গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে প্রতীয়মান, সপ্তম পরিকল্পনার লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জিং হবে। এক্ষেত্রে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের মন্তব্যটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছেন, ‘পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যগুলো অর্জন না হওয়ার পেছনে বিশ্বপরিস্থিতি অনেকটা দায়ী। পরিকল্পনাটা নেয়া হয় পাঁচ বছরের জন্য। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে বিশ্বের অনেক কিছু পরিবর্তন হয়, যা সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অনেকটাই প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে।
Published in Bonik Barta on Tuesday, 20 October 2015.
সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা
যুগোপযোগী ও বাস্তবায়নযোগ্য হোক
পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দলিল, যার ওপর ভিত্তি করে আগামী পাঁচ বছর এ জনপদের উন্নয়ন হবে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের দুর্বলতা অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করবে বৈকি। এ কথা সত্য, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নে নীতিনির্ধারকরা যথেষ্ট সক্ষমতা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন। এর কারণ খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করেই পরিকল্পনা কমিশন চূড়ান্ত করেছে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এজন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ দিতেই হবে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, দুই বছরের বেশি সময় ধরে সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে আলোচনা ও পর্যালোচনা শেষে চূড়ান্তকৃত সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এক্ষেত্রে হতাশার বিষয় হলো, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়া। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে চলতি বছরেই, এখনো অনেক লক্ষ্য অর্জন হয়নি।
একটি ভালো পরিকল্পনা সেটাই, যা অর্জনযোগ্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য সামনে নিয়ে প্রণীত হয় এবং যার বাস্তবায়ন সহজেই পর্যবেক্ষণ করা যায়। পরিকল্পনায় নির্ধারিত লক্ষ্য প্রাসঙ্গিক, যৌক্তিক ও বাস্তবায়নযোগ্য হওয়াটা বাঞ্ছনীয়। অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে একটি জাতির অর্থনৈতিক করণীয়গুলো পরিবর্তন হয়। সত্তর বা আশির দশকে বাংলাদেশে পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন করাই ছিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এখন বাণিজ্য-কর্মসংস্থান-শিল্প খাত উন্নয়নে দৃষ্টি দিতে হবে। আর এজন্য চাই পর্যাপ্ত বিনিয়োগ। প্রতিনিয়ত বিশ্ব পরিপ্রেক্ষিত পাল্টাচ্ছে। বলা যায়, খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এখন উন্নয়ন কৌশলে গুরুত্ব দেয়ার সময় এসেছে মানসম্পন্ন খাদ্য সরবরাহের ওপর। একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টির বিষয়টি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় লক্ষ্য হিসেবে আসা উচিত। সেবা খাতের বিস্তার ঘটছে। তবে এর মান নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মেয়াদ শেষ হয়েছে এবং তাতে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ভালো। নতুন গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে মনোযোগ রেখেই সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা সাজাতে হবে। পরিমাণের পাশাপাশি গুণগত পরিবর্তনে আমাদের মনোযোগ থাকতে হবে। যেসব কারণে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন হয়নি, সেগুলো যেন সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি না করে তা নিশ্চিত করতে হবে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে প্রতীয়মান, সপ্তম পরিকল্পনার লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জিং হবে। এক্ষেত্রে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের মন্তব্যটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছেন, ‘পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যগুলো অর্জন না হওয়ার পেছনে বিশ্বপরিস্থিতি অনেকটা দায়ী। পরিকল্পনাটা নেয়া হয় পাঁচ বছরের জন্য। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে বিশ্বের অনেক কিছু পরিবর্তন হয়, যা সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অনেকটাই প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। তবে এর বাইরেও বিনিয়োগের গুণগত মান নিশ্চিত করতে না পারা, অবকাঠামোগত দুর্বলতা প্রভৃতি কারণে বেসরকারি খাত বিনিয়োগে এগিয়ে আসেনি। ফলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিও পিছিয়ে গেছে।’ সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা দূর করতে হবে। দারিদ্র্য দূরীকরণের পাশাপাশি আয়বৈষম্য কমিয়ে আনা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সর্বোচ্চ মনোযোগ রাখা চাই।
সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার খাতের মধ্যে রয়েছে কারিগরি ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদ গঠন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন, জ্বালানি ও যোগাযোগ খাতে অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা দূরীকরণ, কৃষিভিত্তিক শিল্পসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ, আইসিটি-স্বাস্থ্য-শিক্ষাসংক্রান্ত সেবা রফতানিতে সুনির্দিষ্ট নীতিকৌশল প্রণয়ন, সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগে গতিশীলতা আনা এবং রফতানির গতিশীলতা আনয়নে পণ্যে বৈচিত্র্য আনা। এছাড়া সুশাসনেও বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে সুশাসন নিশ্চিত করতে বিচার ও আইনের শাসন, সরকারি প্রশাসনে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সুশাসন উন্নীত করার বিভিন্ন কৌশল হাতে নেয়া হয়েছে। সেসবের মধ্যে রয়েছে বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগে সহজ ও স্বচ্ছ মানদণ্ড এবং প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করা। এক্ষেত্রে জনগণ দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চায়। বাস্তবায়নে বিদ্যমান দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া একান্তভাবে জরুরি। একই সঙ্গে দৃষ্টি রাখতে হবে যেন পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাটি বর্তমান সময়োপযোগী হয়, যা আমাদের ১০০ বছর পরের বাংলাদেশকে পথ দেখাতে পারে।