Published in Naya Diganta on Sunday, 7 June 2015.
বাজেট শিক্ষা ও শিক্ষকবান্ধব নয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রস্তাবিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট শিা ও শিকবান্ধব নয় বলে দাবি করেছেন সরকার সমর্থক শিক সংগঠনের নেতারা। তারা শিক্ষা খাতের বরাদ্দকে পর্যাপ্ত নয় এবং পে-স্কেলে বেসরকারি শিক্ষকদের অবস্থান সম্পর্কে সরকারের সুস্পষ্ট বক্তব্য দাবি করেছেন। অপর দিকে, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রতিনিধিত্বকারী বড় শিক্ষক সংগঠনগুলোও বাজেটে শিক্ষকদের জন্য বিশেষ করে এমপিওভুক্ত পৌনে ৫ লাখ শিক-কর্মচারীর জাতীয় পে-স্কেলে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা না থাকায় ােভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন শিক নেতারা। তারা এ দাবিতে রাজপথে নামার ঘোষণাও দিয়েছেন।
সরকার সমর্থক শিক্ষক-কর্মচারীদের সংগঠনগুলোর জোট জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্টের মুখ্য সমন্বয়কারী ও শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেছেন, শিক্ষানীতি-২০১০ গত ৫ বছর আগে প্রণীত হলেও এটি বাস্তবায়নে গত চারটি বাজেটে কোনো সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এবারো কোনো নির্দেশনা নেই। এটি হতাশাজনক। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ক্রমবর্ধমান থাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমাদের দেশে গত ৫ বছরে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ হয়েছে ক্রমহ্রাসমান। বাজেটে বরাদ্দ প্রতি বছরই টাকার অঙ্ক বেড়েছে, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ আনুপাতিক হারে বাড়েনি।
বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট্রের সদস্যসচিব ও কারিগরি শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং সরকার সমর্থক শিক্ষক সংগঠনগুলোর আরেকটি জোট শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মো: শাহজাহান আলম সাজু নয়া দিগন্তকে বলেন, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়, এটি আরো বাড়ানো উচিত। জাতীয় পে-স্কেলে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট বক্তব্য আশা করছি। বর্তমান সরকার শিক্ষকবান্ধব। কিন্তু পে-স্কেলে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কোনো ধরনের ধূম্রজাল সৃষ্টির অবকাশ নেই।
বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদ-বিপিসির সভাপতি ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ট্রেজারার অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতে অর্থমন্ত্রীর নেক নজর পড়েনি। শিক্ষা খাতে অনেক অগ্রগতি ও অর্জনের কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও এবারে শুধু নয় বর্তমান সরকারের আমলে প্রতিটি বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ আনুপাতিক হারে কমেছে। এটি দুঃখজনক। এরপরও কী বর্তমান সরকারকে শিক্ষা ও শিক্ষকবান্ধব বলা যেতে পারে, এমন প্রশ্ন রাখেন প্রবীণ এ শিক্ষক নেতা।
শিক-কর্মচারী ঐক্যজোটের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মো: জাকির হোসেন, অপর অংশের চেয়ারম্যান নূর আফরোজ বেগম জ্যোতি ও মহাসচিব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর খান এবং বাংলাদেশ শিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও শিক্ষক-কর্মচারী সংগ্রামী ঐক্য জোটের প্রধান সমন্বয়কারী মো: নজরুল ইসলাম রনি, সমিতির মহাসচিব রিয়াজ উদ্দিন পৃথক বিবৃতিতে শিক্ষা খাতের বাজেট বরাদ্দ নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন। পৃথক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, শিক্ষকেরা প্রতিবারই রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি ও অধিকার আদায় করেছেন। এবারো তাই করতে সরকারকে বাধ্য করতে চান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি শিক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণ ও ননএমপিও শিকদের এমপিওভুক্তির জন্য বাজেটে বরাদ্দ নেই। এমপিওভুক্ত পৌনে ৫ লাখ শিক-কর্মচারীর জাতীয় পে-স্কেলে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। শিক নেতারা আরো বলেন, দেশের ৯৮ ভাগ বেসরকারি শিক তাদের শক্তি ও সামর্থ্য দিয়ে দেশের শিা ব্যবস্থার মেরুদণ্ড সোজা রেখেছেন। শিা খাতে বাজেট বরাদ্দের সমালোচনা করে তারা বলেন, দেশের শিা নিয়ে বর্তমান সরকার গর্ব করলেও শিকদের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করছে।
বিবৃতিতে শিক্ষক নেতারা বলেন, পাবলিক পরীক্ষায় ফলের দিক থেকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বরাবর এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বর্তমান সরকার আমলে নিচ্ছেন না। বিশাল অঙ্কের বাজেট ঘোষিত হলেও বাজেটে শিক্ষক-কর্মচারীদের বিষয়ে সুস্পষ্ট বরাদ্দ না থাকায় শিক্ষক সমাজে চরম হতাশা নেমে এসেছে। এমপিওভুক্ত পৌনে ৫ লাখ শিক্ষক কর্মচারী বর্তমানে চরম হতাশ, তারা আদৌ জাতীয় পে-স্কেলের অন্তর্ভুক্ত হবেন কি না।
অপর দিকে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) গত শুক্রবার বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে শিা খাতে বরাদ্দ কমে যাওয়ায় কঠোর সমালোচনা করেছে। সিপিডি বলেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে টাকার অঙ্কে শিা খাতের বরাদ্দ বেড়েছে। শিা মন্ত্রণালয় বরাদ্দ পেয়েছে ১৭ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ১৫ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। আর প্রাথমিক ও গণশিা মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৪ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে তা ১৩ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা। এবারের বাজেটে শিা ও প্রযুক্তি এক করে দেখানো হয়েছে। শিা খাতে বরাদ্দ জিডিপির ২ শতাংশ। আর আগের অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ১৬ শতাংশ। ইউনেসকোর সুপারিশ হচ্ছে, শিা খাতে একটি দেশের বরাদ্দ হওয়া উচিত জিডিপির ৬ শতাংশ। অর্থাৎ অনেক পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।