Published in Jugantor on Wednesday, 10 June 2015.
মোদির সফরে অবসান হোক সব বৈরিতার
আবদুল লতিফ মন্ডল
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৬ ও ৭ জুন বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফর শেষে নিজ দেশে ফিরে গেছেন। ২০১৪ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পর দলটি নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির এটিই ছিল প্রথম বাংলাদেশ সফর। তার এ সফরকে সর্বাত্মকভাবে সফল করতে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারবিরোধী দল বিএনপি। বিএনপি এবং জাতীয় সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে স্বাগত জানানোয় এবং প্রশাসন থেকে রেকর্ড সৃষ্টিকারী নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অন্যান্য কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে গ্রহণ করায় নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে নরেন্দ্র মোদির এ সফর।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এ সফরে বাংলাদেশ-ভারত পারস্পরিক সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৯টি চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল- দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি, অভ্যন্তরীণ নৌ-ট্রানজিট ও বাণিজ্য প্রটোকল নবায়ন, পণ্যের মান নির্ধারণে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এবং ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডসের (বিআইএস) মধ্যে সহযোগিতা চুক্তি, ঢাকা-শিলং-গৌহাটি বাস সার্ভিস চুক্তি ও প্রটোকল, কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা বাস সার্ভিস চুক্তি ও প্রটোকল, মানব পাচার প্রতিরোধ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক, বাংলাদেশকে ২০০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক, চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ব্যবহারের জন্য সমঝোতা স্মারক, আখাউড়ায় ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইথের বিষয়ে দুই দেশের দুই কোম্পানির মধ্যে চুক্তি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর শেষে প্রকাশিত হয়েছে যৌথ ঘোষণা। ভারত ও বাংলাদেশের দুই প্রধানমন্ত্রীর এ যৌথ ঘোষণায় সমন্বিত উপায়ে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে দুই দেশ ও এ অঞ্চলের সামগ্রিক সমৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দুই দেশ সড়ক, রেল ও নৌপথে অবাধে পণ্য ও মানুষের যাতায়াত সুগম করতে একটি বহুমাত্রিক পরিবহন চুক্তির জন্য আলোচনা শুরু করবে। এজন্য গঠন করা হয়েছে একটি টাস্কফোর্স। যৌথ ঘোষণায় নিরাপত্তা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, সামুদ্রিক অর্থনীতি, মানুষে মানুষে যোগাযোগ, আঞ্চলিক ও উপআঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়গুলোও উঠে এসেছে। পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং পানিবণ্টনসহ অভিন্ন নদীর পানি ব্যবস্থাপনা সমন্বিত উপায়ে সমাধানের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন দুই প্রধানমন্ত্রী। এজন্য তারা উন্নয়ন সহযোগিতার রূপরেখা চুক্তির আলোকে অভিন্ন অববাহিকা ব্যবস্থাপনা অনুসরণের কথা বলেছেন। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে অতুলনীয় সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন দুই প্রধানমন্ত্রী। তারা সব ধরনের উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে তাদের দ্ব্যর্থহীন ও আপসহীন অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এর পাশাপাশি তারা সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও সংগঠনের ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে তথ্য বিনিময়ে সহযোগিতারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এক দেশের ভূখণ্ড যাতে অন্য দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত না হয়, সে ব্যাপারে তারা অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রথম বাংলাদেশ সফর নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংগঠন, ব্যবসায়ী সংগঠন, রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং বিশেষজ্ঞরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সরকারবিরোধী দল বিএনপি নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেছেন, অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে তাদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এদিকে বিএনপির একজন প্রথম সারির নেতা ৭ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিবিসির এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এ সফরে জনগণের সব ধরনের প্রত্যাশা পূরণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এটি ইতিবাচক। তবে তিনি বলেছেন, এ সফরে সীমান্ত হত্যা বন্ধে নরেন্দ্র মোদি নিষেধাজ্ঞা এবং তিস্তার পানির ব্যাপারে একটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়ে যেতে পারতেন। যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ অন্যান্য প্রাপ্তি কী হবে, তা জানানো দরকার ছিল। জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং সীমান্ত চুক্তি বলবৎ করার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে স্বাগত জানালেও তার সফর শেষে হতাশা প্রকাশ করেছে। দলটির ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল হোসেন বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কার্যকর কোনো সহায়ক পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি। সার্বিকভাবে এ সফর থেকে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় তারা হতাশ হয়েছেন। জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। মোদির ঢাকা সফর এবং এ সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রাপ্তি হতাশাব্যঞ্জক বলে মনে করেন বাম ঘরানার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তাদের মতে, নরেন্দ্র মোদির এ সফরে তিস্তা চুক্তি না হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। বাম নেতাদের মধ্যে যারা এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। এর আগে ৬ জুন রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বামপন্থী সংগঠনগুলো নরেন্দ্র মোদিবিরোধী বিক্ষোভের চেষ্টা চালায়। তিস্তাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়, রামপালের বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে এ বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদদের মতে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে ভারত ও বাংলাদেশের প্রাপ্তির বিশ্লেষণে লাভের পাল্লাটা ভারতের দিকে অনেকগুণ বেশি ভারি। নতুন চুক্তিগুলোর মাধ্যমে ট্রানজিট সুবিধা উন্মুক্ত হওয়ায় তার ফল ভোগ করবে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো। এ অঞ্চলে পণ্য পরিবহনে ভারতের ব্যয় কমে যাবে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি। এছাড়া সময় লাগবে আগের তুলনায় ২৫ শতাংশ বা চার ভাগের এক ভাগ। আর যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হল, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় যে রাজ্যগুলোয় ভারত পণ্য নিয়ে যাবে, সেসব রাজ্য এতদিন ছিল বাংলাদেশের বহু শিল্পপণ্যের বাজার। সেই বাজার সংকুচিত হয়ে যাবে, সম্ভাবনা বিনষ্ট হবে। এসব রাজ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বংলাদেশের কাছ থেকে স্থল ট্রানজিট আদায় ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ। ভারতের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার কানেকটিভিটি নিয়ে আমাদের সরকারও সোচ্চার হয়েছে। তাই হয়তো ৭ জুন যুগান্তরের হেডলাইন ছিল কানেকটিভিটিতেই সরব হাসিনা-মোদি।
দ্বিতীয়ত, পানি আমাদের জীবন-মরণের সমস্যা। তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টনের প্রশ্নে এবারও সুস্পষ্ট কোনো অগ্রগতি নেই। বাংলাদেশের মানুষ, বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলার মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিল যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সফরকালে বাংলাদেশের জন্য পানির ন্যায্য হিস্যাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। তা হয়নি। কবে এরূপ চুক্তি হবে তাও অনিশ্চিত। এ ক্ষেত্রে তিস্তা ইস্যুর সুন্দর সমাধানের যে আশ্বাসটুকু নরেন্দ্র মোদি দিয়েছেন, তার বেশি কোনো প্রাপ্তি আমাদের নেই। উল্লেখ্য,ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। তার মধ্যে শুধু গঙ্গা ছাড়া আর কোনো নদীর পানিবণ্টনে চুক্তি নেই। এ বাস্তবতায় পানি না দিলে ট্রানজিট নয়- বাংলাদেশ এমন নীতি নিয়েছিল। বর্তমানে সরকার সে অবস্থান থেকে সরে এসেছে।
২০০ কোটি ডলারের ঋণ সম্পর্কে রয়েছে ভিন্নমত। সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মতে, এর আগে ১০০ কোটি ডলারের মধ্যে ২০ কোটি ডলার পদ্মা সেতুতে অনুদান দেয়া ছাড়া বাকি ঋণের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। এ ঋণের মূল সমস্যা সুদের হার নয়, এর চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে উৎস শর্তায়িত থাকা। এর ফলে ভারত অনন্য সরবরাহকারী হয়ে যায়। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক সুলভমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়।
প্রস্তাবিত ২০০ কোটি ডলার ঋণ সম্পর্কে দাতা ব্যাংক এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যানের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক খবরে বলা হয়েছে, ভারত এরই মধ্যে বাংলাদেশকে ৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলার ঋণ দিয়েছে এবং নতুন এ ২০০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ায় বাংলাদেশে ভারতের রফতানি বাড়বে ও ভারতের কোম্পানিগুলোর সুবিধা হবে। স্টিল ও সিমেন্ট খাত লাভবান হবে। কারণ, ঋণের টাকায় বাংলাদেশে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় এসব উপকরণ ভারত থেকে আমদানি করতে হবে। এতে ভারতে উৎপাদন যেমন বাড়বে, তেমনি দেশটিতে ৫০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশের জনগণকে তাদের ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করে ভারত তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানি অন্যায়ভাবে ডাইভার্ট করে নিয়ে যাচ্ছে। এখানেই শেষ নয়। সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা বাংলাদেশের প্রতি ভারত বৈরিতার আরেকটি নজির। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনেক প্রতিশ্র“তি সত্ত্বেও বন্ধ হচ্ছে না সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা। বাংলাদেশী কিশোরীও রেহাই পায়নি এ হত্যার হাত থেকে। বলা হয়ে থাকে, এরা চোরাচালানকারী। চোরাচালান তো একপক্ষে হয় না। এতে ভারত ও বাংলাদেশের চোরাচালানকারিদের একসঙ্গে কাজ করতে হয়। কোনো ধরনের চোরাচালানকে বাংলাদেশ সমর্থন করে না। তবে দুঃখ লাগে যখন দেখি বিএসএফ বাংলাদেশে গরু পাচারে বাধা দিতে সর্বোচ্চ তৎপর থাকলেও ফেনসিডিল বা অন্য কোনো মাদকদ্রব্য বাংলাদেশে পাচারে তারা থাকে অনেকটা নিষ্ক্রিয়। যেহেতু চোরাচালান ভারত-বাংলাদেশের চোরাচালানকারিদের একটি মিলিত কাজ, সেহেতু বাংলাদেশী চোরাচালানকারিদের সঙ্গে ভারতীয় চোরাচালকারিরাও বিএসএফের গুলিতে আহত বা নিহত হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু, তেমন খবর তো শোনা যায় না।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বাংলাদেশীদের আত্মসম্মানের ওপর আঘাত। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভারতে বাংলাদেশীদের অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ। এ যুক্তি সঠিক নয়। ভারতের ৪০ শতাংশ মানুষের অবস্থান দারিদ্র্যসীমার নিচে। বাংলাদেশে এ হার ২৪ শতাংশ। সামাজিক উন্নয়নমূলক অনেক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ভারতের ওপরে। সুতরাং বাংলাদেশীরা ভারতে অনুপ্রবেশ করবে কেন? স্থলসীমান্ত চুক্তি বলবৎ বার্লিন দেয়াল পতনের সঙ্গে তুলনীয় হলে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বার্লিন দেয়ালের পুনর্নির্মাণ। আরও অনেক বিষয়ে বাংলাদেশ ভারতের বৈরিতার শিকার। স্থানাভাবে সেসব নিয়ে আলোচনা করা গেল না।
বাংলাদেশের জনগণ আশা করে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঐতিহাসিক ঢাকা সফরের পর বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সব বৈরিতার অবসান ঘটবে। প্রতিবেশী দুটি দেশ সমতার নীতিতে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনীতি মূলত প্রতিযোগিতামূলক হওয়ায় উভয় দেশ প্রতিযোগিতার ন্যায়নীতি অনুসরণ করে নিজ নিজ দেশের অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করবে। ভারত পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ। এজন্য ভারতীয়দের সঙ্গে আমরাও গর্বিত। আমাদের দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও প্রসারে ভারত আমাদের সহায়তা করুক।
আবদুল লতিফ মন্ডল : সাবেক সচিব, কলাম লেখক