Dr Khondaker Golam Moazzem on ways to enhance export earnings

Published in Prothom Alo on Friday, 11 July 2014.

দেশের অর্থনীতির নতুন মাইলফলক
তিন হাজার কোটি ডলার ছাড়াল রপ্তানি–আয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

Prothom-Alo,-Page-15,-July-11,-2014-feat

গত বছরের শেষ ছয় মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্যাহত হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। তাতে দেশের উদ্যোক্তারা দমে যাননি। হরতাল, অবরোধ ও আতঙ্কের মধ্যেও উৎপাদন সচল রেখেছেন।এমনকি সময়মতো ক্রেতাদের কাছে পণ্য পৌঁছে দিয়েছেন।তাই রপ্তানি-আয়ে শেষ পর্যন্ত ইতিবাচক ধারাতেই আছে বাংলাদেশ।ছাড়িয়ে গেছে তিন হাজার কোটি ডলারের মাইলফলক।

সদ্য বিদায়ী ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রপ্তানি-আয় হয়েছে তিন হাজার ১৭ কোটি মার্কিন ডলার।দেশীয় মুদ্রায় যা দুই লাখ ৪১ হাজার ৩৬০ কোটি টাকার সমান। এই আয় গত ২০১২-১৩ অর্থবছরের দুই হাজার ৭০২ কোটি ডলারের চেয়ে ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি, তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক শতাংশ কম।

এদিকে তাজ​রীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা ধসের পর দেশের পোশাকশিল্প নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনা-সমালোচনায় এ খাতের রপ্তানি কমে যাওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন পোশাক কারখানার মালিকেরা। সেই আশঙ্কা সত্যি হয়নি। সবচেয়ে বড় রপ্তানি-আয়ের এই খাত থেকে গত অর্থবছর এসেছে দুই হাজার ৪৪৯ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এই আয় মোট পণ্য রপ্তানি-আয়ের ৮১ দশমিক ১৭ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে নিট পোশাকে এক হাজার ২০৪ এবং ওভেন পোশাকে এক হাজার ২৪৪ কোটি ডলার রপ্তানি-আয় হয়েছে।

রপ্তানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছরটি সত্যিই কঠিন একটি বছর ছিল। তবে উদ্যোক্তাদের সাহসী ভূমিকা, শ্রমজীবী মানুষের পরিশ্রম আর সরকারের নীতি সহায়তার কারণে রপ্তানি-আয়ে সাফল্য অব্যাহত আছে।’ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল বৃহস্পতিবার পণ্য রপ্তানি-আয়ের এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, পোশাক ছাড়াও হিমায়িত খাদ্য, কৃষিজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল খাতের রপ্তানি-আয় ভালো হওয়ায় সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ধারায় আছে। তবে পাট ও পাটজাত পণ্যে বরাবরের মতো ঋণাত্মক বৃদ্ধি রয়ে গেছে। এ খাতে ৮২ কোটি ডলার আয় হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৯ এবং গত অর্থবছরের চেয়ে ২০ শতাংশ কম।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছর হিমায়িত খাদ্যে ৬৩ কোটি ৮১ লাখ, কৃষিজাত পণ্যে সাড়ে ৬১ কোটি, চামড়ায় ৫০ কোটি, চামড়াজাত পণ্যে ২৪ কোটি, হোম টেক্সটাইলে ৭৯ কোটি, পাদুকায় ৫৫ কোটি, প্রকৌশল পণ্যে ৩৬ কোটি ৬৬ লাখ, কম্পিউটার সেবায় (জুলাই-মে) ১১ কোটি, প্লাস্টিকে ৮ কোটি ৫৭ লাখ, আসবাবে চার কোটি ২৫ লাখ, টেরিটাওয়েলে ছয় কোটি ৭১ লাখ ডলার রপ্তানি-আয় হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে চামড়াজাত পণ্যে, ৪৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

এদিকে শুধু গত জুন মাসে ২৮০ কোটি ডলার রপ্তানি-আয় হয়েছে। এই আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের ২৭০ কোটি ডলারের চেয়ে ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি। গত জুনে ২৭২ কোটি ডলার আয় হয়।

রপ্তানি-আয় কীভাবে আরও বৃদ্ধি করা যায়, জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বেশি মূল্য সংযোজন হয় এবং বেশি মূল্য পাওয়া যায় এমন পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে। সে ক্ষেত্রে পোশাকশিল্পের মতো তথ্যপ্রযুক্তি, পাট, চামড়া, জাহাজসহ অন্য সম্ভাবনাময় খাতে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ বিষয়ে সরকার কী করছে জানতে চাইলে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশীষ বসু বলেন, ‘রপ্তানিজাত পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়াতে আমরা আগর, পাঁপড়, রাবারসহ বিভিন্ন পণ্যের উন্নয়নে কাজ করছি। এ ছাড়া হোম টেক্সটাইল, পাট, পাদুকাসহ যেসব পণ্যের রপ্তানি কমছে, সেসব খাতের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা চলছে। এ ক্ষেত্রে চামড়াজাত পণ্যে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বাড়াই বড় প্রমাণ।