Published in Alokito Bangladesh on Sunday, 26 April 2015
জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে রাখতে সরকারের নানা ছক
ভালোভাবে নিচ্ছেন না অর্থনীতিবিদরা
সজীব হোমরায়
যে করেই হোক চলতি (২০১৪-১৫) অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে রাখতে চাইছে সরকার। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ সিপিডির মতো সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস ভুল প্রমাণ এবং সরকারের সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতেই এ উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য করা হচ্ছে নানা ছক। কৃষি, বিনিয়োগসহ উল্লেখযোগ্য খাতগুলো আবারও হিসাব-নিকাশ করছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রাজনৈতিক অস্থিরতা বারবারই জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি অর্থবছরও একই কারণে সরকারের কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলে মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও বিভিন্ন সংস্থা। অর্থনীতিবিদ ও দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলোর এসব হিসাব-নিকাশকে আমলে নিচ্ছেন না অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সম্প্রতি তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, চলতি অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের কাছাকাছি থাকবে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবির পূর্বাভাসের সমালোচনাও করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রত্যেক বছরই বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে। তারা প্রত্যেকেই সবসময় ভুল পর্যবেক্ষণ করে। আইএমএফ এর মধ্যে সবচেয়ে বাজে পর্যবেক্ষক। সরকার যেটা ধারণা করে, তার কিছুটা কাছাকাছি থাকে এডিবি। এসব সংস্থার পূর্বাভাস ভুল প্রমাণ করা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যেও যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা যায়, তা দেখাতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এজন্য যদি নতুন করে হিসাব কষতে হয়, তবে তা-ই করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চলতি মাসে অনুষ্ঠিত কো-অর্ডিনেশন কমিটির বৈঠকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। নির্দেশ মোতাবেক অর্থ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে নতুন করে হিসাব কষা শুরু করে দিয়েছে। অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য খাতগুলো আবারও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। হিসাব করা হচ্ছে নতুন করে। হিসাবে বাদ যাচ্ছে না ব্যবসায়ীদের নেয়া বিদেশি ঋণ, শেয়ারবাজারে আইপিও বিনিয়োগও। তবে বিষয়গুলোকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, সরকারের এ ধরনের চেষ্টা অদূর ভবিষ্যতে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকার যদি এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে থাকে, তবে তা হবে দুঃখজনক। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি লুকানোর চেষ্টা থেকে সরকারের সরে আসা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) হিসাবে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় অবরোধের ৮১ দিনে আর হরতালের ৬৭ দিনে (৫ জানুয়ারি থেকে মধ্য মার্চ) মোট জাতীয় আয়ে (জিডিপি) ক্ষতি হয়েছে ০.৫৫ শতাংশ- টাকার অঙ্কে যা ৪ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। এতে চলতি অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের নিচেই থাকবে বলে ধারণা সংস্থাটির। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে আয়কর, মূসক ও শুল্কসহ রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয় ও এনবিআর-বহির্ভূত আয়ে লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক দূরে আছে সরকার। বছর শেষে সরকারের রাজস্ব আয়ে ঘাটতিও থাকবে বিশাল। সিপিডির মতে, এ ঘাটতি হবে ২৫ হাজার কোটি টাকা।
বিশ্বব্যাংক বলেছে, রাজনৈতিক অস্থিরতায় এ বছর বাংলাদেশে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৭ হাজার ১৬০ কোটি টাকা (২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার)। এ কারণে অর্থবছর শেষে দেশের প্রবৃদ্ধির হার কমে দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের মতোই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সংস্থা (আইএমএফ) বলেছে, চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ থেকে ৬ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের সঙ্গে সুর মিলিয়ে আরেক শক্তিশালী সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস করেছে।