Published in The Daily Inquilab on Thursday, 27 August 2015.
ই-জিপিতে হবে সরকারি ক্রয়
আজিবুল হক পার্থ
সরকারি সব দপ্তরের কার্যক্রমকে ডিজিটালের আওতায় আনার জোর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে প্রায় সব মন্ত্রণালয় ই-ফাইলিং চালু করেছে। শতভাগ কার্যকর না হলেও নতুন পদ্ধতিতে (ই-ফাইলিং) কার্যক্রম চালাচ্ছেন কর্মকর্তারা। একই সাথে অনলাইনে করা হয়েছে টেন্ডার কার্যক্রম। এবারে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত্র যেকোন ফাইল অনলাইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এরই মধ্যে ইলেক্ট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) নামের একটি পোর্টাল হয়েছে। সেই পোর্টালের আওতাতেই এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০ কোটি টাকার উপরের যেকোন ফাইল প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাবে ই-জিপিতে। এ লক্ষ্যে গত মাসে পরিকল্পনামন্ত্রী একটি ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার বাস্তবায়নে আগামী নভেম্বরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তৃতীয় দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক পাবলিক প্রকিউরমেন্ট কনফারেন্স। ওই কনফারেন্সের পরেই আনুষ্ঠানিকভাবে ইজিপি’র কার্যক্রম শুরু হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, টেকসই ক্রয় সম্পাদনের জন্য উদ্ভাবন শ্লোগানে আগামী নভেম্বরে ঢাকায় তৃতীয় দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক পাবলিক প্রকিউরমেন্ট কনফারেন্সে। বাংলাদেশসহ আটটি দক্ষিণ এশিয় দেশের শতাধিক সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিনিধি, বেসরকারি প্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবে। এছাড়াও, ল্যাটিন আমেরিকান রিজিওনাল পাবলিক প্রকিউরমেন্ট নেটওয়ার্ক, ইউরোপিয়ান প্রকিউরমেন্ট নেটওয়ার্ক এবং চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব পারচেজিং এন্ড সাপ্লাই এর প্রতিনিধিরাও কনফারেন্সে তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন।পরিকল্পনা কমিশন জানায়, অযাচিত হস্তক্ষেপ ঠেকাতে এবং চলমান উন্নয়ন পক্রিয়া আরো তরান্বিত করতে ফাইল চালাচালিতে সময় নষ্ট প্রতিরোধে ডিজিটাল পদ্ধতির এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পের ক্রয় ব্যবস্থায় ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) কার্যক্রম চালু হলে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এটি একটি ভাল উদ্যোগ। আমাদের দেশের প্রচলিত অবস্থানে এই ধরনের পদ্ধতি বাস্তবায়ন হলে নিঃসন্দেহে সময় কমবে। আমতান্ত্রিক জটিলতা একটি দিক থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এতে করে পরিকল্পনা কমিশন প্রচলিত ব্যবস্থার চেয়ে খুব কম সময়ে একটি ফাইল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠাতে পারবে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানায়, বেশিরভাগ প্রকল্পের ডিপিপি পাওয়ার পরে তা সঠিক বিবেচিত হলে তা কমিশন ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু প্রচলিত অবস্থায় কাগুজে ফাইল দুই দফা আনা নেয়া করতে এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ততার কারণে তা অনুমোদন করে ফিরে আসতে প্রকল্পের মূল সময় থেকে ৬ মাস ক্ষেত্র বিশেষে এক বছর চলে যায়। পরবর্তীতে অনুমোদিত একটি প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ করা সম্ভব হয় না। এতে নতুন করে সংশোধনী আনতে হয়। এতে করে একদিকে উন্নয়নে ধীরগতি আসছে অন্যদিকে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তারা সরকারি অর্থ অপচয় করছেন। উন্নয়ন প্রকল্পের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং তৃণমূলে দৃশ্যমান উন্নয়নের লক্ষ্যে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।তৃতীয় এ কনফারেন্সের সভাপতিত্ব করবেন সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) মহাপরিচালক মো. ফারুক হোসেন। সম্মেলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারি ক্রয় কিভাবে আরো মসৃণ করা যায় সম্মেলনে এ বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। এ কনফারেন্সে কিছু ফ্রেইমওয়ার্ক চুক্তি সম্পন্ন হবে। সরকারি ক্রয়ে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ নিয়েও সম্মেলনে আলোচনা হবে। সরকারি ক্রয়ে তথ্য-প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহার বাড়ছে জানিয়ে সিপিটিইউ মহাপরিচালক বলেন, বাংলাদেশ ২০১১ সাল থেকে ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এবছরের জুলাই পর্যন্ত ২৪টি মন্ত্রণালয়ের ৯৮টি সংস্থা ই-জিপি’র মাধ্যমে ক্রয় কার্যক্রম সম্পাদন করছে। প্রকৃতঅর্থে, অনলাইনভিত্তিক দরপত্রের মাধ্যমে সরকারি ক্রয় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সমআচরণ ও অবাধ প্রতিযোগিতাকে অধিকতর নিশ্চিত করে।