Published in Amar Desh on Saturday, 17 January 2015.
ডেস্ক রিপোর্ট
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে দেশের অর্থনীতি আরও নাজুক হবে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। দেখছেন অশনি সঙ্কেত। তারা বলছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ প্রয়োজন। আলোচনা বা সংলাপ যত দেরিতে হবে পরিস্থিতি ততই নাজুক হবে।
বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও ইইউ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, দেশের অর্থনীতির জন্য হরতাল-অবরোধ নারকীয়। ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা করেছেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরাও। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মীর্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি জাতীয় অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত। কারণ ইতিমধ্যে পরিবহন ও জাতীয় উৎপাদন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ব্যাংক ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পুঁজিবাজার, পণ্যবাজারসহ সার্বিক অর্থনীতি ধসে পড়ার উপক্রম। তিনি বলেন বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় দুই মেরুতে দাঁড়িয়ে থাকা দুই দলের কাছে। কিন্তু তারা তো যার যার মত ও পথে অনড়। এ অবস্থায় সঙ্কট সামনে আরও ঘনীভূত হবে বলে মনে হচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, অবরোধ-হরতাল দীর্ঘায়িত হলে ক্ষতি বাড়বে। আর সঙ্কুচিত হলে ক্ষতি কমবে। এটাই স্বাভাবিক। দেশের সার্বিক অর্থনীতি এখন সঙ্কটের মধ্যে আছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা- সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশে সংঘাত কমছে না। যেভাবেই হোক ৫ই জানুয়ারি একটা নির্বাচন হয়েছে। এটা সত্য, তবে সত্য তিন প্রকার- আইনি সত্য, রাজনৈতিক সত্য ও নৈতিক সত্য। যার কোনটিই হয়ে যাওয়া নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নিজেদের সমস্যা নিজেদেরই সমাধান করতে হবে। এখানে বিদেশীদের ডাকার দরকার নেই। দেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ উল্লেখ করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, আগে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা হুঁশিয়ারি-হুঙ্কার ছাড়লেও বর্তমানে একই শব্দ ও বাক্য ব্যবহার করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ ব্যক্তিরা। বিষয়টি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি ও অশনি সংকেত। তবে যে খেলা শুরু হয়েছে তাতে কেউ না-ও জিততে পারে বলে ইঙ্গিত করেন তিনি। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা এক কথায় খারাপ। ঢাকার সঙ্গে সব জেলার পণ্যপরিবহন সংযোগ বিচ্ছিন্ন। জেলা শহরে গড়ে ওঠা দুধের খামারের দুধ সরবরাহ বন্ধ থাকায় খামারেই দুধ নষ্ট হচ্ছে। একইভাবে সব পণ্য উৎপাদনস্থলে থেমে আছে। মুভ করতে পারছে না। এছাড়া বিদেশী বিনিয়োগ পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কারণ টানা অবরোধ ও হরতালে এদেশে থাকা বিদেশী নাগরিকদের সতর্কভাবে চলা ফেরার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত বলেন- অবরোধে শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশে এক জেলা থেকে অন্য জেলার সংযোগ বিচ্ছিন্ন। এতে বাস্তবতার সঙ্গে অজুহাত মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে বহুগুণ। এটাকে ‘সিজার ইফেক্ট’ (যেতেও কাটে আসতেও কাটে) উল্লেখ করে অর্থনীতি সমিতির সভাপতি বলেন, অবরোধে দৈনিক ক্ষতি কমপক্ষে ৩৫০০ কোটি টাকা হবে। এছাড়া আরও অনেক ক্ষতি হচ্ছে যার মূল্য এ মুহূর্তে নিরূপণ করা সম্ভব নয়। অযৌক্তিক অবরোধে অমেরামতযোগ্য ক্ষতির কথা উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক এ চেয়ারম্যান আরও বলেন, এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। যাদের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৮৩%। তিনি বলেন, দিনে এনে দিনে খাওয়া এসব মানুষের প্রতি সরকারও তাকায় না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকিং মূলত ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। যেহেতু দেশ অচল, ব্যবসা বন্ধ; বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ব্যাংকিং লেনদেনে। আর অর্থনীতি পুরোটাই যখন কোন না কোনভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই এর সরাসরি প্রভাব পড়বে অর্থনীতির উপর। সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতি বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে বলে জানান তিনি।
কৃষি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ জানান, ব্যাংকের খুব বেশি ক্ষতি হবে না। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রাহকরা। কারণ, ব্যাংক লেনদেন করতে না পারলে টাকা থেকে যাচ্ছে। কিন্তু গ্রাহক সময়মতো তার টাকা পাচ্ছে না। সে কারণে গ্রাহক-ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।