Published in Prothom Alo on Sunday, 8 June 2014.
বাজেটে শেয়ারবাজার
মুনাফায় কর, অসন্তুষ্ট বিনিয়োগকারীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ-কারীদের বার্ষিক অর্জিত মুনাফা ১০ লাখ টাকা হলে ৩ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। তার মানে, কোনো বিনিয়োগকারী বছরে ১০ লাখ টাকা মুনাফা করলে ৩০ হাজার টাকা সরকারের কোষাগারে কর হিসেবে দিতে হবে। আর অর্জিত মুনাফা যদি ২০ লাখ টাকা বা তার ওপরে হয় তবে এই কর হবে ৫ শতাংশ হারে।
আগামী ২০১৪-১৫ অর্থবছরের অর্থবিলে এই কর আরোপের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। তবে অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তব্যে বিষয়টি উল্লেখ করেননি। আর এই করারোপ নিয়ে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টরা অসন্তুষ্ট৷ এ নিয়ে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে৷
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) দাবি, বিনিয়োগকারীদের মুনাফার ওপর কর আরোপ করা হলে অনেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হবেন। অনেকের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হবে৷ এর একটা প্রভাব বাজারে পড়তে পারে। ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) স্বপন কুমার বালা বলেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কর আরোপ নিয়ে কিছুটা আতঙ্ক সৃষ্টি হতে পারে। যার প্রভাব বাজারে পড়তে পারে। এমনকি এই কর আদায়ে প্রক্রিয়াগত সমস্যা হবে৷
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ আবদুল মজিদ বলেন, ‘অর্থবিলে নতুন করে কয়েকটি ক্ষেত্রে কর আরোপ করা হয়েছে। এটা পুঁজিবাজারের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে। তাই বাজারে যাতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া না হয়, সে জন্য এসব সিদ্ধান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার।’
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান উর রশিদ চৌধুরী বলেন, ২০১০-১১ সালে পুঁজিবাজারে ভয়াবহ ধসের পর এখনো বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরেনি। অনেকে এখনো ক্ষতির বোঝা বইছেন। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের ওপর কর আরোপ করা ঠিক হবে না।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের শেয়ারবাজার ছিল কিছুটা মন্দায়৷ গত এক মাসে প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর প্রধান সূচক ১০০ পয়েন্ট কমে গেছে। লেনদেনও মন্দাভাব৷ গত ২৫ মে ডিএসইর লেনদেন ১৮২ কোটি টাকায় নেমে আসে।
যদিও প্রস্তাবিত বাজেটের কিছু বিষয়কে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে ডিএসই ও সিএসই। এর মধ্যে রয়েছে ডিমিউচ্যুয়ালাইজড পরবর্তী স্টক এক্সচেঞ্জকে ক্রমহ্রাসমান হারে পাঁচ বছরের জন্য কর অবকাশ সুবিধা ও বিনিয়োগকারীদের জন্য করমুক্ত লভ্যাংশের পরিমাণ ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকায় উন্নীত করা।
তবে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের দাবির সঙ্গে পুরোপুরি একমত নন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সব বিনিয়োগকারীর ওপর এই কর আরোপ করা হয়নি। কেবল যাঁরা বছরে ১০ লাখ টাকা বা তার বেশি মুনাফা করেন তাঁদের মুনাফার ওপর এই কর আরোপ করা হয়েছে। নীতিগতভাবে এটা ঠিক আছে। এটা করা উচিত। তা ছাড়া এ ক্ষেত্রে করের পরিমাণও খুব বেশি নয়।
তবে বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে এই কর আরোপ যৌক্তিক কি না, তা আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেন ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ২০১০ সালের পুঁজিবাজারে ভয়াবহ ধসের ঘটনা ঘটে। প্রায় তিন বছর ধরে এর রেশ চলতে থাকে। গত ছয় মাস ধরে বাজার কিছুটা স্বাভাবিক আচরণ করছে। বাজার স্বাভাবিক হতে আরও অন্তত এক বছর সময় লাগবে। তাই এমন মুহূর্তে বাজারকে অস্থির করে তোলে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়। বাজারে স্থিতিশীলতা এলে এটা করলে ভালো হতো।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ১০ লাখ টাকার ওপর অর্জিত মুনাফায় কর আরোপে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ওপর তেমন প্রভাব ফেলবে না। কেবল বড় বিনিয়োগকারীদের ওপর এটা বর্তাবে। বাজারে এর প্রভাব পড়বে কি না, জানতে চাইলে সিপিডির এই গবেষক বলেন, এতে বাজারে খুব বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া হবে না।
বাজেটের পর আজ রোববার প্রথম লেনদেন৷ আজই বোঝা যাবে বিনিয়োগকারীদের প্রতিক্রিয়া৷
সংবাদ সম্মেলন: গতকাল শনিবার দুপুরে মতিঝিলে ডিএসইর কার্যালয়ে বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন করে ডিএসই। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ডিএসইর চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান মিয়া বলেন, ‘বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য যা পেয়েছি এটাই শেষ নয়, অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আরও কিছু পাওয়ার চেষ্টা করব আমরা।’
প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ডিএসইর এমডি স্বপন কুমার বালা বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য কিছু সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে করারোপ করায় কিছু অসুবিধাও আছে। বাজেট প্রস্তাবে সন্তুষ্ট না হলেও পুঁজিবাজারের প্রতি সরকারের মনোযোগ রয়েছে বলে মনে করে ডিএসই।
সকালে সিএসইর পক্ষ থেকে বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, বাজেটে কিছু বিষয় পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক। আবার অর্থ বিলের কিছু বিষয় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই একদিকে বাজেটকে যেমন পুঁজিবাজারবান্ধব বলা যায়, তেমনি কিছু কারণে পুঁজিবাজারবান্ধব না-ও বলা যেতে পারে।