Dr Khondaker Golam Moazzem on export earning

Published in Bonik Barta on Monday, 17 August 2015.

অর্থবছরের প্রথম মাস
ইউরোপ আমেরিকা এশিয়া থেকে রফতানি আয় কমেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম মাসে রফতানি আয় কমেছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল এ তথ্য প্রকাশ করে। সংস্থাটির দেশ ও অঞ্চলভিত্তিক হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো থেকে আয় কমে যাওয়ার প্রভাবে জুলাইয়ে সামগ্রিক রফতানি প্রবৃদ্ধি কমেছে। গেল মাসে ইউরোপ, আমেরিকার মতো গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলসহ এশিয়ার উদীয়মান বাজার থেকেও কমেছে রফতানি আয়।

জুলাইয়ে রফতানি খাত থেকে মোট আয় হয়েছে ২৬২ কোটি ৫৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার। গত অর্থবছরের জুলাইয়ে আয়ের পরিমাণ ছিল ২৯৮ কোটি ২৭ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এ হিসাবে জুলাইয়ে রফতানি আয় কমেছে ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। ২০০৯-১০ থেকে ২০১৪-১৫ পর্যন্ত জুলাইয়ের রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৬ দশমিক ৮ (ঋণাত্মক), ২৬ দশমিক ৪৯, ২৮ দশমিক ৭০, ৪ দশমিক ২৬, ২৩ দশমিক ৯৯ এবং ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ (ঋণাত্মক)। এ হিসাবে গত ছয় অর্থবছর শেষে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসের রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধিই সবচেয়ে বেশি দুর্বল।

ইপিবির অঞ্চল ও দেশভিত্তিক রফতানি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আমেরিকা অঞ্চল থেকে রফতানি আয় কমেছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে এ অঞ্চল থেকে আয় হয়েছে ৬৩ কোটি ৭৮ লাখ ১৯ হাজার ৩৮৮ দশমিক ২২ ডলার। গত অর্থবছরের জুলাইয়ে আয় ছিল ৬৫ কোটি ৯২ লাখ ৬০ হাজার ৫৩০ দশমিক ৭১ ডলার। আমেরিকা অঞ্চলের যে দেশগুলো থেকে রফতানি আয় কমেছে, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ব্রাজিল।

ইউরোপীয় অঞ্চল থেকে চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে রফতানি আয় কমেছে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ। গত জুলাইয়ে এ অঞ্চল থেকে আয় হয়েছে ১৪৪ কোটি ৯৫ লাখ ১১ হাজার ৯৭১ দশমিক ৭৩ ডলার। গত অর্থবছরের জুলাইয়ে আয় হয়েছিল ১৭৩ কোটি ১৯ লাখ ৫০ হাজার ২০৯ দশমিক ৫৬ ডলার। ইউরোপীয় অঞ্চলের যে দেশগুলো থেকে রফতানি আয় কমেছে, তার মধ্যে আছে বেলজিয়াম, জার্মানি, ডেনমার্ক, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি ও নেদারল্যান্ডস। এদিকে এশিয়া অঞ্চল থেকেও রফতানি আয় কমেছে। চলতি জুলাইয়ে এশিয়া থেকে রফতানি আয় হয়েছে ২৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫৭ হাজার ৭৬২ দশমিক ৮৩ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে আয় ছিল ৩০ কোটি ৫৪ লাখ ৭৩ হাজার ৩৯ দশমিক ৫১ ডলার।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘জুলাইয়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হতাশাব্যঞ্জক। বেশ কয়েক মাস ধরে রফতানি আয় ওঠানামার মধ্যে আছে। এর জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ দুই প্রেক্ষাপটই দায়ী। তবে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির প্রভাব তুলনামূলক কম।’ তিনি বলেন, আমাদের মূল রফতানি বাজারের কর্মসংস্থান ও চাহিদা ওঠানামার প্রভাব যেমন আছে, তেমনি উদীয়মান বাজারগুলোরও চাহিদার অবস্থা আশানুরূপ নয়। আর মুদ্রা বিনিময় হারের কারণে বাংলাদেশের চেয়ে অন্যান্য দেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। তাই আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাসও আয় ঋণাত্মক হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

রফতানি খাতের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশের মোট রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশেরও বেশি আসে পোশাক শিল্পের নিট ও ওভেন খাত থেকে। চলতি অর্থবছরে দুই খাত থেকেই আয় কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক রফতানি আয়ে। চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে নিট পোশাক রফতানি আয় কমেছে ১৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। ওভেন পোশাক রফতানি আয় কমেছে ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ যেসব পণ্যের রফতানি আয় কমেছে, সেগুলোর মধ্যে আছে হিমায়িত খাদ্য ও মাছ, কৃষিপণ্য ও পাটজাত সুতা।

রফতানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘জুলাইয়ের আয়ের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হলেও দীর্ঘমেয়াদে দুশ্চিন্তা করার মতো কিছু নেই। ডলারের বিপরীতে টাকার মান শক্তিশালী হওয়াটাই আয়ের বর্তমান পরিস্থিতির মূল কারণ। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, নতুন বাজারে রফতানি প্রণোদনা এবং মুদ্রার বিনিময় হারের প্রভাবমুক্ত থাকতে বিশেষ প্রণোদনা দীর্ঘমেয়াদে স্বস্তি নিয়ে আসতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’

২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ ৩ হাজার ১২০ কোটি ৯০ লাখ ডলার আয় করেছে, যা ২০১৩-১৪ অর্থবছরের চেয়ে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার।

