বাংলাদেশের জিএসপি স্থগিতের প্রায় একই সময় থেকে ১২২টি দেশের এ সুবিধার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়। গত দু’বছর এসব দেশের পণ্য মার্কিন বাজারে জিএসপি সুবিধা পেত না। ফলে জিএসপি স্থগিত থাকার পরও বাংলাদেশকে তেমন কোনো প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হয়নি।
Published in Samakal on Sunday, 20 September 2015.
রফতানি কমেনি যুক্তরাষ্ট্রে
জিএসপি স্থগিতাদেশ কার্যকরের দু’বছর
আবু হেনা মুহিব
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা বা জিএসপি স্থগিতের আদেশ কার্যকরের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে গত ২ সেপ্টেম্বর। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে সার্বিকভাবে রফতানি আয় কমেনি বরং বেড়েছে। তবে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় ১২২টি দেশে জিএসপি দু’বছর কার্যকর না থাকার পর গত জুলাই থেকে আবার নবায়নের ফলে বাংলাদেশের রফতানি কমার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব অ্যাপারেল অ্যান্ড টেক্সটাইলের (ওটেক্সা) সর্বশেষ তথ্য মতে, গত জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের বস্ত্র ও পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৪ শতাংশ।
গত বছর জুলাইয়ে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, জিএসপি স্থগিত হওয়ার পর ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রথম বছরে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৫৪৯ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। পরের বছর ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সমাপ্ত আগস্ট পর্যন্ত পরবর্তী এক বছরে রফতানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯৪ কোটি ৩৯ লাখ ডলারে। জিএসপি কার্যকর থাকা অবস্থায় আলোচ্য সময়ে (সেপ্টেম্বর ২০১২-আগস্ট ২০১৩) যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির পরিমাণ ছিল ৫৫০ কোটি ডলার। অর্থাৎ জিএসপি স্থগিতের ফলে রফতানিতে কোনো প্রভাব পড়েনি।
রানা প্লাজা ধস ও তাজরীন ফ্যাশনে অগি্ন-দুর্ঘটনায় বহু শ্রমিকের প্রাণহানিতে আন্তর্জাতিক মানের শ্রম পরিবেশ না থাকার অভিযোগে ২০১৩ সালের ২৭ জুন বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা স্থগিতের ঘোষণা দেয় ওবামা প্রশাসন। ২ জুলাই মার্কিন প্রকাশনা-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান ফেডারেল রেজিস্টারের ওয়েবসাইটে এটি প্রকাশ করা হয়। এর ৬০ দিন পর অর্থাৎ ২ সেপ্টেম্বর থেকে জিএসপি স্থগিত কার্যকর হয়। তিন দফা শুনানির পরও বাংলাদেশের জিএসপি স্থগিতের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়নি। এ-সংক্রান্ত মার্কিন শ্রম প্রতিনিধির কার্যালয় ইউএসটিআরের বছরে দু’বার এ বিষয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনার কথা থাকলেও গত ডিসেম্বরের পর এখন পর্যন্ত আর কোনো শুনানি হয়নি। আগামী নভেম্বরে পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে চলতি মাসে পরিস্থিতি যাচাইয়ে ইউএসটিআরের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে।
জিএসপি স্থগিতের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানিতে কোনো ধরনের প্রভাব না পড়ার কারণ ব্যাখ্যায় জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সমকালকে বলেন, বাংলাদেশের জিএসপি স্থগিতের প্রায় একই সময় থেকে ১২২টি দেশের এ সুবিধার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়। গত দু’বছর এসব দেশের পণ্য মার্কিন বাজারে জিএসপি সুবিধা পেত না। ফলে জিএসপি স্থগিত থাকার পরও বাংলাদেশকে তেমন কোনো প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হয়নি। বরং একটা ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিযোগিতা ছিল। গত মাস থেকে জিএসপি নবায়ন সুবিধায় ওই ১২২টি দেশের পণ্য এখন বিনা শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যাচ্ছে।
সেখানে বাংলাদেশকে গুনতে হচ্ছে গড়ে ১৫ শতাংশ। ফলে জিএসপি স্থগিতের পর গত দু’বছরে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানিতে কোনো প্রভাব দেখা না গেলেও এখন তা স্পষ্ট হবে। তবে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় এখন আর শুল্কমুক্ত সুবিধা মুখ্য নয়। পণ্যের গুণগত মান এবং দর প্রতিযোগিতা করেই টিকে থাকতে হবে।
প্লাস্টিক সামগ্রী, সিরামিক, চা, ফার্নিচার, সবজি, তামাক জাতীয় পণ্য, খেলার সরঞ্জাম, রান্নাঘরের সামগ্রী, গলফ সামগ্রী ও চশমা, লবণ, পাথর, সিমেন্ট, জাহাজসহ রফতানি তালিকার ছোটখাটো আরও কিছু পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা পেত। তবে গত আগস্ট পর্যন্ত এসব পণ্যের রফতানি মোটামুটি আগের মতোই আছে। দেশের প্রধান রফতানিপণ্য তৈরি পোশাক কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধার আওতাভুক্ত নয়। গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ওটেক্সার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাইয়ে দেশটিতে বস্ত্র ও পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশের সামনে রয়েছে_ তুরস্ক, ভারত, ভিয়েতনাম ও চীন। আগের বছরের জুলাইয়ের ৫০ কোটি ৩১ লাখ ডলারের রফতানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ কোটি ৩৬ লাখ ডলারে।