Published in Prothom Alo on Friday, 28 August 2015.
আমদানিকারক ও পর্যটকেরা লাভবান হবেন
রুপির বিপরীতে টাকা আরও শক্তিশালী
নিজস্ব প্রতিবেদক
ডলারের বিপরীতে দীর্ঘদিন ধরেই টাকা শক্তিশালী। সেই ধারাবাহিকতায় এবার ভারতীয় রুপির বিপরীতেও বাংলাদেশি মুদ্রা কিছুটা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ফলে ভ্রমণ কিংবা চিকিৎসার জন্য যাঁরা ভারতে যাবেন তাঁরা আগের চেয়ে লাভবান হবেন। কারণ রুপি কিনতে এখন টাকা কম লাগবে।
অবশ্য টাকা শক্তিশালী হওয়ায় পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে খুব বড় প্রভাব পড়বে কি না সেটি নিয়ে কিছুটা দ্বিমত আছে। বিবিসি বাংলা গত বুধবার এমনই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, এই প্রবণতা বজায় থাকলে বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি বাড়বে। গত সোমবার একটা পর্যায়ে ১০০ রুপির দাম হয়েছিল ১১৫ টাকার সামান্য বেশি। সারা বিশ্বে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে যে উথালপাতাল চলছে তাতে টাকা ডলারের বিপরীতে দৃঢ়তা দেখাতে পেরেছে। তাই রুপির তুলনায় তার দর বেড়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গতকাল বৃহস্পতিবার ১০০ রুপি বিক্রয় করে ১১৮ টাকায়। চলতি মাসের শুরুর দিকে ছিল ১২২ টাকা। দুই বছর আগে ২০১৩ সালের ১১ আগস্ট ছিল ১২৮ টাকা। অবশ্য মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে সেটি কিছুটা বেড়ে যায়। গতকাল বেনাপোল-পেট্রাপোলে ১০০ টাকায় পাওয়া যায় ৮২ দশমিক ৫০ রুপি। তার মানে ১০০ রুপি কিনতে লাগছে ১২১ টাকা।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমবায় সমিতি সহসভাপতি আমিনুল হক প্রথম আলো বলেন, ‘ভারত থেকে আমরা কেনাকাটা করি ডলারে। ফলে রুপির ওঠানামার কারণে খুব একটা প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না। তবে যাঁরা বেড়াতে যান, কাঁচা টাকা ভাঙান তাঁরা লাভবান হবেন।’
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের চাহিদা ও সরবরাহ ওঠানামার কারণেই মূলত রুপি ও টাকার মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। তাই দুই দেশের মধ্যকার আমদানি-রপ্তানি ডলারে হলেও রুপির দরপতন যদি অব্যাহত থাকে ও দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে দুই ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।
সিপিডির এই গবেষক বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে রুপির দরপতন থাকলে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানিতে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন না। তবে আমদানিকারকেরা এ অবস্থায় সুবিধা পাবেন। কারণ আগের চেয়ে কম অর্থ দিতে হবে। অন্যদিকে ভারত থেকে যাঁরা চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সেবা আমদানি করবেন তাঁরা সুবিধা পাবেন।
আন্তর্জাতিক আর্থিক সম্পর্ক নিয়ে কাজ করা দিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকরিয়েরের গবেষক অর্পিতা মুখার্জি বিবিসিকে বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্যটা ডলারে হয় বলেই রুপির পতনের প্রভাবটা সীমিত হবে। তবে রুপির দাম কমায় রপ্তানিকারক হিসেবে ভারতের ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে। কিন্তু চট করে সেটার সুফল বোঝা যাবে না। কারণ এই ধরনের আমদানি-রপ্তানির পরিকল্পনাটা হয় অনেক আগে থেকেই। পণ্য ডেলিভারির ছয় মাস আগেই হয়তো দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি হয়ে যায়।
অবশ্য শুধু রুপির দরপতনে খুব একটা সুফল নাও পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন পেট্রাপোল স্থলবন্দরের কাস্টমস এজেন্ট পঙ্কজ রায়। তিনি বলেন, ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সাময়িক লাভ হতে পারে। তবে আসল সমস্যা অন্য জায়গায়। পঙ্কজ রায় বলেন, পেট্রাপোল-বেনাপোল স্থলবন্দরে একটি মালবাহী ট্রাক যখন পণ্য খালাস করতে না পেরে দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তখন প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার টাকা গচ্চা যায়।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন যশোর প্রতিনিধি]