 

Published in Prothom Alo

ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি দিয়ে অর্থবছর শুরু
অধিকাংশ পণ্যে রপ্তানি আয় কমেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরেও ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি দিয়েই যাত্রা শুরু হলো রপ্তানি খাতের। প্রথম মাস জুলাইয়ে তৈরি পোশাকসহ অধিকাংশ পণ্যেরই রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রা ও আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেশ কমেছে। এতে দেশের সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি বড় হোঁচট খেয়েছে।

আলোচ্য মাসে পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে ২৬২ কোটি ৫৯ লাখ মার্কিন ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যা প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার সমান। এই আয় এবারের ৩১১ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুলাইয়ের ২৯৮ কোটি ২৭ লাখ ডলারের চেয়ে ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ কম। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল রোববার পণ্য রপ্তানির হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।

গত অর্থবছরের জুলাইয়ে রপ্তানিতে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়। এর আগের ২০১৩-১৪ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম মাসে প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ২৩ ও ৪ শতাংশ। তারও আগে ২০১১-১২ ও ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল যথাক্রমে ২৮ ও ২৬ শতাংশ। এসব তথ্য থেকে বলা যায়, গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে নড়বড়ে অবস্থার মধ্য দিয়ে রপ্তানি শুরু হলো।

চলতি অর্থবছরের জন্য সরকার ৩ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। সর্বশেষ অর্থবছর রপ্তানি আয় হয়েছিল ৩ হাজার ১২০ কোটি ডলার।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুলাইয়ের রপ্তানি আয়ের চিত্রটি হতাশাজনক। ৭৪ শতাংশ পণ্যেই ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত অর্থবছর সামগ্রিকভাবে ৫৭ শতাংশ পণ্যে ছিল ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি। ফলে নেতিবাচক প্রবণতাটি ধারাবাহিকভাবেই চলছে।’

দীর্ঘদিন ধরেই দেশের পণ্য রপ্তানি আয়ের বড় অংশই বা গড়ে ৮০ শতাংশের ওপর আসছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে এই খাতে রপ্তানি আয় হয়েছে ২২১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। তার মানে মোট আয়ের ৮৪ শতাংশই পোশাক খাতের অবদান। তবে জুলাইয়ে পোশাক খাতের রপ্তানি আয় আলোচ্য সময়ের ২৫৪ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং গত অর্থবছরের একই সময়ের ২৫১ কোটি ডলারের তুলনায় ১১ দশমিক ৯৫ শতাংশ কম।

এ বিষয়ে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোশাক রপ্তানির যে পরিসংখ্যান এখন পাওয়া যাচ্ছে, সেটির ক্রয়াদেশ এসেছিল মার্চ ও এপ্রিলে। তখনো দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার রেশ ছিল। ফলে অনেক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানই কার্যাদেশ দিতে বাংলাদেশে আসেনি। তা ছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হওয়া ও অন্যান্য মুদ্রার অবমূল্যায়ন রপ্তানি আয় কমার বড় কারণ।’ তিনি বলেন, ‘ক্রয়াদেশ আসছে। অক্টোবর থেকে পরিস্থিতির উন্নতি দেখা যাবে।’

এদিকে পোশাক খাতের মতোই আলোচ্য সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, মাছসহ হিমায়িত খাদ্য, কৃষিজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, টেরিটাওয়েল, বাইসাইকেল ইত্যাদি পণ্যে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

এবারের জুলাইয়ে ৯ কোটি ৪৬ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় ১১ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ শতাংশ এবং গত অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে ১৩ দশমিক ২৯ শতাংশ কম। পাট ও পাটজাত পণ্যে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলার; যা ৯ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৭ শতাংশ এবং আগের বছরের একই সময়ের ৬ কোটি ডলারের তুলনায় ৯ শতাংশ কম।

আলোচ্য সময়ে প্রকৌশল পণ্যে সাড়ে ৪ কোটি, কৃষিজাত পণ্যে ৪ কোটি, মাছসহ হিমায়িত খাদ্যে ৩ কোটি ৭৮ লাখ, হোম টেক্সটাইলে ৪ কোটি ৮৬ লাখ, প্লাস্টিক পণ্যে ৭৩ লাখ, বাইসাইকেলে ৫৪ লাখ ও টেরিটাওয়েলে ৩৪ লাখ ডলার আয় হয়েছে। এর মধ্যে প্রকৌশল পণ্যে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বাকি পণ্যেগুলোতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যগুলো প্রচলিত ও অপ্রচলিত—উভয় বাজারেই সমস্যার মুখে পড়ছে। তবে অভ্যন্তরীণ কারণের চেয়ে বহির্বিশ্বের কারণই বেশি প্রভাব ফেলছে। প্রচলিত ও উদীয়মান বাজারে ভোক্তা পর্যায়ের চাহিদার ওঠানামার সঙ্গে প্রবৃদ্ধির ওঠানামা সম্পৃক্ত। এ ছাড়া বিশ্ব আর্থিক বাজার এখন বিভিন্ন ধরনের সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষত গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রার বিনিময় হার ডলারের বিপরীতে ওঠানামা করছে।

রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে নিতে সিপিডির এই গবেষকের পরামর্শ হচ্ছে, ‘এ ক্ষেত্রে খুব বেশি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে মুদ্রা বিনিময় হারের ব্যবস্থাপনাটি সঠিকভাবে করতে পারে সরকার। ডলারের বিপরীতে টাকাকে প্রতিযোগিতা-সক্ষম করা যেতে পারে।’