৃত্ব দেওয়ায় গত ৪ বছরে বাংলাদেশের তেমন আশানুরূপ উন্নয়ন লক্ষ করা যায়নি। কোনো এলাকাকে পৌরসভা ঘোষণা করা হলে সে এলাকার শুধু বিত্তবানদের উন্নয়ন বেশি হয়। সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, ভূমিহীন—এরা এর সুফল পায় না। তাই শুধু পৌরসভা বাড়ালেই চলবে না তাদের গুণগতমানও নিশ্চিত করতে হবে। দেশের ৯টি পৌরসভার ৬০ শতাংশ মানুষ তাদের পৌরসভার সেবার মান নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। দুটি সিটি করপোরেশনের ৬৫ ভাগ মানুষের একই অভিব্যক্তি। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও সিএমআইয়ের যৌথ গবেষণায় এ তথ্য ফুটে উঠেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান দুটি বাজিতপুর, তারাব, কসবা, কুমারখালী, নবীগঞ্জ, ধুনট, আরানি, মঠবাড়িয়া, হারাগাছ পৌরসভা এবং নারায়ণগঞ্জ ও খুলনা সিটি করপোরেশনের সেবাগ্রহীতাদের ওপর জরিপ চালিয়ে এ তথ্য পেয়েছে। গবেষণা জরিপের আওতাধীন পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলোর ৬৭ শতাংশ সেবাগ্রহীতা সেবার মানকে খুবই খারাপ বলে অভিহিত করেছেন। ৬৩ শতাংশ সেবাগ্রহীতা পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা জানিয়েছেন। ৯২ শতাংশ সেবাগ্রহীতা এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে মেয়র, কাউন্সিলর ও অন্য কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতার কথা বলেছেন। বেসরকারি দুটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপে দেশের স্থানীয় সরকারগুলোর হতশ্রী অবস্থা ফুটে উঠেছে। দেশের সংবিধানে স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের আগে যে নির্বাচনী ওয়াদা ঘোষণা করে তাতে স্থানীয় সরকারকে জোরদার করার কথা বলা হয়। কিন্তু প্রতিটি সরকার স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার বদলে ঠুঁটো জগন্নাথ করে রাখার চেষ্টা করায় তাদের পক্ষে গণমানুষের সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। সাধ ও সাধ্যের দূরত্ব বিড়ম্বনা সৃষ্টি করছে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারিত না থাকায় শুধু স্বাক্ষরদানে সক্ষম এমন লোকজনও নির্বাচনে অংশ নিয়ে টাকা ও পেশিশক্তির জোরে জিতে আসার কৃতিত্ব দেখাচ্ছে। সত্ ও যোগ্য ব্যক্তিরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিতে উত্সাহী হচ্ছেন না। স্থানীয় সরকারগুলোর ক্ষমতার আওতা সীমাবদ্ধ হওয়ায় তাদের নানামুখী সমালোচনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। স্থানীয় সরকারব্যবস্থা শক্তিশালী না হওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোই দায়ী—এমনটিই মনে করেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, স্থানীয় সরকারের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, এলাকার উন্নয়নে তহবিল গঠন ও ব্যয়ের স্বাধীনতা এবং প্রশাসনিক খবরদারি থেকে মুক্ত হয়ে স্বতন্ত্রভাবে কাজ করার বাস্তবতা কোনোটিই যথাযথভাবে নেই। সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত স্থানীয় সরকারকে জাতীয় রাজনীতির আনুগত্য করতে হয়। প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী-মাস্তানদের দাপটে প্রতিষ্ঠানটি রুগ্ণ হয়ে থাকে। অথচ স্থানীয় উন্নয়নের জন্য বিশেষজ্ঞরা বারবারই ওয়ার্ড বা ইউনিয়নভিত্তিক সরকার প্রবর্তনের ওপর জোর দিয়ে আসছেন। স্থানীয় সরকারের কাজে কেন্দ্রীয় সরকার বা আমলাতন্ত্রের অযাচিত হস্তক্ষেপ কমানো গেলে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের সুবিধা তৃণমূল জনগোষ্ঠীর কাছে অনায়াসে পৌঁছানো সম্ভব হতো। এসবের জন্য স্থানীয় সরকার আইনের সংশোধন করা জরুরি। সরকারের উচিত নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালন করে গণতন্ত্রকে বিকশিত করার স্বার্থে স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে আরো স্বাধীন ও কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া। আমার মতে, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হলে সত্, সুশিক্ষিত ও নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিদের নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। দুর্বৃত্তপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা যাতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। এর পাশাপাশি নজর দিতে হবে স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়নেও। ঢাকা