Published in Samakal on Wednesday, 10 June 2015.
ভারতের ঋণে আমদানির শর্ত শিথিল চায় বাংলাদেশ
খান এ মামুন
ভারতের নতুন ২০০ কোটি ডলার ঋণের সমঝোতা স্মারকে আগের দেওয়া ঋণের মতোই প্রকল্প বাস্তবায়নে সেদেশ থেকে কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানির শর্ত রয়েছে। তবে পরবর্তী দ্বিপক্ষীয় আলোচনাগুলোতে বাংলাদেশ ওই শর্ত শিথিলের প্রস্তাব দেবে। চলমান ঋণের আওতায় প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারত থেকে বেশিরভাগ উপকরণ আমদানির শর্ত রয়েছে। অবশ্য নতুন ঋণের সুদের হার ও ঋণ পরিশোধের শর্ত আগের মতোই নমনীয় থাকছে। এ ছাড়া এ ঋণের আওতা প্রকল্প মনোনয়ন নিয়ে বসবেন দুই দেশের কর্মকর্তা।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা জানান, ভারতের নতুন লাইন অব ক্রেডিট বা ঋণসীমার আওতায় সাতটি খাতের আওতায় প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে, রেল, সড়ক, বিদ্যুৎ, নৌ পরিবহন, স্বাস্থ্য, তথ্যপ্রযুক্তি ও শিক্ষা। বেশিরভাগ প্রকল্প ‘কানেকটিভিটি’ বা সংযোগকেন্দ্রিক হবে। ইআরডি ২২টি প্রকল্পের একটি তালিকা করেছে। এ তালিকা নিয়ে দু’দেশের কর্মকর্তারা বৈঠক করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান সমকালকে বলেন, নতুন ঋণে গ্রান্ট এলিমেন্ট অনেক বেশি। এসব দিক বিবেচনায় এটি একটি ভালো ঋণ। ঋণের অর্থ পরিশোধে বাংলাদেশ দীর্ঘ মেয়াদে সময় পাবে। অন্য অনেক ঋণের তুলনায় সহজ শর্ত হওয়ায় ঋণটি অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
২০১০ সালে বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় ভারত সরকার। পরবর্তী সময়ে ২০ কোটি ডলার অনুদান হিসেবে ঘোষণা করে। বর্তমানে ৮০ কোটি ডলার ঋণের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার ছাড় করেছে দেশটি। এ ছাড়া প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে ওই ঋণসীমা এখন হবে ৮৬ কোটি ডলারের কিছুটা বেশি। বাড়তি অর্থ ভারত দিতে রাজি হয়েছে। অনুদানের ২০ কোটি ডলারের মধ্যে ১৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার ছাড় হয়েছে। অনুদানের অর্থ পদ্মা সেতু প্রকল্পে ব্যয় করা হচ্ছে। চলমান ঋণের আওতায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। রেলের ওয়াগন এবং বাস ক্রয়সহ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। তবে অবকাঠামোকেন্দ্রিক প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে ধীরগতি রয়েছে।
প্রথম ঋণের আওতায় অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে সেদেশ থেকে ৭৫ শতাংশ পণ্য ও সেবা আমদানি করার শর্ত রয়েছে। আর পূর্ত কাজে শর্ত হলো, ৬৫ শতাংশ ভারতীয় পণ্য আনতে হবে। এতে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়াসহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এমনও দেখা যায়, বাংলাদেশে সহজলভ্য ও তুলনামূলক দাম কম এমন পণ্য ভারত থেকে নিতে হচ্ছে। এ কারণে নতুন ঋণে আমদানির শর্ত প্রত্যাহার না করা গেলেও বর্তমানের চেয়ে শিথিল করার প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ।
গবেষণা সংস্থা সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মতে, ভারতের নতুন ঋণে আমদানির শর্ত না থাকলে ভালো। ঋণের ক্ষেত্রে এ ধরনের শর্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে জটিলতা তৈরি করে। নতুন ঋণে স্বাধীনভাবে আমদানির সুযোগ থাকলে বাংলাদেশের জন্য তা লাভজনক হবে। সম্প্রতি সরকারের বাজেট পেশ পরবর্তী সিপিডির সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এমন মত দেন।
ভারতীয় ঋণের অর্থ ছাড় করে সেদেশের এক্সিম ব্যাংক। চলমান ঋণে প্রথমে সুদহার ধরা হয় ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। পরে তা কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়। প্রথম ৫ বছরে ঋণ পরিশোধ অব্যাহতিসহ ২০ বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। নতুন ঋণেও সুদহার ও পরিশোধসূচি একই থাকছে বলে জানা গেছে।
ইআরডি সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন সমকালকে বলেন, বাংলাদেশে যেসব পণ্য পাওয়া যায় সেগুলো স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করার প্রস্তাব দেবেন তারা। এতে প্রকল্প বাস্তবায়ন সহজ হবে। প্রকল্প গ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি বলে তিনি জানান। সূত্র জানায়, নতুন ঋণে অন্তর্ভুক্তির জন্য ইআরডি বিদ্যুৎ খাতে সবচেয়ে বেশি অর্থ চেয়েছে। রেলের চারটি প্রকল্প এ প্রাথমিক তালিকায় স্থান পেয়েছে।