Published in Banik Barta on Thursday, 15 May 2014.
ব্যাংক বীমা সেলফোন কোম্পানি
করপোরেট আয়কর হার কমছে
মীর মনিরুজ্জামান ও খান এ মামুন
আসন্ন (২০১৪-১৫) অর্থবছরের বাজেটে কয়েকটি ক্ষেত্রে করপোরেট আয়কর হার কমানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। বিশেষ করে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত (পাবলিকলি ট্রেডেড) ও তালিকা বহির্ভুত (নন-পাবলিকলি ট্রেডেড) সেলফোন কোম্পানির করহারে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। পাশাপাশি বাড়ি মালিকদের ভাড়া থেকে অর্জিত আয় ব্যাংক হিসাবে দেখানোর নির্দেশনাও থাকবে বাজেটে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে এসব প্রস্তাবসংবলিত একটি প্রাথমিক বাজেট প্রস্তাব প্রস্তুত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর অনুবিভাগ। আগামী সপ্তাহে গণভবনে অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে এসব বিষয় চূড়ান্ত হবে। আগামী ৫ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাজেট ঘোষণায় তা তুলে ধরবেন।
সূত্রমতে, ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার ৪২ দশমিক ৫ থেকে ৪০ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব থাকছে। নন-পাবলিকলি ট্রেডেড সেলফোন কোম্পানির জন্য করপোরেট করহার ৪৫ থেকে কমিয়ে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। পাবলিকলি ট্রেডেড সেলফোন কোম্পানির ক্ষেত্রে তা ৪০ থেকে কমিয়ে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দিচ্ছে এনবিআর। তবে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনায় সিগারেট প্রস্তুতকারক কোম্পানির করপোরেট করহার ৪৫ শতাংশ বহাল থাকছে। আর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলে সেক্ষেত্রে করপোরেট করহার হবে ৪০ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এবং ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটের পর থেকেই করপোরেট কর কমানোর চাপ দিয়ে আসছে। থ্রিজি নিলামের সময়ও সেলফোন কোম্পানিগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে করহার কমানোর দাবি তোলে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে রাজস্ব আহরণে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে জেনেও করপোরেট করহার কমানো হচ্ছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পক্ষ থেকে সিগারেট কোম্পানিগুলোর করপোরেট কর আরো বাড়ানোর চাপ থাকায় এক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসছে না।
এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘করপোরেট করের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এ-সংশ্লিষ্ট সব বিষয় আমরা খতিয়ে দেখছি। আগামী বাজেটে একটি প্রস্তাব করা হতে পারে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বিষয়টি নির্ভর করছে সরকারের উচ্চপর্যায়ের ওপর।’
জানা গেছে, করপোরেট কর কমানো হলে রাজস্ব আহরণে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, তাও মূল্যায়ন করা হচ্ছে। বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) আওতায় থাকা কোম্পানিগুলোর করপোরেট করহারে পরিবর্তন হলে ৩৫০-৪০০ কোটি টাকা কম আহরণ হতে পারে। তবে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ বাড়লে তা পুষিয়ে দেয়া সম্ভব। সব মিলে আগামী অর্থবছর পরীক্ষামূলকভাবে করপোরেট করহারে পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
বিনিয়োগে এ উদ্যোগের ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সুযোগ কম বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কিছু ক্ষেত্রে উচ্চ করপোরেট করহার রয়েছে। সেসব খাতের করহার কমিয়ে আনার দাবি অনেক দিনের। এসব দিক বিবেচনা করে এনবিআর সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এজন্য যে রাজস্ব ক্ষতি হবে, অন্য খাত থেকে তা পুষিয়ে নিতে হবে। তবে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।
বাজেট-সংশ্লিষ্ট এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা বলেন, কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিনিয়োগ না হওয়ার অন্যতম কারণ করপোরেট করহার বেশি হওয়া। এ আলোকে প্রাতিষ্ঠানিক করহার কমানোর প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া দেশের শিল্পোদ্যোক্তারাও দীর্ঘদিন ধরে প্রাতিষ্ঠানিক করহার কমানোর দাবি জানিয়ে আসছেন।
তবে বাংলাদেশে করপোরেট করহার অত্যন্ত বেশি উল্লেখ করে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, তুলনামূলকভাবে এখানে করপোরেট করহার বেশি। এখনো অনেক প্রতিষ্ঠান করজালের আওতায় আসেনি। যেগুলো এসেছে, তা থেকেও ন্যায়-নিষ্ঠভাবে কর আহরণের সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। এ কারণেই করহার এত বেশি। তবে করদাতা ও গ্রহীতা উভয় পক্ষ আন্তরিক হলে করপোরেট করহার কমানোর সুযোগ রয়েছে। এছাড়া করহার কমলে শিল্পোদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আরো উত্সাহিত হবেন। বিনিয়োগেও গতি বাড়বে।
এদিকে বাড়ি মালিকদের ভাড়া থেকে অর্জিত আয় ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সংরক্ষণে আইনি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে এনবিআর। আগামী বাজেটেই এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সহায়তাও চেয়েছে রাজস্ব আহরণকারী সংস্থাটি। কারো বাড়ি থাকলেই ব্যাংক হিসাব খুলতে হবে এবং প্রাথমিকভাবে সেখানে বাড়িভাড়ার টাকা জমা রাখতে হবে। এ ধরনের নির্দেশনা দিয়ে জারি করা হবে সরকারি প্রজ্ঞাপন। বিষয়টি চূড়ান্ত করতে আজ বৃহস্পতিবার এনবিআরে বৈঠকের কথা রয়েছে।
সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরে অনেক বাড়ি মালিক আছেন, যাদের করযোগ্য আয় থাকলেও কর পরিশোধ করেন না। তাদের সম্পদের হিসাব নেই এনবিআরে। এসব বাড়ি মালিককে করের আওতায় আনতে তাদের আয় ব্যাংকিং চ্যানেলে আনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বাড়িওয়ালারা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ভাড়ার টাকা জমা রাখা ও খরচ করলে তাদের আয় করের আওতায় আনা সহজ হবে।