Published by BBC Bangla on Wednesday, 24 June 2015.
বিদেশী বিনিয়োগ কমার কারণ সহিংসতা নাকি দুর্বল অবকাঠামো?
কাদির কল্লোল
বিবিসি বাংলা, ঢাকা
জাতিসংঘের বাণিজ্য বিষয়ক একটি সংস্থা আঙ্কটাড বলেছে, বাংলাদেশে গতবছর সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ চার দশমিক পাঁচ শতাংশ কমেছে।
বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ বোর্ডের সহায়তায় সংস্থাটি আজ ঢাকায় এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, বাংলাদেশে অবকাঠামো এবং জমি সঙ্কটসহ বেশ কিছু সমস্যার কারণে বিদেশী বিনিয়োগ কমছে।
সরকারের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ পুরোপুরি মানা না হলেও তারা বলছে, গত দু’বছরে বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি এবং রাজনৈতিক সহিংস পরিবেশ এজন্য অনেকাংশে দায়ী ।
আঙ্কটাড এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গতবছর প্রায় ১৫৩ কোটি ডলারের সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে।
তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ ছিল প্রায় ১৬০ কোটি ডলারের মতো।
বিদেশী বিনিয়োগ কমার ক্ষেত্রে গত দু’বছরে বিরোধী রাজনৈতিক জোটের কর্মসূচি অনেকাংশে দায়ী বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
তবে বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতি থাকলেও একতরফা সেই নির্বাচনের পর বছর জুড়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না এবং একটা স্থিতিশীল পরিবেশ ছিল।
ফলে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা থাকলেও এটিই মুল সমস্যা নয় বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
বিরোধীদের ডাকে টানা অবরোধের সময়কার চিত্র। সরকার বলছে রাজনৈতিক সহিংসতা বিনিয়োগ কমার একটি কারণ।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, অবকাঠামো, জমি সংকট, এবং গ্যাস, বিদ্যুৎ সহ মৌলিক বিষয়গুলোতেই সমস্যা রয়েছে বিদেশী বিনিয়োগ উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে।
সংসদে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় সংসদ সদস্যদের বক্তব্যেও বিনিয়োগ কমার বিষয়টি অগ্রাধিকার পাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ সংসদে বক্তৃতায় বিনিয়োগ বোর্ডকে ব্যর্থ হিসেবে অভিহিত করে এর সমালোচনা করেছেন।
একজন সংসদ সদস্যের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, বিএনপি এবং জামায়াতের কোন কারণ ছাড়া কর্মসূচি দেশের ভাবমূর্তির ওপরও প্রভাব ফেলেছে।
সেটাও বিদেশী বিনিয়োগকে অনেকাংশে নিরুৎসাহিত করেছে।
তবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, বিদেশী বিনিয়োগ কমার এই বিষয় নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন নয়।
কৃষিখাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশী বিনিয়োগ অনেক বেড়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন।
কিন্তু গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, অবকাঠামোসহ মৌলিক বিষয়গুলোতে একই ধরণের সমস্যার কারণে দেশী বিনিয়োগকারীরাও নতুন বিনিয়োগে উৎসাহিত হচ্ছে না।
এসব বক্তব্য মানতে রাজি নন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান।
তার বক্তব্য হচ্ছে, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সরবরাহসহ মৌলিক বিষয়গুলোতে অনেক উন্নতি হয়েছে।
এখন বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরির জন্য সরকার কাজ করছে বলেও তিনি দাবি করেছেন।