Published in Bonik Barta on Thursday, 4 June 2015.
ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নিয়ে সিপিডির মূল্যায়ন
লক্ষ্য নির্ধারণে আরো সতর্ক হতে হবে
সম্প্রতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ‘স্টেট অব দ্য বাংলাদেশ ইকোনমি ইন ফিসক্যাল ইয়ার ২০১৫ অ্যান্ড দ্য ক্লোজার অব দ্য সিক্সথ ফাইভ ইয়ার প্ল্যান’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। তাতে বলা হয়, ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অধিকাংশ লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। মাথাপিছু বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানো, প্রকৃত আয় বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধী টিকাদান সম্প্রসারণ, দক্ষ জনবল তৈরি, সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা সম্প্রসারণ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট সেবা সম্প্রসারণ ইত্যাদি খাতে অগ্রগতি হলেও তা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক পিছিয়ে বলে জানিয়েছে সিপিডি। এর আগে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রতিবেদনেও ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ধূসর চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল। শুরুটা ভালো হলেও শেষের দিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিনিয়োগ হ্রাসসহ নানাবিধ কারণে পরিকল্পনার অধিকাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়নি। এ অবস্থায় সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা থেকে নতুন উদ্যোমে কাজ করে আগের ঘাটতি পুষিয়ে দেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে যেসব কারণে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে হোঁচট খেয়েছে, তা সমাধানে ব্যবস্থা নিতে হবে।
স্বাধীনতার পর থেকে দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র (পিআরএসপি) ব্যতীত এ পর্যন্ত পাঁচটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কোনো পরিকল্পনাই পরিপূর্ণভাবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়নি। এর কারণ উদ্ঘাটন জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি এবং উচ্চাভিলাষের কারণে অধিকাংশ লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি বলে মনে করছেন অনেকে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণগুলো এরই মধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন প্রয়োজন সেগুলোর অপসারণ, যার জন্য দৃঢ় রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রয়োজন।
ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যথাযথভাবে বাংলাদেশের সমস্যাগুলো চিহ্নিত এবং তা সমাধানে নেয়া ব্যবস্থাও ছিল মোটামুটি গ্রহণযোগ্য। আগামীতে কীভাবে উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে। একই সঙ্গে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ে আরো গুরুত্ব দিতে হবে। পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে হবে নির্দিষ্ট সময় পর পর। যেসব লক্ষ্য অর্জনে বেশি পিছিয়ে রয়েছি, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সেগুলো বাস্তবায়নে অধিক জোর দিতে হবে। পাশাপাশি সম্পদের অপচয় রোধ, ব্যয় কমিয়ে আনা ও দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নে দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক। উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি অর্জনে এর বিকল্প নেই। সিপিডি বা জিইডি যেসব পরামর্শ সরকারকে দিয়েছে পরিকল্পনার লক্ষ্য অর্জনে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও সেগুলো মেনে চলতে হবে। মাঝে কিছুটা বিরতি দিয়ে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ফিরে এসেছে সরকার। এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্রিয় হতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। তদারকি জোরদার এবং অর্থ সংগ্রহ-ছাড়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে গুণগত মান নিশ্চিতে বিশেষ সেলও গঠন করা যেতে পারে।