বিএনপি-জামায়াতের হরতাল ও সরকারের অনড় অবস্থানের কারণে এ পর্যন্ত ৬০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে। পরিবহন, পোশাক, কৃষি, পর্যটন, রিরোলিংসহ আনুষঙ্গিক খাতে এ ক্ষতি হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বিভিন্ন সংগঠনের চিঠি ও বেসরকারি সংস্থার গবেষণা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে এসব ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সংগঠন ও গবেষণা সংস্থার সত্যতা যাচাই করতে এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিককালে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সংগঠন ক্ষয়ক্ষতির হিসাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে থাকে। বেশিরভাগ সংগঠনই ক্ষয়ক্ষতির হিসাব জানানোর পাশাপাশি সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবিও করেছে। সংগঠন ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থার তথ্যানুযায়ী এর পরিমাণ ৬০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এ সংখ্যা নিয়ে খোদ অর্থ মন্ত্রণালয় সন্দেহ প্রকাশ করছে। অর্থমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতির আসল পরিমাণ নির্ণয় করতে হবে। এজন্য তিনি বেশকিছু দিকনির্দেশনাও দেন।
সূত্র জানায়, ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে লেখা এক চিঠিতে বলেছে, বিএনপি-জামায়াতের জোটের টানা হরতাল ও অবরোধের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের সড়ক পরিবহন খাত। ১৮ দলীয় জোটের এসব কর্মসূচিতে মূল টার্গেট ছিল পরিবহন। হরতাল আহ্বানের পর পরই গাড়ি জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুর ও বোমা মেরে শ্রমিক হত্যা করা হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় অর্থাৎ ২০১২ অক্টোবর থেকে ২০১৪’র ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ১ হাজার বাস, মিনিবাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। আর ভাংচুর করা হয়েছে সাড়ে তিন হাজার গাড়ি। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৩০ কোটি টাকা। হরতাল-অবরোধে বাণিজ্যিক যানবাহন বন্ধ থাকায় ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, এ খাত পুনরুদ্ধারের জন্য ব্যাংক সুদের হার ৮-৯ শতাংশ করার দাবি জানানো হয়। এছাড়া ঋণ খেলাপিদের সুদ মওকুফ ও ঋণ পুনঃতফসিল করারও দাবি জানানো হয়।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশ অটো রিরোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনও (বিএআরএসএমএ) তাদের ক্ষতির পরিমাণ অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এ খাতের প্রায় ২ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এর আগে ওষুধ শিল্প সমিতিও তাদের ক্ষতির পরিমাণ জানিয়েছিল। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) হিসাব মতে, একদিনের হরতালে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ক্ষতি ১ হাজার ৬০০ টাকা।
এদিকে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, কৃষিতে ১৫ হাজার ৮২৯ কোটি, পোশাক খাতে ১৩ হাজার ৭৫০ কোটি এবং পর্যটন খাতে ২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
আবাসন শিল্পের সংগঠন রিহ্যাব বলছে, ৩০ শতাংশ ছাড় দিয়েও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না, ১৮ হাজার ফ্ল্যাট অবিক্রীত পড়ে আছে, চলমান কিস্তি পরিশোধেও টান পড়েছে। ৫০ শতাংশ ফ্ল্যাট সময়মতো বুঝিয়ে দেয়া যাবে না, শীতকালীন রিহ্যাব মেলা স্থগিত করায় ৬০০ কোটি টাকার বিক্রি হাতছাড়া হলো। এ খাতের ১৮ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ এখন খেলাপি হওয়ার আশঙ্কায়।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সবার আগে রাজনৈতিক সহিংসতায় বিদেশে বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে তা ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য সরকারকে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। আর উদ্যোক্তাদের ক্ষতি পোষাতে সরকার আপৎকালীন কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে।