Published in Dainik Dinakal on Monday, 8 June 2015.
২০০ কোটি ডলার ঋণের নামে বাংলাদেশ থেকে লুটের ফন্দি
চুক্তি অনুযায়ী নির্মাণসামগ্রী কিনতে হবে ভারত থেকে
বাবুল খন্দকার, দিনকাল : বাংলাদেশ থেকে ঋণের নামে অর্থ লুটের ফন্দি করেছে ভারত। বাংলাদেশের সাথে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার (প্রায় ১৫ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা) ঋণ চুক্তি করেছে ভারত। স্বাক্ষরিত চুক্তির শর্ত হিসেবে চলমান ঋণের মতো নতুন প্রকল্পগুলোর জন্য অন্তত ৭৫ শতাংশ পণ্য ও সেবা অবশ্যই ভারত থেকে আমদানি করতে হবে। এ সকল পণ্য ও সেবার উৎপাদন প্রক্রিয়া হবে ভারতেই। অর্থনীতিবিদের মতে এটা ৭৫ শতাংশ লিখিত হলেও শেষ পর্যন্ত ৯০ শতাংশই চলে যাবে ভারতে। কিন্তু এর শতভাগ সুদসহ আসল পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। শর্তের চুক্তি অনুযায়ী নির্মাণের জন্য মাটি, ইট-বালু-সিমেন্ট, কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ও সেবা ভারত থেকে কিনতে হবে। পণ্য ভারত থেকে কেনাও বাধ্যতামূলক। ফলে বাংলাদেশ আন্তর্জাকিত বাজার থেকে যে পণ্য কম দামে কিনতে পারতো তা সম্ভব হবে না।
ভারত যে পণ্যের যে দাম নির্ধারণ করে দেবে তাই গ্রহণ করতে হবে। এমনকি বাংলাদেশে যে সকল কাঁচামাল উৎপাদন করা হয় তাও ভারত থেকে ভারতীয় দামে ক্রয় করতে হবে। চুক্তির ফলে ঋণের টাকায় বাংলাদেশে নেয়া প্রকল্পগুলোতে ভারতের প্রায় ৫০ হাজার লোককে নিয়োগ দিতে বাধ্য থাকবে ফলে বাংলাদেশের জনগণ এ থেকে বঞ্চিত হবে। অর্থনীতিবিদের মতে, এটা এক ধরনের ডাকাতির মতো। বিশেষ করে যদি বাংলাদেশে এক ব্যাগ সিমেন্টের দাম হয় ৫০০ টাকা ভারত ঐ সিমেন্টর দাম নির্ধারণ করবে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। যা চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ তা কিনতে বাধ্য থাকবে। : এর আগে ভারত বাংলাদেশকে যে ঋণ দিয়েছে তার অধীনে যে সকল প্রকল্প শুরু করা হয় সে সকল প্রকল্পের ব্যয় কয়েক শত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
সেন্টার ফর ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মনিত ফেলো বিশিষ্ট অর্থনীতিবীদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য তার বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও ভারতের সাথে চুক্তির শর্তগুলোর সমালোচনা করে বলেছেন, আন্তর্জাতিক ঋণের ক্ষেত্রে এই রকম শর্ত থাকে না। এই শর্তের ফলে বাংলাদেশের সামনে বিকল্প কোনো রাস্তা খোলা থাকবে না।
ঋণের ক্ষেত্রে সাধারণত : যে সংস্থা ঋণ দেয় তারা প্রকল্পগুলোতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকে, যাতে টেন্ডার থেকে শুরু করে অন্যান্য বিষয়ে কোনো অনিয়ম থাকে কিনা তা দেখতে। আর প্রকল্পের উপাদান ক্রয়ের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতার মাধ্যমে ক্রয় করা হয় । এর ফলে প্রকল্প খরচ কম থাকবে। কিন্তু যে শর্তে চুক্তি করা হয়েছে তার ফলে বাংলাদেশের সামনে বিকল্প কোনো রাস্তা খোলা নেই। ২০০ কোটি ডলারের ওই ঋণ চুক্তির আওতায় রেলের তিন প্রকল্পে ব্যয় হবে ৪৯ কোটি ডলার।
সড়ক, নৌ, রেলপথ, তথ্য প্রযুক্তি ও বিদ্যুৎ খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে তেরটি প্রকল্প বাস্তবায়নে দুই দেশের মধ্যে এ চুক্তি হয়। নির্বাচিত তের প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩৭ কোটি ডলার। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ থেকে আসা ২০০ কোটি ডলারের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার দেবে অবশিষ্ট ৩৭ কোটি ডলার। নতুন ঋণের সুদের হার ও শর্ত চলমান ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণের মতোই হবে। সে হিসেবে নতুন ঋণের সুদহার হবে ১ শতাংশ। এর আগে ২০১০ সালে ভারত সরকার বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেয়।