অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ প্রসঙ্গে বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিধান মোতাবেক বাংলাদেশের পক্ষে স্বার্থ রক্ষা করা কঠিন হবে। ট্টানজিটের ক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা নির্দিষ্ট করে কোন ফি’র বিধি তৈরি করেনি। ট্টানজিটের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে মুক্তভাবে এক দেশ থেকে আরেক দেশে পণ্যবাহী যান চলাচল করতে পারবে।
Published in Amader Shomoy on Sunday, 6 September 2015.
ট্রানজিট ফি দিতে রাজি না ভারত
শাখাওয়াত হোসেন
ট্রানজিট চাইলেও আন্তর্জাতিক বিধি অনুসারে ফি দিতে রাজি নয় ভারত। সস্প্রতি বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করে ভারতের ব্যবসায়ীরা যে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলের ট্টানজিট সুবিধা চাচ্ছে তাতে ফি নির্ধারণ করার কথা শুনেই তাতে তারা রাজি হচ্ছেন না। দ্বিমত পোষণ করে দিল্লি বলছে বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) টন প্রতি মালের যে ৭ ডলার ফি নির্ধারিত করেছে তাতে দেশটির ব্যবসায়ীদের কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এ ফি বাংলাদেশের নৌ মন্ত্রণালয়ের বিবেচনায় রয়েছে।
এছাড়া ভারত রাজস্ব বোর্ডের ব্যাংক গ্যারান্টির বিষয়টিও প্রত্যাখান করেছে। দেশটির ব্যবসায়ীরা ব্যাংক গ্যারান্টির বিকল্প কিছু করতে বলেছে। এছাড়া ট্টানজিট ফি পুনর্বিবেচনার কথা বলছে বলে নৌ কর্মকর্তারা জানান। নৌ সচিব শফিক আলম মেহেদি বলেন, এনবিআরের প্রস্তাবিত ফি নিয়ে আমরা কাজ করছি। এখনো কোন কিছু চূড়ান্ত করা হয়নি। ট্টানজিট ইস্যু নিয়ে আমরা উইন উইন অবস্থার চুক্তি করতে পরিকল্পনা করছি। ফি নির্ধারণের প্রস্তাবনাটি মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে বলে তিনি জানান।
২০১০ সালে এনবিআর ২০ ফুট কন্টেইনারের জন্য ১০ হাজার ও ট্টাকের পণ্যের জন্য টন প্রতি ১ হাজার টাকার ফি’র প্রস্তাবনা দেয়। এ প্রস্তাবনাটির বিরোধিতা করে ভারত ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থ উপদেষ্টা মসিউর রহমান। তাদের বিরোধিতার জন্য পরে এটি প্রত্যাহার করা হয়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত মে মাসে ঢাকা সফরে আসার পরে ভারতের পক্ষ থেকে ট্টানজিট সুবিধা পেতে জোর দাবি জানানো হয়। তাতে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো উপকৃত হবে। মালবাহী যানচলাচলে ভারতের পক্ষ থেকে বেশ আগ্রহ প্রকাশ করতে দেখা গেলেও ফি সম্পর্কে বলা হলে তারা নীরব ভূমিকা পালন করে।
বর্তমানে ভারত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিধান পরিবর্তন করতে চাচ্ছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুসরণ করেই ভারতের কাছ থেকে ফি নির্ধারণ করা হচ্ছে। তাতে ভারতের আপত্তি করার কোন যুক্তি নেই।
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ প্রসঙ্গে বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিধান মোতাবেক বাংলাদেশের পক্ষে স্বার্থ রক্ষা করা কঠিন হবে। ট্টানজিটের ক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা নির্দিষ্ট করে কোন ফি’র বিধি তৈরি করেনি। ট্টানজিটের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে মুক্তভাবে এক দেশ থেকে আরেক দেশে পণ্যবাহী যান চলাচল করতে পারবে।
জাতিসংঘের বিশ্বব্যাংকের ২০১৪ সালের নভেম্বরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মধ্যে পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকার ট্টানজিটের জন্য প্র্রতি কিলোমিটার ২ থেকে ৩ মার্কিন ডলার ফি দিচ্ছে। এর মধ্যে বসনিয়া, বুরকিনা ফাসো, বুরুন্ডি, মধ্য আফ্রিকা, চাঁদ, ইথিওপিয়া, লিসোতু, মালাউ, মালি, নাইজার, রুয়ান্ডা, সোয়াজিল্যান্ড, উগান্ডা, জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ে মধ্যে ট্টানজিট সুবিধা নিচ্ছে।
এছাড়া ১৯৯৪ সালে তুরস্ক ও ইরানের মধ্যে বাণিজ্য আদান প্রদান চুক্তি হয়। চুক্তি মোতবেক ১২’শ কি.মি রাস্তার অতিক্রম করার জন্য ট্রাক প্রতি ৩০৭ মার্কিন ডলার দিতে হয়। ইউরোপিয় ইউনিয়নের সুইজারল্যান্ডসহ ৭টি দেশে ২০১৩ সাল থেকে পণ্যবাহী যানচলাচল শুরু হয়। এপ্রিল মাস থেকে যুক্তরাজ্যের পথে লরি ব্যবহার করার জন্য ১৬ মার্কিন ডলার ফি নির্ধারণ করা হয়।