Published in Prothom Alo on Wednesday, 26 November 2014.
২০২১ সালে তৈরি পোশাক রপ্তানি ৫০ বিলিয়ন ডলার!
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বা ৫০ বছর উদ্যাপন হবে আগামী ২০২১ সালে। ওই বছরই দেশবাসীকে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ৫০ বিলিয়ন বা পাঁচ হাজার কোটি মার্কিন ডলার উপহার দিতে চায় পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে পোশাকশিল্পের চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত এবং এগিয়ে যাওয়ার কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করতে বিজিএমইএ প্রথমবারের মতো আয়োজন করছে ‘ঢাকা অ্যাপারেল সামিট’। ব্র্যান্ড ফোরামের সহযোগিতায় ৭-৯ ডিসেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
গত অর্থবছর তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয় ছিল দুই হাজার ৪৪৯ কোটি ডলার। পাঁচ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছতে হলে রপ্তানি আয় বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি করতে হবে। তবে বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলামের ভাষ্য, ‘এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব নয়। কারণ, ২০২১ সালে বিশ্বে পোশাকশিল্পের বাজার বেড়ে দাঁড়াবে ৬৫ হাজার কোটি ডলারে। বর্তমানে আছে ৪৫ হাজার কোটি ডলারের বাজার। এর মধ্যে বাংলাদেশের হিস্যা মাত্র ৫ শতাংশ। এটি ৮ শতাংশে নিয়ে যেতে পারলেই আমরা লক্ষ্য অর্জনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাব।’
বিজিএমইএ কার্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যাপারেল সামিটের বিষয়ে বিস্তারিত জানান আতিকুল ইসলাম। এই সামিটে বিভিন্ন বিষয়ে নয়টি আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে পাঁচটিতে থাকবেন পাঁচজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। একটিতে থাকবেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, পোশাকশিল্পের বিশেষজ্ঞ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক, শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিসহ দেড় শ জন বিদেশি অতিথি সামিটে অংশ নেবেন। এঁদের মধ্যে বক্তব্যে দেবেন ৭৫ জন।
গত অর্থবছর পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এই প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এমনিতেই রপ্তানি পাঁচ হাজার কোটি ডলার হয়ে যাওয়ার কথা। তাহলে এই সামিট আয়োজনের প্রয়োজন কেন—এক সাংবাদিক এমন প্রশ্ন করলে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘এমনি এমনি কিছু হয় না। সামিটে উঠে আসা সমস্ত পর্যবেক্ষণ, সুপারিশ ও কর্মপরিকল্পনা প্রতিবেদন আকারে সরকারের নীতিনির্ধারণীসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে দেওয়া হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিদেশি এই অতিথিদের একটি বড় অংশকে ১১টি হেলিকপ্টারে করে বিভিন্ন পোশাক কারখানায় নিয়ে যাওয়া হবে। শ্রমিক কর্মপরিবেশসহ তাঁদের সবকিছু ঘুরিয়ে দেখানো হবে। এ বিষয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তাঁদের দেখাতে
চাই, রানা প্লাজাই বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের প্রতীক নয়।’ পরে সামিট আয়োজনে কত টাকা ব্যয় হচ্ছে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম জানান, ১০-১২ কোটি টাকা খরচ হবে। তবে পুরো টাকাই দিচ্ছে স্পন্সররা।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, লক্ষ্য অর্জনে প্রতিবছর গড়ে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রয়োজন হবে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে একধরনের চাপ আছে। তবে প্রবৃদ্ধির এই উচ্চহার অর্জন অসম্ভব নয়। তবে এ ধরনের অর্জনের চেয়ে অন্য দিকে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মোয়াজ্জেম বলেন, আগামী সাত বছরে শ্রমিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। মজুরি বাড়বে। মালিকদের উচ্চ ব্যয় ও উচ্চ আয় এই কাঠামোর মধ্যে প্রবেশ করতে হবে। সে জন্য বর্তমানে কম মূল্যের পণ্যের চেয়ে বেশি মূল্যের পণ্য তৈরি ও রপ্তানির দিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। এসবের জন্য কারখানাগুলোর পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে কি না, সেটাই বেশি জরুরি।
সামিটের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না জানতে চাইলে সিপিডির এই গবেষক বলেন, পোশাকশিল্পে একধরনের সংকট চলছে। রানা প্লাজা ধসের পর কারখানাগুলো সংস্কারকাজের মধ্যে আছে। এখন বায়ারদের যদি কারখানাগুলোর অগ্রগতি দেখানো যায়, তবে তা ইতিবাচক হবে। এ ছাড়া সেমিনার থেকে বিজিএমইএ যদি বিদেশিদের কাছ থেকে ভবিষ্যৎ কৌশল ও বার্তা নিতে পারে, তবে সেটি শিল্পের জন্য কার্যকর হতে পারে।
অ্যাপারেল সামিটের সময় সম্মেলন প্রাঙ্গণে তিন দিনব্যাপী ভবন ও অগ্নিনিরাপত্তাবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি এই প্রদর্শনীর আয়োজন করছে। এ ছাড়া মানসম্মত কারখানাগুলোর মধ্য থেকে সেরাদের সোশ্যাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট এক্সসেলন্স অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে ৯ ডিসেম্বর। ওই দিনই আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ) আন্তর্জাতিক পণ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশ নিয়ে সেমিনার করবে। তার আগের দিন পোশাকশ্রমিকদের নিয়ে গানের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান গর্ব-এর গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠিত হবে।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর চার সহসভাপতি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এইচএসবিসি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফ্রঁসওয়া দ্য ম্যারিকো, আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সরোয়ার, গ্রিন ডেল্টা ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা চৌধুরী প্রমুখ। এইচএসবিসি ব্যাংক অ্যাপারেল সামিটের মূল স্পন্সর। এ ছাড়া স্পন্সর হিসেবে আছে ২০টি প্রতিষ্ঠান।
প্রথমবারের মতো অ্যাপারেল সামিট আয়োজন করছে বিজিএমইএ। ৭-৯ ডিসেম্বর সামিট চলাকালে ভবন ও অগ্নিনিরাপত্তাবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী হবে
১২ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সামিটে অংশ নিতে ঢাকায় আসবেন বিশ্বের বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞরা
সামিটের নয়টি সেমিনারে পোশাকশিল্পের চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হবে