Published in Prothom Alo on Thursday, 5 February 2015.
পণ্য রপ্তানি আয় বেড়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব দেশের পণ্য রপ্তানি আয়ের ওপর এখনো পড়েনি। ফলে পণ্য রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আবারও ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ।
চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে অর্থাৎ জুলাই-জানুয়ারিতে দেশের পণ্য রপ্তানি আয় হয়েছে ১ হাজার ৭৭৮ কোটি মার্কিন ডলার। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের ১ হাজার ৭৪৪ কোটি ডলারের চেয়ে ২ শতাংশ বেশি। ছয় মাস শেষে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এ ছাড়া আলোচ্য সময়ের রপ্তানি আয় ১ হাজার ৮৫৭ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ কম। ছয় মাস শেষে এটি ছিল ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল বুধবার এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, শুধু জানুয়ারিতে ২৮৮ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় হয়েছে; যা এই মাসের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ শতাংশ কম, তবে আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি।
সামগ্রিক রপ্তানি আয়ের মধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকেই এসেছে ৮১ শতাংশের বেশি। কিন্তু পোশাকশিল্প মালিকেরা বলছেন, এক মাস ধরে চলা হরতাল-অবরোধে তাঁদের ৩০ শতাংশ ক্রয়াদেশ কমেছে। এ ছাড়া সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক না থাকায় অনেকেরই সময়মতো পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে না। এতে ক্রয়াদেশ বাতিল ও মূল্যছাড়ের মতো লোকসান গুনতে হচ্ছে মালিকদের।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, বর্তমান অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ৪৪৪ কোটি ডলার। এই আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি, তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ শতাংশ কম। আলোচ্য সময়ে নিট পোশাক থেকে ৭১৭ কোটি ডলার ও ওভেন পোশাক থেকে ৭২৬ কোটি ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, রপ্তানি আয়ের পরিসংখ্যান চার মাস আগের ক্রয়াদেশ থেকে এসেছে। তবে এখন ভরা মৌসুম হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ক্রেতারা দেশে আসছেন না। উদ্যোক্তাদের বিদেশে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করতে হচ্ছে। তার পরও ক্রেতারা কম ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন। বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে এপ্রিলের পর পোশাক খাতের রপ্তানি ঋণাত্মক হবে। এ বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
আলোচ্য সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে ৬৭ কোটি ডলার আয় হয়েছে। এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪ শতাংশ কম হলেও গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে পাট ও পাটজাত পণ্যে ৪৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলার, হিমায়িত খাদ্যে ৩৯ কোটি ডলার, কৃষিজাত পণ্যে ৩৬ কোটি ডলার, হোমটেক্সটাইলে ৪৫ কোটি ডলার, বাইসাইকেলে ৭ কোটি ডলার, প্লাস্টিকে ৬ কোটি ডলার ও প্রকৌশল পণ্য রপ্তানি করে ২৫ কোটি ডলার আয় হয়েছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, পোশাক খাতের রপ্তানি একটু বৃদ্ধি পাওয়ায় সামগ্রিকভাবে পণ্য রপ্তানি আয় ইতিবাচক হয়েছে। তবে মোট রপ্তানি পণ্যের ৪০ শতাংশেরই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
সিপিডির এই গবেষক বলেন, সম্প্রতি ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। এ জন্য বাকি মাসগুলোতে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি মাত্র ২ শতাংশ। আর যে হিসাবটি প্রকাশ পেয়েছে সেটি রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হওয়ার আগের। তাই পরিস্থিতি পরিবর্তন না হলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব হবে।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে নতুন নতুন পণ্য আসছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে এসব পণ্য প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারছে না। তিনি আরও বলেন, রপ্তানি আয় বাড়াতে পণ্য বাছাই করে দক্ষতা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন বাজারের শুল্কমুক্ত সুবিধা আদায়ে সরকারকে চেষ্টা করতে হবে। তবে সবার আগে রাজনৈতিক অস্থিরতার নিরসন করতে হবে।