Published in Samakal on Monday, 21 July 2014.
বাংলাদেশি পণ্যেই বেশি শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রে
আমদানি পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি হারে শুল্ক আদায় করে বাংলাদেশি পণ্যের বেলায়
আবু হেনা মুহিব
আমদানি পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি হারে শুল্ক আদায় করে বাংলাদেশি পণ্যের বেলায়। আমদানি উৎস হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের স্থান ৪৫তম। তবে শীর্ষ ১৫ শুল্কদাতা দেশের তালিকায় প্রথমে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। বিশ্ব অর্থনীতির দ্বিতীয় প্রধান শক্তি চীনের পণ্য প্রবেশে যুক্তরাষ্ট্র যেখানে ৪ শতাংশ শুল্ক আদায় করে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেখানে আদায় করা হচ্ছে প্রায় ১৬ শতাংশ হারে। বাংলাদেশি পণ্যেই বেশি শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রে
বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডবি্লউটিও) সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে বিনা শুল্কে প্রবেশাধিকার পাওয়ার কথা। তবে এখনও ডবি্লউটিওর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেনি যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে কিছু পণ্যে যে জিএসপি ছিল, তা স্থগিত রয়েছে। জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির ক্ষেত্রে সব পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার কথা। বাংলাদেশকে সে সুযোগ তো দেওয়া হচ্ছেই না; বরং বিশ্বের ধনী দেশ থেকে যেখানে কম হারে শুল্ক আদায় করে সেখানে বাংলাদেশ থেকে বেশি হারে শুল্ক আদায়ের বিষয়টি কোনোভাবে যুক্তিতে আসে না।
তিনি বলেন, গত বছর শুল্কমুক্ত সুবিধা স্থগিতের আগে ৯৭ শতাংশ পণ্যে যে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা দিয়ে আসছিল, সেই তালিকায় দেশের প্রধান পণ্য তৈরি পোশাককে অন্তর্ভুক্ত না করা এক ধরনের চালাকি। তিনি জানান, ২০০৯ সালে এ সংক্রান্ত দুটি বিল উত্থাপিত হলেও তা অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে। শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা না দিলেও পোশাকের ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে শুল্ক হার কমিয়ে আনা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনের (ইউএসআইসিটি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে বেশি হারে শুল্ক দেওয়া শীর্ষ ১৫ দেশের মধ্যে প্রথমেই রয়েছে বাংলাদেশের নাম। বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে শুল্ক আদায় করা হয় ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ হারে। দ্বিতীয় শীর্ষ ভিয়েতনামের পণ্যে আদায় করা হয় ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তালিকায় চীনের স্থান পঞ্চম। শুল্ক আদায় করা হয় ৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ হারে। সূত্র অনুযায়ী, ভারত থেকে আদায় করা হয় ২ দশমিক ২৯ শতাংশ। জাপান থেকে আরও কম। মাত্র ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তালিকার পনেরতম দেশ ইউরোপের ধনী দেশ অস্ট্রিয়া থেকে শুল্ক আদায় করা হয় ১ দশমিক ২৮ শতাংশ হারে।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, এই হারে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৯১৩ কোটি রফতানি আয়ের বিপরীতে অস্ট্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে শুল্ক দিয়েছে মাত্র ১১ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। অস্ট্রিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। অথচ একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে মাত্র ৫৩০ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের রফতানি আয়ের বিপরীতে ৮২ কোটি ৮৪ লাখ ডলার শুল্ক আদায় করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সমকালকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা বা জিএসপির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে বৈষম্য করছে। দুনিয়ার অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশকে সব পণ্যে জিএসপি সুবিধা দিলেও বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। তিনি জানান, আমদানি-রফতানিতে শুল্কহার দেশ ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় না। এটা হয় পণ্যের ভিত্তিতে। সাধারণত ফিনিশড এবং ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে কাঁচামালের তুলনায় শুল্ক হার বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশ যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের পণ্যই রফতানি করে থাকে সে কারণে শেষ পর্যন্ত শুল্ক হারটা বেশি দাঁড়ায়।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ৫ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রফতানি প্রবৃদ্ধি প্রতি বছরই কমছে। নিট এবং ওভেন মিলে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এ খাতের মোট রফতানি আয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ ছিল ২৯ দশমিক ৯১ শতাংশ। গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ কমে ২৩ দশমিক ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। এ সময় আয় এসেছে ৪৯৯ কোটি ৬৫ লাখ ডলার।