দেরিতে হলেও বিজিএমইএ পথনকশার কাজটি শেষ করেছে। সাধারণত পথনকশায় লক্ষ্যগুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে। সেসব বাস্তবায়নের দায়িত্ব কার ও এর সময়কাল উল্লেখ থাকতে হয়। এসব ক্ষেত্রে কিছুটা অসম্পূর্ণতা আছে।’
Published in Prothom Alo on Tuesday, 22 September 2015.
পাঁচ হাজার কোটি ডলার রপ্তানির পথনকশা চূড়ান্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক
তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয় পাঁচ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে নিয়ে যেতে পথনকশা বা রোডম্যাপ চূড়ান্ত করেছে বিজিএমইএ। পথনকশায় অবকাঠামো নির্মাণ, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ, সংস্কারকাজ সম্পন্ন, শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ, নতুন বাজার অনুসন্ধান ও পোশাকের ন্যায্যমূল্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
গত ডিসেম্বরে আয়োজিত ঢাকা অ্যাপারেল সামিটে বিজিএমইএ ২০২১ সালে পোশাক রপ্তানি পাঁচ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। একই সঙ্গে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সামিটে অংশ নেওয়া দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞ, ক্রেতা প্রতিনিধি ও উদ্যোক্তাদের পরামর্শ-অভিমত উঠে আসে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে অস্ট্রেলিয়ার আরএমআইটি ইউনিভার্সিটির ২১ জনের একটি দল পথনকশাটি তৈরি করেছে। গত আগস্টে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ অ্যাপারেল অ্যান্ড সেফটি এক্সপোতে পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রাটি নিয়ে আলোচনা হয়। সেসবও এই পথনকশায় যুক্ত করা হয়।
বিজিএমইএ জানায়, ১৫৮ পৃষ্ঠার এই পথনকশার দুই-তৃতীয়াংশ জুড়েই হচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুই অনুষ্ঠানে উঠে আসা বিভিন্ন বক্তব্য ও সুপারিশ। বাকিটা পাঁচ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছানোর পথনকশা। এতে তিনটি অগ্রাধিকার উল্লেখ করা হয়। তিনটির আবার ১৬টি উপবিভাগ আছে। আর তাতে মোট ৩৩টি সুপারিশ রয়েছে।
প্রথম অগ্রাধিকারে সড়ক ও রেল যোগাযোগ উন্নত করার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণসহ অন্য বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ও যেসব খাতের সম্ভাবনা আছে, সেখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস দেওয়ার বিষয়ে সরকারকে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে পথনকশায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, শ্রমিকদের নিরাপত্তা, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো, চলমান সংস্কারকাজ শেষ করা, দক্ষ শ্রমিক ও প্রকৌশলী তৈরিতে শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ, কার্বন নিঃসরণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে পথনকশায়।
দ্বিতীয় অগ্রাধিকারে নতুন বাজার অনুসন্ধান, গবেষণা ও নতুনত্ব, পশ্চাৎমুখী ও অগ্রবর্তী শিল্পের উন্নয়ন, টেকসই উন্নয়নের জন্য সবুজ ও সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ব্যবহার ও বর্জ্য পরিশোধনাগার ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হবে। আর তৃতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে পথনকশায় ক্রেতাদের কাছ থেকে পোশাকের ন্যায্যমূল্য আদায়, ব্র্যান্ডিং, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদের হার, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আইনশৃঙ্খলা, পোশাক খাতের সব পক্ষকে নিয়ে বৈশ্বিক একটি প্ল্যাটফর্ম এবং পোশাকশিল্পের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। আজ বিকেলে বিজিএমইএর কার্যালয়ে বার্ষিক সাধারণ সভা শেষে নতুন কমিটি দায়িত্ব নেবে। এ সময়ই পাঁচ হাজার কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি আয়ের পথনকশাটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে। প্রকাশের পাশাপাশি পথনকশা বাস্তবায়নের জন্য আজই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেবে বিজিএমইএ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা পোশাক রপ্তানিতে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয় করতে চাই। সে জন্যই এই পথনকশাটি তৈরি করা হয়েছে। সেটি কাল (আজ) নতুন কমিটির কাছে আমরা তুলে দেব। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রীর কাছে পাঠাব।’
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘দেরিতে হলেও বিজিএমইএ পথনকশার কাজটি শেষ করেছে। সাধারণত পথনকশায় লক্ষ্যগুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে। সেসব বাস্তবায়নের দায়িত্ব কার ও এর সময়কাল উল্লেখ থাকতে হয়। এসব ক্ষেত্রে কিছুটা অসম্পূর্ণতা আছে।’
এ ব্যাপারে বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা পথনকশাটি একটি মলাটের মধ্যে নিয়ে এসেছি। এবার সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হবে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করে অগ্রাধিকার ও সময়-তারিখ চূড়ান্ত করে এসব বাস্তবায়ন করা। অবশ্যই সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়ন ত্বরিত গতিতে করতে হবে।’