ভারত থেকে রফতানি প্রবৃদ্ধি খুবই আশাব্যঞ্জক। কারণ বর্তমানে ভারতের সামগ্রিক আমদানির গতি শ্লথ। আবার রুপির বিপরীতে টাকার অবস্থানও শক্তিশালী।
Published in Bonik Barta on Saturday, 19 September 2015.
অর্থবছরের প্রথম দুই মাস
ভারত থেকে রফতানি আয় বেড়েছে ৩৯%
নিজস্ব প্রতিবেদক
চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ভারত থেকে বাংলাদেশের রফতানি আয় বেড়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এর পরিমাণ ৩৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই ও আগস্টে ভারত থেকে পণ্য রফতানি বাবদ বাংলাদেশের আয় হয়েছে ১০ কোটি ৭৫ লাখ ১ হাজার ৪৭১ দশমিক ২৬ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে আয়ের পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ৭৪ লাখ ৩ হাজার ৭৫১ দশমিক ৭৯ ডলার। এ হিসাবে চলতি অর্থবছরের দুই মাসে আয় বেড়েছে ৩৯ শতাংশ।
ভারতে বাংলাদেশ রফতানি করে এমন পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক শিল্পের ওভেন ও নিটওয়্যার, হোমটেক্সটাইল, কৃষিপণ্য, হিমায়িত খাদ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ফুটওয়্যার, কাঁচা পাট, পাটজাত পণ্য এবং বাইসাইকেল। অন্যদিকে বাংলাদেশ আমদানি করে এমন পণ্যের মধ্যে রয়েছে তুলা, সুতা, সেরিয়েল, যানবাহন, সবজি, প্লাস্টিক, লবণ, বৈদ্যুতিক পণ্য, দুগ্ধজাত পণ্য, ফল, কাগজ ইত্যাদি।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের মোট বাণিজ্য ৬ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। তবে আমদানির তুলনায় রফতানি আয় কম হওয়ায় বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি কমিয়ে আনতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোই একমাত্র পথ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আর বর্তমানে রফতানি আয় বৃদ্ধি বাণিজ্য বাড়ার প্রতিফলন বলে মত প্রকাশ করেন ব্যবসায়ী ও ইপিবি সংশ্লিষ্টরা।
ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশীষ বসু বণিক বার্তাকে বলেন, ভারতের বাজারে বাংলাদেশের যেসব পণ্য যেত, তার তুলনায় এখন অনেক বেশি পণ্য রফতানি হচ্ছে। অর্থাত্ দেশটিতে বাংলাদেশের পণ্য আগের চেয়ে অনেক বহুমুখী। এছাড়া অশুল্ক বাধাও আগের তুলনায় কমেছে। ভারতে যেসব প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়, সেগুলোর মাধ্যমে ইপিবির পক্ষ থেকে পণ্য পরিচিতি ছড়িয়ে দেয়াও সফল হয়েছে। সব মিলিয়েই ভারত থেকে বাংলাদেশের রফতানি আয়ে ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত থেকে রফতানি আয় বৃদ্ধি অবশ্যই ইতিবাচক। তবে বাণিজ্যিক সম্পর্কের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল। কারণ বাংলাদেশ ভারত থেকে যেসব পণ্য আমদানি করে, তার বেশির ভাগই শিল্পের কাঁচামাল। আর উত্পাদন সক্ষমতা না থাকায় মূল্য ওঠানামায় আমদানি কমানোর সুযোগ থাকে না। অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশ থেকে যেসব পণ্য আমদানি করে, তা মৌলিক চাহিদার মধ্যে না থাকায় খরচ বেশি পড়লে চাইলেই তারা আমদানি কমিয়ে দিতে পারে। আবার গত অর্থবছর থেকেই ভারতের রুপির বিপরীতে বাংলাদেশের টাকা শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। সেদিক থেকেও রফতানি প্রবৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকলে তা অবশ্যই উত্সাহব্যঞ্জক।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ভারত থেকে রফতানি প্রবৃদ্ধি খুবই আশাব্যঞ্জক। কারণ বর্তমানে ভারতের সামগ্রিক আমদানির গতি শ্লথ। আবার রুপির বিপরীতে টাকার অবস্থানও শক্তিশালী। যদি এ ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে অবশ্যই দেশটির আমদানিকারকদের মধ্যে বাংলাদেশের পণ্যের চাহিদা বেড়েছে আর অশুল্ক বাধাগুলো কমেছে, এমন ধারণার বাস্তবায়ন আরো স্পষ্ট হবে।
সূত্র অনুযায়ী, ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলসহ আরো কিছু এলাকায় বাংলাদেশের কৃষিজাত খাদ্য পণ্য, কসমেটিকস ও প্লাস্টিকের পানির ট্যাংকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের এসব পণ্যের উত্পাদক খুবই সীমিত। যেমন: কৃষিজাত খাদ্যপণ্যের মূল উত্পাদক রফতানিকারক প্রাণ, কসমেটিকস রফতানি করে কেয়া এবং প্লাস্টিকের পানির ট্যাংক রফতানি করে গাজী। সীমিত উত্পাদক ও রফতানিকারক থাকায় ভারতের বাজারে এ পণ্যগুলোর প্রসার ঘটানো সম্ভব হচ্ছে না।
শুভাশীষ বসু বলেন, ভারতের গুয়াহাটি, শিলচরসহ বেশকিছু স্থানে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে বাংলাদেশের বেশ কিছু পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদা পূরণে রফতানিকারকরা ক্রমেই আরো উদ্যোগী হয়ে উঠছেন।
রফতানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুস সালাম মূর্শেদী বলেন, ভারতে তৈরি পোশাকের চাহিদা অনেক বেশি। সে অনুযায়ী পণ্য উত্পাদন করতে পারলে রফতানি আয় আরো বেড়ে যেত।