Published in Kaler Kantho on Tuesday, 18 August 2015.
ভাবমূর্তি রক্ষায় জিএসপি ফিরে পেতে চান রপ্তানিকারকরা
এম সায়েম টিপু
আর্থিক মূল্য নয়, দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) ফিরে পাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারকরা। তাঁরা মনে করেন, জিএসপির আওতায় যেসব পণ্য রপ্তানি হতো আর্থিক মূল্যে তা খুব বেশি নয়। তবে জিএসপি ফিরে না পেলে যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রধান প্রধান রপ্তানি বাজারগুলোতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বা ইমেজ সংকট থেকে যাবে।
তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে জিএসপির আওতাভুক্ত পণ্যের রপ্তানি মূল্য ছিল দুই কোটি ৭০ লাখ ডলার। ২০১২ সালে ছিল তিন কোটি ৪৬ লাখ ডলার। ২০১৩ সালে এই রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় তিন কোটি ৭৮ লাখ ডলারে। যেখানে গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ তিন হাজার ১২০ কোটি ৯০ লাখ (৩১ দশমিক ২০ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে। জিএসপি সুবিধার আওতায় ছিল ২৪৩টি পণ্য, যা বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের মাত্র ১ শতাংশ। জিএসপি সুবিধা পাওয়া পণ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো প্লাস্টিক, সিরামিক, গল্ফ শ্যাফট ও কার্পেট। এ ছাড়া বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাক খাত জিএসপি সুবিধার আওতাভুক্ত নয়।
জিএসপি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সহসভাপতি শহীদ উল্লাহ আজিম কালের কণ্ঠকে বলেন, জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে না দিয়ে বাংলাদেশের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দেওয়া ১৬টি শর্তের বেশির ভাগই ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। অবশিষ্ট দুটিও চলমান। বাস্তবায়নাধীন শর্ত দুটি হলো শ্রমিক ইউনিয়নের ডাটাবেইস তৈরি এবং শ্রম আইনের বিধিমালা বাস্তবায়ন।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানিতে আর্থিক মূল্যে জিএসপিভুক্ত পণ্যের মাধ্যমে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ কম হলেও রপ্তানি বহুমুখীকরণে ভূমিকা রয়েছে। এ সুবিধা না থাকলে যেসব পণ্য স্বল্প পরিমাণে মার্কিন বাজারে রপ্তানি হয় এসব পণ্যের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এ জন্য জিএসপি ফিরে পেতে সরকারের ভূমিকা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ শ্রমিক অধিকার রক্ষা এবং কারখানার নিরাপত্তা ইস্যুতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। এ অবস্থায় জিএসপি ফিরে পাওয়ার প্রচেষ্টা অব্যহত রাখাই যুক্তিযুক্ত।
এদিকে ২০১৩ সালের এপ্রিলে সাভারের রানা প্লাজা ধসে এক হাজারেরও বেশি শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় বিশ্বব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। এ প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র সরকার জুন মাসে জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে। একই সঙ্গে পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তা রক্ষাসহ ১৬টি শর্ত দেওয়া হয়। আর স্থগিতাদেশ কার্যকর হয় একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। তবে অন্য কোনো দেশের ক্ষেত্রে এ ধরনের শর্ত দেওয়া হয়নি। জানা গেছে, চলতি বছরের ২৫ জুন বাণিজ্য সুবিধা সম্প্রসারণ অ্যাক্ট কংগ্রেসে পাস হয়। এর আওতায় শিগগিরই জিএসপিপ্রাপ্ত দেশগুলো এই বাণিজ্য সুবিধা পেতে শুরু করবে, যা ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও রাশিয়া ছাড়া জিএসপি সুবিধা পাওয়া ১২২টি দেশ প্রায় সবাই কমবেশি এ সুবিধা ভোগ করবে।