অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ যখন কয়েক ধাপ এগিয়েছে সেখানে বাংলাদেশের এ গতি কচ্ছপের মতো। ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও উত্তরোত্তর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যবসায়িক নিরাপত্তাহীনতা, দুর্নীতি, অপর্যাপ্ত বিনিয়োগ সুবিধাও প্রতিযোগিতা সক্ষমতাকে পিছিয়ে দিচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা বলে আসছেন।
Published in Ittefaq on Wednesday, 28 October 2015.
তদবিরে এগিয়ে বাংলাদেশ
‘বিশ্ব সক্ষমতা সূচক’ অনুযায়ী বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বজনপ্রীতি-তদবিরের প্রাধান্য ব্যাপক, এক্ষেত্রে দেশটির অবস্থান ১২৮তম
জামাল উদ্দীন
তদবির সংস্কৃতিতে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। বরং দেশটিতে তদবির করে কার্যসিদ্ধির প্রক্রিয়া ক্রমেই বাড়ছে। এক সময় ঝড়-জ্বলোচ্ছ্বাস, দরিদ্র কিংবা দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। পর্যায়ক্রমে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটার সঙ্গে সঙ্গে দারিদ্র্য কমেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগও কমেছে। দুর্যোগ মোকাবেলা ও ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের সক্ষমতা বেড়েছে। কিন্তু তদবির, স্বজনপ্রীতি— এসব বাড়ছেই।
তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশে তদবির সংস্কৃতি বহু আগে থেকেই চলমান। এখানে চাকরি পেতে তদবির করতে হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করা কিংবা ব্যবসা পরিচালনার খরচও বেশি। আইনানুগ কাগজপত্রাদি সংগ্রহ করতে হলে ‘বাড়তি খরচ’ না করলে অযথা সময়ক্ষেপণ হয়। এ বিষয়গুলো বাংলাদেশের উন্নয়নের বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ্বব্যাংক এই চিত্রকে বাংলাদেশের উন্নয়নে মধ্যমেয়াদি হুমকি হিসেবে তুলে ধরেছে। এটি বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাস করছে।
গবেষকদের মতে, বাংলাদেশের এই পরিস্থিতির ফলে প্রতিযোগী দেশগুলোতে ব্যবসা চলে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ভিয়েতনাম অন্যতম একটি দেশ। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘বিশ্ব সক্ষমতা সূচক’ অনুযায়ী, বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বজনপ্রীতি-তদবিরের প্রাধান্য ব্যাপক। এক্ষেত্রে দেশটির অবস্থান ১২৮তম। যেখানে ভিয়েতনামের অবস্থান ৬৫তম। অপরাধ ও সহিংসতার কারণে ব্যবসায়িক খরচ বেশি হওয়ার দিক থেকেও বাংলাদেশের তুলনায় ভিয়েতনাম সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। যেমন এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৯তম, যেখানে ভিয়েতনামের অবস্থান ৬৯তম। ঘুষ বাণিজ্যের দিক থেকে সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৯তম। ভিয়েতনামেও ঘুষ বাণিজ্য চলে, তবে সূচকে তাদের অবস্থান ১০৬। তার মানে বাংলাদেশের চেয়ে সেখানকার অবস্থা ভাল।
বাণিজ্য ও বিনিয়োগে বহির্মুখিতার যে চাপ তৈরি হয়েছে- সেটিও মূলত এসব কারণেই। ব্যবসা পেতে হলে, চাকরি পেতে হলে তদবির করতে হবেই। তদবিরের চাপে পড়ে মেধাবীরা ছিটকে পড়ছে। নিয়োগ-পদোন্নতি থেকে শুরু করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় পর্যন্ত তদবিরকারকরা সক্রিয়। এর সঙ্গে রয়ে গেছে দুর্বল অবকাঠামো, দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, সরকারে অস্থিরতা, ব্যবসায়িক অর্থায়নের জটিলতা আর নীতি সহায়তার বাধাগুলো।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ প্রসঙ্গে বলেন, অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ যখন কয়েক ধাপ এগিয়েছে সেখানে বাংলাদেশের এ গতি কচ্ছপের মতো। ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও উত্তরোত্তর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যবসায়িক নিরাপত্তাহীনতা, দুর্নীতি, অপর্যাপ্ত বিনিয়োগ সুবিধাও প্রতিযোগিতা সক্ষমতাকে পিছিয়ে দিচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা বলে আসছেন।