Published in Amader Shomoy on Monday, 12 January 2015.
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় হাতছাড়া হচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগ
আবু আলী
দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশের চেয়ে ব্যবসাবাণিজ্যের সেবা ও শ্রমমূল্য কম হওয়া সত্ত্বেও কাক্সিক্ষত প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসছে না। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের পাশাপাশি অবকাঠামো দুর্বলতার সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা যুক্ত হয়েছে। অন্যদিকে ঋণপ্রাপ্তির জটিলতা, দুর্নীতি, অপর্যাপ্ত শিক্ষা ও জমির স্বল্পতা রয়েছেই। ফলে বিদেশি বিনিয়োগেও ভাটা পড়েছে। অথচ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের চেয়ে বাংলাদেশে ব্যবসার ব্যয় অনেক কম। শ্রমের মজুরি ছাড়াও গ্যাস ও বিদ্যুতের সেবামূল্যও তুলনামূলক কম। তারপরও পিছিয়ে যাচ্ছে। তবে নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠায় গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ সহজলভ্য নয়। তাই ব্যবসা করার ব্যয় কম হলেও সুযোগ কাজে লাগছে না। আশানুরূপ হারে বাড়ছে না প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই)।
জাপান এক্সটার্না ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেইটিআরও) এক সমীক্ষার তথ্য মতে, বাংলাদেশের শ্রমমূল্য অনেক কম। কিন্তু সে সুযোগ কাজে আসছে না। বাংলাদেশে সাধারণ শ্রমিকের মজুরি মাসে ৭৪ ডলার, নয়াদিল্লিতে ২৭৬, কলম্বোয় ১১৮, করাচিতে ১৭৩, বেইজিংয়ে ৪৬৬, ব্যাংককে ৩৪৫, কুয়ালালামপুরে ৩৪৪, জাকার্তায় ২৩৯, হ্যানয়ে ১৪৫ ও সিঙ্গাপুরে ১ হাজার ২৩০ ডলার।
ভাড়ার দিক থেকেও সাশ্রয়ী। প্রতিবর্গমিটার শিল্প প্লটের ভাড়া ঢাকায় শূন্য দশমিক ১৯, নয়াদিল্লিতে ৩ দশমিক ৯৩, কলম্বোয় ১ দশমিক ১৮, করাচি দশমিক ২৯, বেইজিং ৭ দশমিক ১৬, ব্যাংকক ৭ দশমিক ২২, জাকার্তা ৬, হ্যানয় শূন্য দশমিক ১৭ ও সিঙ্গাপুরে ৬ দশমিক ৫১ ডলার। একইভাবে শিল্পে সরবরাহকৃত গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সেবামূল্য ঢাকায় তুলনামূলক কম।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সেবামূল্য কম হলেও নতুন শিল্পকারখানা স্থাপন কঠিন। সবচেয়ে বেশি কঠিন প্লট পাওয়া। এর চেয়েও বেশি কঠিন গ্যাস-বিদ্যুতের নতুন সংযোগ। এছাড়া পরিবেশের ছাড়পত্র পাওয়া তো জটিল। ফলে বাংলাদেশে আশানুরূপ বিনিয়োগ বাড়ছে না। এছাড়া সম্পত্তি নিবন্ধন ও চুক্তি বাস্তবায়নে তলানিতে বাংলাদেশের অবস্থান।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার এফডিআই প্রবাহের সিংহভাগই যাচ্ছে ভারতে। গত তিন বছরে এ অঞ্চলের এফডিআই প্রবাহের প্রায় ৯০ শতাংশ ভারতেই গেছে। আর বাংলাদেশে এসেছে ৩ থেকে সাড়ে ৩ শতাংশ। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার এফডিআই স্টকের (সঞ্চিতি) প্রায় ৮৫ শতাংশই ভারতের দখলে। বাংলাদেশের দখলে রয়েছে মাত্র ২৩ ভাগ। অথচ ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে ব্যবসা করার ব্যয় তুলনামূলক অনেক কম। অবকাঠামো দুর্বলতাকে এফডিআই আকর্ষণের প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করে তা দূর করার পরামর্শ দেন তিনি।
সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, তিনটি কারণে বিনিয়োগ কাক্সিক্ষত পর্যায়ে হচ্ছে না। প্রথমত, বিনিয়োগ না বাড়ার প্রচলিত কারণ হলো গ্যাস, বিদ্যুৎ, জমি ও অবকাঠামোর অভাব। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুর্নীতির সমস্যা। দ্বিতীয়ত, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের শ্লথগতিও বিনিয়োগ না বাড়ার কারণ। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার শঙ্কায় উদ্যোক্তারাও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন। বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আস্থা পাচ্ছেন না। এতে বিনিয়োগও বাড়ছে না।