Published in The Daily Ittefaq on Monday, 1 June 2015.
বিশাল রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পাচ্ছে এনবিআর
রিয়াদ হোসেন
বিগত অর্থবছরে রাজস্বের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ইতিমধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু রাজস্ব আদায়ের চলমান ধারায় কমিয়ে আনা লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়েও সংশয় রয়েছে। এর মধ্যে আসছে বাজেটে আবারো বিশাল রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে এনবিআরকে। গত বাজেটে এনবিআরকে ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) আদায় বেড়েছে ১৬ শতাংশের কম। অথচ আসছে বাজেটে এনবিআরকে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের অর্থনীতির আকার অনুযায়ী রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বেশি নয়। কিন্তু আদায়কারি প্রতিষ্ঠান এনবিআরের সক্ষমতাও বিবেচনায় নিতে হবে। বাস্তবতা বিবেচনায় না নিয়ে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হলে বিগত বছরের ন্যায় আসছে বছরের লক্ষ্যমাত্রাও ব্যর্থ হতে পারে। অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম মনে করেন, আগামী অর্থবছরে এনবিআরকে ৩০ শতাংশ বাড়তি রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া যৌক্তিক হবে না। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, দেশে এ পর্যন্ত কখনোই ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হয়নি। আর ৩০ শতাংশ বাস্তবতা বিবেচনায় অর্জনযোগ্য নয়। এ বছরের মত আগামী অর্থবছরেও শেষ দিকে এসে তা আবার কমিয়ে আনতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) মনে করছে, এনবিআর ও এনবিআর বহির্ভূত প্রাথমিক রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার (১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা) মধ্যে অন্তত ৩০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হতে পারে। এর মধ্যে এনবিআরের ঘাটতি হতে পারে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই আগামী বাজেটে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা উচিত বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অর্থনীতির সামপ্রতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সিপিডি এমন অভিমত দিয়েছে।
সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, ৩০ শতাংশ বাড়তি রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হলে তা চ্যালেঞ্জিং হবে। কেননা সে জন্য এনবিআরের যে ধরনের সক্ষমতা থাকা প্রয়োজন তা এখনো নেই।
চলতি অর্থবছরে রাজস্বের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা থাকলেও গত মাসে তা কমিয়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯০কোটি টাকা করা হয়। এর উপর ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে আগামী অর্থবছরে তা ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩২০ কোটি টাকা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আয়কর খাতে ৩৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে লক্ষ্যমাত্রা ৬৫ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা করা হচ্ছে। এর বাইরে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) হতে ৬৩ হাজার ৯০২ কোটি ও আমদানি পর্যায়ে শুল্ক খাত থেকে ৪৬ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে। আগামী বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সংসদে বাজেট বক্তৃতায় এ লক্ষ্যমাত্রা তুলে ধরতে পারেন।
চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১৫ শতাংশের কিছু বেশি। আলোচ্য সময়ে ১ লাখ সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা বেশি। গত অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত আদায় হয়েছিল ৯০ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা।